
আন্তর্জাতিক
বাজারে সারের দাম তিন গুণ বাড়লেও সরকার দাম বাড়ায়নি। সারের দাম বাড়লে কৃষি
উৎপাদনের খরচ বাড়বে; কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেদিক থেকে
সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পেতে পারে। কিন্তু আলু চাষ ও বোরোর বীজতলা
তৈরির এ মৌসুমে সারের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে একশ্রেণির অসাধু
ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে
বিভিন্ন জেলা থেকে খবর পাওয়া গেছে। সরকারের নির্ধারিত হার অনুযায়ী, ট্রিপল
সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশের
(এমওপি) ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম যথাক্রমে ১ হাজার ১০০, ৮০০ ও ৭৫০ টাকা।
অথচ বাজারে টিএসপি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, ডিএপি ৯৫০ থেকে ১
হাজার ৫০ টাকা এবং এমওপি ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি
কর্মকর্তাদের মতে, টিএসপির ১ লাখ ১৪ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে দেশে মজুত
রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার টন। ডিএপি ও এমওপির চাহিদা যথাক্রমে ২ লাখ ৮৮ টন ও ১
লাখ ২৯ হাজার টন। আর মজুত যথাক্রমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার টন ও ৩ লাখ ১২ হাজার টন।
যেখানে প্রচুর সার মজুত আছে, সেখানে দাম বাড়ার কারণ কী? এর পেছনে অসাধু
ব্যবসায়ী-ডিলারদের কারসাজি আছে। তাঁরা সারের সংকট হতে পারে, এ রকম গুজব
ছড়িয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার কোনো কোনো
ক্ষেত্রে পরিবহন সমস্যারও দোহাই দিচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে কৃষিমন্ত্রী
আব্দুর রাজ্জাক গত ৩০ নভেম্বর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন যাতে
কেউ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করতে না পারেন। তিনি
বলেছেন, কৃত্রিম ঘাটতি সৃষ্টি করে দাম বাড়ালে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিলসহ
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে
সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা ও আগামী ১৫ দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অতীতে আমরা দেখেছি, সরকারের নির্দেশনা ও
বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। মন্ত্রণালয়ের অনেক নির্দেশনাই
মাঠপর্যায়ে কার্যকর হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে কেবল হুঁশিয়ারি দিয়ে বসে থাকলে
কাজ হবে না; তদারকি বাড়াতে হবে। কোথায় কী পরিমাণ সার মজুত আছে, কী পরিমাণ
সার বিক্রি হয়েছে, তার সঠিক হিসাব রাখতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট
তৈরি করে ফায়দা লুটতে না পারেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায়
আনতে হবে। তবে কাজটি একা কৃষি বিভাগ পারবে না; উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের
সক্রিয় সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। তারা যেন সারের বিষয়টি কৃষি বিভাগের সমস্যা
হিসেবে না দেখে।
সারের দাম বাড়লে কৃষক কেবল আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত
হবেন না, তাঁরা জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম সার দেবেন এবং শস্য উৎপাদনও কম
হবে। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, কোথাও সার সরবরাহে পরিবহন সমস্যা থাকলে সেটিও
দ্রুত সমাধান করতে হবে।