
করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব
অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, তার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। করোনার
তাণ্ডবে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারও সংকুচিত হয়ে পড়ে।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পসহ অনেক শিল্পই অত্যন্ত
দুরবস্থায় পড়ে। অনেক শিল্পেরই উৎপাদন কমে যায়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা।
বহু শ্রমিক বেকার হন। সরকারের সময়োপযোগী প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার কারণে
বেশির ভাগ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
দেশে করোনার আঘাত আসার পর থেকে
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মোট ২৮টি
প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়।
এসব প্যাকেজের মধ্যে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই)
খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার
প্যাকেজ অন্যতম। এ দুটি প্যাকেজের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণ করা হয়। প্রথম
পর্যায়ের প্যাকেজের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। আর গত ১ জুলাই থেকে দ্বিতীয়
পর্যায়ের প্যাকেজ দুটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, যার মেয়াদ আগামী বছরের জুন
পর্যন্ত নির্ধারিত আছে।
মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ও
মাঝারি উদ্যোক্তারা (সিএমএসএমই) দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রণোদনা তহবিল থেকেও
আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই
তহবিল থেকে মাত্র ২১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক
প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময়ে ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ ঋণও
বিতরণ করতে পারেনি। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে একটি। বারবার তাগাদা ও
বিভিন্ন শর্ত শিথিলের পরও ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে গতি না আসায় ক্ষুব্ধ
বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রণোদনার ঋণের
অপব্যবহারের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা হতাশাজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সরেজমিন
পরিদর্শনের তথ্য তুলে ধরে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কিছু
ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা অর্থ ব্যবহার করে একই গ্রাহক
অন্যান্য ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় করেছেন। অনেকে প্রণোদনার টাকার একটি অংশ
এফডিআর করেছেন। এটা প্রণোদনা ঋণের শর্তের লঙ্ঘন।
সরকারের নগদ সহায়তা ঘরে
তুলতে অনেক প্রতিষ্ঠান ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে
উৎপাদিত পণ্যের শতভাগ বিদেশে রপ্তানি না করেই শতভাগ রপ্তানিকারক হিসেবে
প্রতিবছর সরকারের নগদ সহায়তার অর্থ তুলে নিচ্ছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের
নামে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি দেখিয়ে এমনকি পণ্য রপ্তানি না করেও নগদ
সহায়তা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার কম রপ্তানি করে অধিক পণ্যের ওপর বা
উৎপাদন খরচ বেশি দেখিয়ে নগদ সহায়তা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এসব বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।