
নানা
ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দেশজুড়ে। নতুন আইন করেও
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত রবিবার ভোরে বরিশাল-ঢাকা
মহাসড়কের সানুহার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একটি যাত্রীবাহী বাসের ১০ আরোহী
নিহত হয়। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে,
যাত্রীবাহী বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে এটি সড়কের পাশের গাছে সজোরে
ধাক্কা খায়। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। দুর্ঘটনা তদন্তে বরিশাল অতিরিক্ত
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই
দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
একের
পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে,
তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে
ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা
করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে
রাস্তায়। যে কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ
করার কথা, তারাও উদাসীন। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি
তাদের ২০২১ সালের বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালে
দেশে পাঁচ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাত হাজার ৮০৯ জন। আহত
হয়েছে ৯ হাজার ৩৯ জন।
দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এসব
মৃত্যুর কারণ ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসহীন গাড়ি ও অব্যবস্থাপনা। এক
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকেরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন ৩১ শতাংশ চালক কোনো অনুমোদিত
ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেননি। দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে তার
বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুর্ঘটনার কারণ হয়।
আবার
আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না
থাকায় তাঁদের অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। ফলে অনেক সময়
দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়িচালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি নির্ধারণ
করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন ও নিয়ম অন্তর্ভুক্ত
করতে বলা হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীরাও ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে
পারবে। আদালতের সেই নির্দেশনা কি মানা হচ্ছে? মালিকরাও সাধারণত চালকের
দক্ষতা, কল্যাণ ও শৃঙ্খলার প্রতি উদাসীন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নজরদারি
জোরদার করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। অনিয়মকে
প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। দুর্ঘটনা রোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে—এটাই
আমাদের প্রত্যাশা।