ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে শীতকালীন ফসল
Published : Tuesday, 7 December, 2021 at 12:00 AM, Update: 07.12.2021 12:19:58 AM
অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে শীতকালীন ফসলতানভীর দিপু:
ডিসেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে কুমিল্লার কৃষি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে আলু ও সরিষা। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে রবি ও সোমবারের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় আলু, সরিষা, মশুরসহ পাতা জাতীয় ফলনের যে ক্ষতি তাতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। এছাড়া কাটা ধান এখনো যে পরিমান মাঠে পড়ে আছে সেগুলোর চাল গুণগত মানে ক্ষতিকর প্রভাব পরবে অনেক। লালশাক, পালং শাক, ধনিয়াসহ বিভিন্ন পাতা জাতীয় ফলনের গোড়ায় পানি জমে গেলে সেসব ফলনও নষ্ট হতে পারে জমিতে। টানা এই বৃষ্টি আরো দু’একদিন থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পরবে কৃষদের জন্য।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে আরো চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে। আমরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি।
কুমিল্লা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মু. ইসমাইল ভূঁইয়া জানান, ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি। মঙ্গলবার সারাদিন বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা থাকলেও ৮ ডিসেম্বর বুধবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় ১০৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৪শ হেক্টর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে। যার অধিকাংশই চারা গজায়নি। হেমন্তের শেষের ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণে কৃষকদের সৃজিত ওইসব আলু ক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখা দিয়েছে। আলুর জন্য তৈরী জমিতে পানি জমে যাওয়ায় মাটির নিচে থাকা বীজ আলু পঁচে গিয়ে ফলন না হবার সম্ভাবনা দেখছে কৃষকেরা।
এছাড়া জেলায় ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। এসব আবাদী জমিতে এখনো বীজ থেকে চারা না গজানোয় আক্রান্ত হবে মাটির নিচে থাকা বীজ। যে কারণে ফসলের পরিপূর্ণ আবাদ নিয়ে শংকায় কৃষকেরা। অন্যদিকে তিতাস ও মেঘনা এলাকায় বিস্তৃর্ন জমিতে আবাদ করা হয়েছে মশুরের। আগাম রোপন করা এই ফলনেরও একই দশা হতে পারে বলে আশংকা কৃষি বিভাগের। প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমির ফলন পড়তে পারে ক্ষতির মুখে।
লালমাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুনায়েদ কবির জানান, কাটা ধান, সরিষা, শাক সবজির জমিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান নিরুপণে আরো দু একদিন সময় প্রয়োজন। 
অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে শীতকালীন ফসলদেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রউফ জানান, দেবিদ্বারের প্রায় ১ হাজার ২৫ হেক্টর আলু বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া শষা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ অন্যান্য সবজির চারার গোড়ায় ইতিমধ্যে পানি জমে গেছে। বৃষ্টি না থামলে এসব ফলনেরও ক্ষতি হতে পারে।
অন্যদিকে ঘরে তোলা বাদি আমন ধানের ফলন নিয়েও বৃষ্টির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব জমির পাকা ধান এখনো কাটা হয়নি সেগুলোর তেমন ক্ষতি না হলেও যেসব ধান কেটে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে সেগুলোর গুণগত মান কমে যেতে পারে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান আরো জানান, যেসব কষকেরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কোন উপজেলায় কোন ফলনের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো পুষিয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা কাজ করবেন। কৃষি বিভাগ থেকে কিছুদিন আগেও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রয়োজনে আবারো প্রণোদনা দেয়া হবে।

২৪ ঘন্টায় ১০৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত:
ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুইদিন কুমিল্লাসহ সারাদেশেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপিাত হচ্ছে। গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় ১০৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার আবহাওয়া কর্মকর্তা মু. ইসমাইল ভূঁইয়া। তিনি জানান, ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে লঘুচাপের কারনেই এই বৃষ্টিপাত। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবারও এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও ৮ ডিসেম্বর থেকে আবহাওয়া উন্নতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার সারাদিন মাঝারি ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে থমকে গিয়েছিলো কুমিল্লার জনজীবন। সকাল থেকেই নগরীর রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোরে বাইরে অপেক্ষমান অভিভাবকদের ছাতা মাথায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাসে অনেকটাই অসহনীয় ছিলো বাইরের কাজ কর্ম। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরে খেটে খাওয়া মানুষ। বৃষ্টির কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক, হকার ও রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা ভোগান্তিতে পড়েন।