ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
প্রোগ্রামিং: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ার
Published : Wednesday, 1 June, 2022 at 12:00 AM
প্রোগ্রামিং: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ারমোহাম্মদ কামরুল হাসান ||
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মানুষকে সর্বপ্রথম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর স্বপ্ন দেখান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের পর ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর লক্ষ্য অর্জনের পথে ছুটছি আমরা। আর ‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনে সফল হতে হলে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা উঠলেই আমাদের কানে বেজে ওঠে- প্রোগ্রামিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, থ্রিডি প্রিন্টিং, ব্লকচেইন, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি, ইন্টারনেট অফ থিংস এই শব্দগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, সংশ্লিষ্ট নীতিমালাসহ বিভিন্ন জাতীয় পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত শিক্ষা (ঝঞঊগ) তথাপি বেসিক প্রোগ্রামিং শেখার উপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় কৌশলপত্র-২০২০ ঘোষণা করেছে। এ কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে প্রোগ্রামিং এর জ্ঞান অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে সক্ষম।

প্রোগ্রামিং এর শুরুর কথা
কম্পিউটার মানুষের ভাষা বুঝতে পারে না। তাই কম্পিউটারকে নির্দেশ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ এর আবির্ভাব হয়েছে। এ ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজগুলো প্রতিটি ভাষার ব্যাকরণ এর মত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। কম্পিউটার যেভাবে বুঝবে ঠিক তেমন ভাবেই তাকে তার ভাষায় বোঝাতে হয়। কম্পিউটারের বোধগম্য বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। যেগুলোকে বলা হয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। একজন প্রোগ্রামার যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে কম্পিউটারকে নির্দেশ প্রদান করে, তাহলে কম্পিউটার উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করতে পারে।
কম্পিউটার আবিষ্কৃত হবার আগেই ১৮৩৩ সালে প্রথম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেস একটি অ্যালগরিদম তৈরি করেন যা মনে রাখার জন্য তিনি কাগজে লিখে রেখেছিলেন। এটিই প্রোগ্রামিং যুগের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে পাইথন, জাভা, এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি ল্যাঙ্গুয়েজ, সি++ ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হতে থাকে।
প্রোগ্রামিং কি?
সহজ কথায় বললে, কম্পিউটারকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া হলো প্রোগ্রামিং। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, যে কোন অটোমেটেড মেশিনকে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রোগ্রামিং। উদাহরণস্বরূপ, কম্পিউটার অন করলেই হাজার হাজার ইন্সট্রাকশন কাজ করা শুরু করে। আমরা কম্পিউটার অন করে মিউজিক শুনি; মিউজিক প্লেয়ার একটা প্রোগ্রাম যার মধ্যে রয়েছে অনেক গুলো ইন্সট্রাকশন। আমরা গেম খেলি; এক একটা গেম এক একটা প্রোগ্রাম। প্রতিটা গেম এ রয়েছে হাজার হাজার ইন্সট্রাকশন। আর এই ইন্সট্রাকশনগুলো লেখার কাজই প্রোগ্রামিং।
প্রোগ্রামার কারা?
যিনি কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নিদের্শমালা বা প্রোগ্রাম লিখেন তাকে প্রোগ্রামার বলা হয়। ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেসকে ইতিহাসের প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয়। লাভলেস এবং চার্লস ব্যাবেজ ১৮৮৩ সালে এনালাইটিক ইঞ্জিনে (একটি আদিম যান্ত্রিক কম্পিউটার) একসাথে কাজ করতে গিয়ে প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষাটি উদ্ভাবন করেন। লাভলেস মেশিন লার্নিং সহজ করার ক্ষেত্রে সংখ্যার গুরুত্ব (০ এবং ১) উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলতে কী বোঝায়?
কম্পিউটার ইন্সট্রাকশন বা নির্দেশনাগুলো কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে লিখতে হয়। যে নিয়মগুলো মেনে প্রোগ্রাম লিখতে হয়, তা হচ্ছে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এগুলো অনেকটা আমাদের নিজেদের ল্যাঙ্গুয়েজ এর মতই। আমরা ‘অ’, ‘আ’ দিয়ে ইচ্ছে মত কিছু বসিয়ে কোন শব্দ বলি না। কিছু নিয়ম মেনে বলি। তেমনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এরও সুনির্দিষ্ট গ্রামার রয়েছে। এ গ্রামারগুলো দেওয়া থাকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে। আর ঐ ল্যাঙ্গুয়েজে দেওয়া নিয়ম গুলো মেনেই আমাদের প্রোগ্রাম লিখতে হয়।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে মানুষের যোগাযোগের একটি পথ সৃষ্টি হয়। এতে করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন রকম কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয়। এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠেছে। সেলফোন থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ওয়েব ব্রাউজার, ওয়েবসাইট সবকিছুই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে পরিচাকিত হচ্ছে। বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো হল- পাইথন, জাভা, রুবি, এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি ল্যাঙ্গুয়েজ, সি++, সি, পিএইচপি, এসকিউএল, এবং সুইফট।

কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ এর কাজ কি?

কম্পিউটারকে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার জন্য যে নিয়ম মানা হয়, তা হচ্ছে কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ। কম্পিউটার আমাদের কথা বুঝতে পারে না। কম্পিউটার শুধু ০ এবং ১ - এই দুইটি সংখ্যা চেনে। অন্যদিকে আমাদের জন্য কেবলমাত্র ০ এবং ১ ব্যবহার করে কিছু প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আমাদের ইন্সট্রাকশনগুলোকে কম্পিউটার এর বোঝার উপযোগী করে ০ এবং ১ এ পরিণত করে দেয়।

দৈনন্দিন জীবনে প্রোগ্রামিং

প্রোগ্রামিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাচ্চারা ছোটবেলায় ভিডিও গেম খেলে; সেখানে প্রোগ্রামিং ব্যবহার করা হয়। ছোট ছোট গেমগুলো লেখার জন্য ভিডিও গেমকে ইন্সট্রাকশন দিতে হয়। ঐ ইন্সট্রাকশনগুলোই হলো প্রোগ্রামিং। আমরা এখন কম্পিউটারে গেম খেলি। ভিডিও গেম থেকে অনেক উন্নত। আরো বেশি ইন্সট্রাকশন; প্রোগ্রামিং। আমরা টিভি দেখি। আমাদের টিভিগুলোতে অনেক ধরণের প্রোগ্রাম কাজ করে। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যেতে, টিভি, ভিসিডি এ ইনপুট পরিবর্তন করতে, পর্দায় ভিডিও দেখাতে প্রোগ্রাম লিখতে হয়েছে। ক্যামেরায় ছবি উঠানো, তার পেছনেও কাজ করে এই প্রোগ্রামিং। আমাদের হাতের ডিজিটাল ঘড়িটির পেছনে কাজ করে প্রোগ্রামিং।
মেডিকেলে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন টেস্ট করতে হয়। ঐ টেস্টগুলো করা হয় সূক্ষ্ম মেশিন দিয়ে। মেশিনগুলো আবার কাজ করে অজস্র ইন্সট্রাকশন এর উপর, প্রোগ্রামের উপর। কোন রোগ নির্ণয় করার পর তা এনালাইসিস করার জন্য ব্যবহার করা হয় প্রোগ্রামিং। মানুষের শরীরের ভেতরের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য ন্যানো রোবট ব্যবহার হয়। এই রোবটকে কাজ করানোর জন্য ব্যবহার করা হয় প্রোগ্রামিং। আমরা এখন প্রায় সব পণ্যই ঘরে বসে কিনতে পারি। ওয়েব সাইট ভিজিট, পেমেন্ট পরিশোধ করা- সব কিছুর পেছনেই এই প্রোগ্রামিং। এক কথায়, প্রোগ্রামিং এর ব্যবহার ব্যতীত আধুনিক জীবন কল্পনা করা রীতিমতো অসম্ভব।
প্রোগ্রামিং কেন শেখা উচিত?

করোনা অতিমারীর ফলে মানুষ বুঝতে শুরু করেছে ভবিষ্যত বিশ্বব্যবস্থা হতে চলেছে ‘ইন্টারনেট বেইজড’। সবকিছুই ক্রমান্বয়ে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। টাকা পয়সার লেনদেন থেকে শুরু করে অফিশিয়াল কাজকর্ম- সব কিছুই অনলাইন নির্ভর হচ্ছে দিন দিন। অনলাইনে যে কোন কার্য সম্পাদনের জন্য কম্পিউটার সফটওয়্যার বা ওয়েব সফটওয়্যার প্রয়োজন। এই ধরণের কম্পিউটার সফটওয়্যার এর চাহিদা বাজারে থাকলে একজন কম্পিউটার সফটওয়্যার বা একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা লোকের চাহিদা অবশ্যই তুঙ্গে থাকবে- তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

নতুন ভাষা জানা মানুষের সামনে যেমন নতুন দিগন্তের সূচনা হয়, তেমনি কম্পিউটারের একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা থাকলে যে কারও নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে যেতে পারে। করোনার কারণে পৃথিবীর অনেক মানুষ চাকরিক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে। কিন্তু একটু তীক্ষ্ণ নজরে যদি আমরা দেখার চেষ্টা করি, তাহলে বুঝতে পারবো এই কঠিন সময়েও প্রোগ্রামিং সংশ্লিষ্ট যেকোনো শিল্প বা কোম্পানির সূচক উন্নয়নের দিকেই ধাবিত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশেও অধিকাংশ আইটি ফার্মের মোট আয় দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা ব্যক্তি যদি তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকেও আসে, তার বেতনও একজন প্রথম বিশ্বের লোকের প্রায় সমান। বাংলাদেশের মতো চাকরির প্রতিযোগিতামূলক একটি দেশেও ভালো মানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর সবকিছুই অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, তাই সব ধরণের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য আমাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর শরণাপন্ন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটারের একটি প্রোগ্রামিং বা তার অধিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জেনে রাখা ব্যক্তি অবশ্যই বাকি আট-দশজন থেকে এগিয়ে থাকবে।

এছাড়াও নতুন নতুন সফটওয়্যার সৃষ্টির মাধ্যমে ছোট ছোট সমস্যার সমাধান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। অনলাইনভিত্তিক রাইড শেয়ারিং এপ উবার কিংবা পাঠাও অথবা অনলাইনভিত্তিক ফুড ডেলিভারি এপ ফুডপান্ডার দিকে তাকালে বোঝা যায়, বড় কোন বিনিয়োগ ছাড়াই ছোট ছোট কিছু আইডিয়া ব্যবহার করে কি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে তারা। এই ধরণের ছোট ছোট সমস্যার সমাধানের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে নিজের এবং দেশের উপকার করা সম্ভব।

আগ্রহীরা কোথা থেকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখবে?

বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় প্রায় সবকিছু অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এখন কোন ব্যক্তি যদি নতুন কিছু শিখতে চায়, তা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় সহজ। গুগল, ইউটিউব, ইউডেমি, স্কিলশেয়ার, এবং লিংকড ইন লার্নিং সহ নানা রকম প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখানে অনলাইনে প্রায় সব ধরণের সফট স্কিল শিখে নেয়া যায়। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য প্রথমে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে, আগ্রহী ব্যক্তি কোন ল্যাঙ্গুয়েজটি শিখতে চায়। এরপর ঐ ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়ালস অনলাইন থেকে খুঁজে বের করে পড়া শুরু করা যেতে পারে। প্রোগ্রামিং বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন নবীন প্রোগ্রামারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা শুরু করা উচিত পাইথন দিয়ে। ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট সহ অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট পাইথন দিয়ে তৈরি।

কুমিল্লায় প্রোগ্রামিং উৎসব

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (ঝউএ) ও রূপকল্প ২০৪১ (ঠরংরড়হ ২০৪১) এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ‘বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের হার ৫০% এ উন্নীতকরণ' এর লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, কুমিল্লার উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠন করা হয় রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাব। এ ক্লাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টা রোবটিক্স নামক দলের প্রশিক্ষকদের সমন্বয়ে প্রাথমিকভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্স এর উপর প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে বাছাইকৃত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজে দশ দিনব্যাপী প্রোগ্রামিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ কোর্সের পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত ওরিয়েন্টেশন কোর্সও পরিচালিত হয়েছে। এসব ওরিয়েন্টেশন কোর্সে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে দক্ষ প্রশিক্ষকগণ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। উক্ত প্রশিক্ষণে সি প্রোগ্রামিং, সি +, সি ++, পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্টসহ মৌলিক বিষয়সমূহ সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত আজকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আগামীতে সফটওয়্যার, রোবটিক্স, ইথিক্যাল হ্যাকিং, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইমেজ প্রসেসিং, ওয়েব ডেভেলপিংসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিশাল অবদান রাখতে পারবে মর্মে বিশ্বাস করেই কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ। জেলার পাশাপাশি সকল উপজেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুরূপ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাছাইকৃত ছাত্র-ছাত্রীকে অধিকতর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে। রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং এর জন্য কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে একজন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় তো বটেই; বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ে সম্ভবত এটিই প্রথমবারের মতো প্রোগ্রামিং বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের দৃষ্টান্ত।

আজকের তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ২০৪১ সালের কাঙ্খিত বাংলাদেশের দিকে। এ লক্ষ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ পথ চলাকে সুগম করতে প্রয়োজন তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সমৃদ্ধ দক্ষ মানব সম্পদ। এজন্য প্রাথমিক স্তর হতে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলিক বিষয়াবলীর পাশাপাশি ‘বেসিক প্রোগ্রামিং’ বিষয়টি পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মূলধারার জ্ঞানের পাশাপাশি প্রোগ্রামিং এর ব্যবহার, ক্ষেত্রসমূহ, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্প ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন। প্রোগ্রামিং এর মৌলিক শিক্ষা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দানে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব। আর তাতেই অর্জিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’।

মোহাম্মদ কামরুল হাসান
জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা
ইমেইল: mkhasan2003@gmail.com