ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বাসচালকের ছদ্মবেশে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
Published : Saturday, 24 September, 2022 at 3:26 PM, Update: 24.09.2022 3:43:09 PM
বাসচালকের ছদ্মবেশে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতারভবন নির্মাণ কেন্দ্র করে ২০১২ সালে বাসুর ওপর আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করে আলকেস নামের এক ব্যক্তি। আক্রমণের এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে মাথায় লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাসু। এ ঘটনায় আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনকে আসামি করে রাজধানীর শাহ আলী থানায় হত্যা মামলা করেন বাসুর ভাই চিনু মিয়া।

গত ১২ বছর ধরে পলাতক থাকার পর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল সদর এলাকা থেকে শাহ আলী এলাকার চাঞ্চল্যকর এ বাসু হত্যা মামলার আসামি মো. আলকেসকে (৫২) গ্রেফতার করে র‍্যাব-৪।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

র‍্যাব জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে তিনি পেশা পরিবর্তন করতেন।

বরিশাল গিয়ে ট্রাক চালকের সহকারী ও পরে চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত হয়। এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানী নগর থানায় পরিবহন আইনে তার বিরুদ্ধে পুনরায় হত্যা মামলা হলে তিনি পালিয়ে কুয়াকাটায় মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন। তখন মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করতেন তিনি। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত গত দেড় বছর ধরে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন আলকেস।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার মো. আলকেস, মামলার বাদী চিনু মিয়া ও নিহত বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী চিনু মিয়া নিহত বাসু মিয়ার আপন ছোট ভাই। গ্রেফতার আলকেস রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন চটবাড়ী নবাবেরবাগ এলাকার ২০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য।

নিহত বাসু মিয়া ও বাদী চিনু মিয়ার চটবাড়ী এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈতৃক দখলীয় সম্পত্তি ছিল। জমিটি আজগর আলীর কাছে বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেওয়া ছিল। কিন্তু এক সময় আসামি আজগর আলী জাল দলিল করে নিজের নামে নিয়ে নেন এবং পরে অবৈধভাবে ২০১০ সালে সমিতির নামে হস্তান্তর করেন।

এতে করে ওই জমি মালিকানা নিয়ে মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়ার সঙ্গে ওই সমিতির বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিটির মূল মালিক চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া। সমিতির লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা অর্থাৎ এ মামলার আসামি আলকেসসহ অন্যান্য আসামি আজগর, গিয়াস উদ্দিন, সুানু মিয়া, জিন্নাত, রুমা, কদর আলীদের নেতৃত্বে ওই সমিতির নামে রাখা জমি জোরপূর্বক দখল করে জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে। তখন চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া আসামিদের সঙ্গে বিরোধে না জড়িয়ে সিভিল আদালতে মামলা করেন। প্রায় দুই বছর পর আদালত বাদী চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার পক্ষে রায় দেন।

মামলার বাদী এবং ভিকটিম আদালতের রায় পেয়ে ওই জমিতে ২০১২ সালের শুরুতে ভবন নির্মাণ শুরু করেন। ঘটনার দিন ২০১২ সালের ১৪ মে চিনু মিয়ার ভাই বাসু নবনির্মিত ভবনের ছাদে পানি দেওয়ার জন্য একজন কর্মচারী নিয়ে যান। তখন সমিতির সদস্যরা মামলার আসামি আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করেন।



আক্রমণের এক পর্যায়ে আলকেস তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে বাসুর মাথার বাম পাশে লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই চিনু মিয়া আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জন আসামির বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আলকেসসহ অধিকাংশ আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে আলকেস নিজেকে সম্পৃক্ত করে অন্যান্য আসামির নাম উল্লেখপূর্বক আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিরা চার মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিলেও আলকেস জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান এবং এ মামলায় আর কখনো হাজিরা দেননি।

ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরও বলেন, মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ১৩ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত একজনসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর আদালত পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিচারকার্য পরিচালনা করে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুসহ মোট ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় আলকেসের সঙ্গে আজাহার ও সানুর মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় আলকেস আজাহার ও সানু নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ দুই খুনের মূল আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস বলেও জানান ডিআইজি মোজাম্মেল ।

এ ঘটনায় আলকেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন এবং তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কদর আলী হাজতে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করে মারা যান। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত নসু, জিন্নাত, গিয়াস, সালেম উদ্দিন এবং রুমাসহ পাঁচজনকে খালাস দেন।

আলকেসের বিরুদ্ধে বাসু হত্যা মামলা হওয়ায় চার মাস জেল খেটে জামিন নিয়ে এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন। বাসু হত্যা মামলার আসামি আজাহার ও সানুর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় আলকেসের নেতৃত্বে সাভার থানা এলাকায় আজাহার ও সানুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। এ মামলায় তিনি সাভার থানায় পলাতক আসামি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সংরক্ষণ করার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় মামলা রুজু করে এবং এ মামলায় তিনি পলাতক আসামি।

এছাড়াও তিনি শাহ আলী থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার পলাতক আসামি। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১২ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে তিনি পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন।

প্রথমদিকে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা ও ডাকাতি করতেন। পরে বরিশাল গিয়ে ট্রাক চালকের সহকারী ও চালক হিসেবে কাজ করেন। বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত হন।

এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানী নগর থানায় পরিবহন আইনে তার বিরুদ্ধে পুনরায় হত্যা মামলা হলে তিনি পালিয়ে কুয়াকাটা মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন। মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করতেন বলে স্বীকার করেছেন।