ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শারদীয় দুর্গোৎসব; মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষ শুরু
Published : Sunday, 25 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 25.09.2022 2:08:11 AM
শারদীয় দুর্গোৎসব; মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষ শুরুরণবীর ঘোষ কিংকর।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।
আজ রবিবার (২৫ সেপ্টম্বর) ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে মত্তলোকে আবাহন জানানো হবে। পিতৃপক্ষ শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষের। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হলো আজ। এদিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী এ বছর দেবী দুর্গার আগমন 'গজে'।
মূলত মহালয়ার তিথির সময়কাল হলো অমাবস্যা। এই দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে। তর্পন মন্ত্রে বলা হয়ে থাকে, ‘যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ।’ অর্থাৎ বন্ধু ছিলেন কিংবা বন্ধু নন অথবা জন্মজন্মান্তরে বন্ধু ছিলেন তাঁদের জলের প্রত্যাশা তৃপ্তিলাভ করুক। মহাভারতে এই দিনটিকে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘মহালয়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত উৎস মহৎ এবং আলয়। কিংবা মহত্ত্বের আলয়। এই মহালয় শব্দ থেকেই স্ত্রীবাচক পদ এসেছে- মহালয়া। মহালয় প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, যে ক্ষণে পরমাত্মায় অর্থাৎ পরব্রহ্মে লয় প্রাপ্তি ঘটে সেটিই হল মহালয়। কেন না, পরমাত্মাই হলো পরব্রহ্ম। আর নিরাকার ব্রহ্মের আশ্রয়ই হলো মহালয়। তবে শ্রী শ্রী চণ্ডিতে মহালয় হচ্ছে পূজো বা উৎসবের আলয়। অর্থাৎ দেবীপক্ষ বা দুর্গা পূজার শুরুর ক্ষণ। আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী তিথীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী পূজার সূচনা হবে। মা কৈলাশ ছেড়ে তাঁর সন্তানদের নিয়ে আসবেন পিতৃলোকে। অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা।
১ লা অক্টোবর মহাষষ্ঠি তিথিতে দেবী বন্ধনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু। ২ই অক্টোবর সপ্তমী তিথীতে দেবীর নবপত্রিকা স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্যদিয়ে হবে মহা সপ্তমী পূজা। এই নব পত্রিকাই ‘কলাবউ’ নামে পরিচিত। নবপত্রিকাকে সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে অধিষ্ঠিত করা হবে।
পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। কোনো পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না। শুধুমাত্র কোনো এক নারীশক্তির কাছেই তার পরাজয় নিশ্চিত। বর পেয়ে স্বর্গ দখল নেয় অসুর রাজা মহিষাসুর। অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে স্বর্গ-মর্ত-পাতাল। তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শক্তি দিয়ে ঘুম ভাঙানো হয় আদি শক্তি মহামায়ার। দেবতাদের অস্ত্রে সজ্জিত করা দেবীকে। বাহন সিংহে চেপে দেবী যান অসুর বধে। রম্ভাসুর, তারকাসুর একে একে বধ করেন সকলকে। মহিষাসুরকে বধের মধ্য দিয়ে ত্রীলোকের শান্তি ফিরিয়ে আনেন দেবী দুর্গা। দেবীর সেই মহিষাসুর বধের দৃশ্যই কল্পনা করে তখন থেকে মর্ত অর্থাৎ আমাদের মানবকূলে দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয়।