ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
চেয়ার কেনায় আত্মসাৎ পৌনে ২ কোটি, ১০ বছর পর মামলা
Published : Friday, 8 October, 2021 at 12:00 AM
দীর্ঘ ১০ বছর অনুসন্ধানের পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজের জন্য পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের রংপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক জানান, মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অনুসন্ধানের দীর্ঘদিন পর কেন মামলাটি রুজু করা হলো দুদকের এ কর্মকাণ্ড নিয়ে রংপুরের সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে। দুদক কেন একটি অভিযোগের মামলা রুজু করতে দীর্ঘ ১০ বছর দেরি করলো এবং এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত– পুরো বিষয়টি তদন্ত করার দাবি উঠেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে এ মামলার আসামিরা হলেন– স্বাস্থ্য অধিদফতরের বহুল আলোচিত মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠুর বড় ভাই মার্চেন্টাইজড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুর রউফ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে দুই কোটি ৮২ লাখ টাকায় পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার এবং চেয়ারের এক্সেসরিজ কেনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু বাজারদর বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা বেশি দামে এ কেনাকাটা করা হয়েছিল। তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. আব্দুর রউফ ও ঠিকাদার মোহাম্মদ মোকছেদুল ইসলাম ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। যেখানে ক্রয় পরিকল্পনা, বাজারদর যাচাই, অফিসিয়াল প্রাক্কলন প্রস্তুত, টেন্ডার ওপেনিং কমিটি ও কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠনসহ কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা এবং কোনও শর্তই পালন করা হয়নি বলে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে। সে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রমাণ থাকার পরেও কেন অনুসন্ধানের নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্ত করেছে দুদকের ঢাকার টিম। তারা কেন বিলম্ব করেছে এর উত্তর আমার জানা নেই।’
এদিকে অনুসন্ধানের নামে দুদকের বিলম্ব করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুদকের সহযোগী সংগঠন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল। দুর্নীত প্রতিরোধ করতে হলে অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত অনুসন্ধান করে মামলা দায়ের করা এবং অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দুদকের দায়িত্ব। দীর্ঘদিন পর মামলা রুজু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’ রংপুরে আরও অনেক দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। সেগুলো দুদক দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে-এ দাবি জানান তিনি।
এদিকে সুজন রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বেজ্ঞু বলেন, ‘দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়মতো তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন না দিলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কেন একটি ঘটনার অনুসন্ধান করার নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব হলো দুদককেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’