ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রবিবাসরীয়....
Published : Sunday, 3 October, 2021 at 12:00 AM, Update: 03.10.2021 1:23:28 AM
রবিবাসরীয়....
আমাদের কথা ঃ স্বীকার করতে হয় পত্র সাহিত্য ওবে গেছে। হয়তো কিঞ্চিৎ আছে তবে নিঃশেষ হওয়ার পথে। ভার্চুয়াল স্রোতের কারণে বিশ^ আজ প্রায় ঘরের ভেতর, ঠিক একেই কারণে ব্যাপক অর্থে বিশে^র অধিকাংশ লোক বিচ্ছিন্ন,পরবাসী বা দূরবাসী। সন্তানেকে বার বার মোবাইলে এবং অন্যান্য উপায়ে পিতা মাতা বলেনও তাঁর বলার কথাটি। শুধু পিতা মাতা নয় মঙ্গলাকাঙ্খি সকল অভিভাবক বলেন।  কিন্তু সন্তান আজ তাঁর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথবা হিতাকাঙ্খিরা ইচ্ছে করলেও পাশে থাকতে পারছেন না। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে  ভৌগোলিক দূরত্বকে মেনে নিয়েছি আমরা। কেউ আছেন এক ঘরে বাস করেও যোজন যোজন দূরত্বে । সন্তানের মাথায় হাত রেখে কথা বলা, একটু আদর করে বলা, বিস্ময় জাগানিয়া বিষয় হয়ে ওঠেছে । এভাবে আস্ত একটা রচনা রচিত হতে পারে কিন্তু আমারা তিনটি পত্র উপস্থাপন করছি। পত্র লেখকরা স্ব স্ব কর্মে তিনজনই সুনামধারী। তিনটি পত্রের রচনাকারী তিনজন পিতা। প্রত্যেকে তাঁদের সন্তানকে লিখেছেন। পত্রসমূহের পরিবেশ, সময়, স্থানের পার্থক্য রয়েছে কিন্তু উদ্দেশ্য অভিন্ন ও বৈচিত্রময়। প্রায় সকল বয়সের মানুষের জন্য পত্রসমূহ প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমরিকার ১৬তম প্রেসিডেণ্ট আব্রাহাম লিংকন, তাঁর লেখা পত্রটি বিশ^ব্যাপি পরিচিত। সম্ভবতো পৃথিবীর বহুল পঠিত পত্র। বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত। নতুন করে পত্রটির আবার অনুবাদের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করিনি। দ্বিতীয় পত্রটি হংকংয়ের একজন চাইল্ড সাইকোলজিস্টের। ভদ্রলোকের কোন ছবি সংগ্রহ করা যায়নি, নাম ধামও না। ২০১৪ থেকে বিভিন্ন মিডিয়াতে পত্রটি আমরা লক্ষ করেছি। পত্রটির বিভিন্ন অনুবাদ থাকা সত্বেও আমরা কোন অনুবাদ নেয়নি। পত্রটি অনুবাদ করেছেন চিকিৎসক কায়সার হেললাল। কবি প্রাবন্ধিক কায়সার হেলাল তার শত ব্যস্ততার মাঝে অনুবাদে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।
তৃতীয় পত্রটি শিল্পী সমীরণ দত্তের। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সমীরণ দত্ত হিসেবের খাতা খুলেন বৃক্ষভাষ্কর্যে। তিনি প্রথাগত শিল্পী নন। স্বনামখ্যাত চিত্রশিল্পী মনসুরুল করিম - সমীরণ দত্তকে বলেছিলেন, ‘আর বের হতে পারবি না সমীরণ।’ সত্যি তিনি বের হতে পারেননি। বের হতে টেষ্টাও করেননি। নিজের  গৌরবজনক অধ্যায়ে পৌঁছতে তাকে অনেক চরাই উৎড়াই পার হতে হয়েছে। দেশবরেণ্য শিল্পী সদ্য প্রয়াত ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী তাঁকে উৎসাহ পরামর্শ দিয়েছেন  বিভিন্ন সময় পত্রে কথায় লেখায়। সমীরণ দত্ত স্বভাবে  নিভৃতচারী। কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুকে শিল্প করে তোলার মাধ্যমে শুরু তাঁর শিল্পী জীবন। এ বিষয়ে রয়েছে তাঁর অসামাণ্য দক্ষতা। আগবাড়িয়ে  পরিচয় প্রদানে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। তাকে খুঁজে নিতে হয়। শীর উঁচু করে , মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়ানো মানুষ। থাকেন কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার পথে শাহারাস্তির ‘মনবাগানে’। জীবনের ভেতর বাহির দেখেন নিজ দৃষ্টির আলোতে। সমীরণ দত্ত লিখেছেন তাঁর কন্যা অবন্তিকে। মেয়ের জন্মদিনে, মেয়ের বন্ধুদের কিছু কথা সমীরণের মগজে আটকে যায়। সমীরণ আনমনা হয়ে যান। না লিখে  নিস্তার পান না। আমরা তিনটি পত্র পাঠকের জন্য তোলে দিলাম।
... বিভাগীয় সম্পাদক।


সমীরণ দত্ত এর চিঠি রবিবাসরীয়....
অবন্তিকে
আগামী জন্মদিনের আগে তোকে শ্বশুর বাড়িতে দেখতে পাবার আশাবাদ ব্যক্ত করে শ্রাবন্তী যখন হ্যাপি বার্থডে বলছিলো, জয়ন্ত যখন হেসে কুটিকুটি, আমি এপাশ থেকে তোদের সব কথা শুনতে পাচ্ছিলাম।
মোবাইলের ঘড়িতে এগারোটা আটান্ন। ভাবলাম ঠিকঠিক বারোটায় টিভির ভলিউমটা কমিয়ে তোকে বলবো, শুভ জন্মদিন ওবু।
দু'মিনিটের মধ্যে আমি বিষয়টা ভুলে গেলাম!
শুভ জন্মদিন অবন্তী অনড়হঃরশধ অনড়হঃর বাবা!
ভোরে উঠে মনবাগানে চলে এসেছিলাম। নাস্তাটাস্তা এখানে সারলাম। টুকটাক ব্যস্ততায় আটকে গিয়েও কয়েকবার ভেবেছি তোর কথা। শ্রাবন্তীর ঠাট্টা করে বলা কথাগুলোও মনে উঁকি দিয়েছে। আসলেই তো, গ্রামের মেয়েদের এমন বয়সে শ্বশুর বাড়ি চলে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তোর মা-বাবা এখনও উঠেপড়ে লাগেনি, আমি অন্তত বিশ্বাস করি- যথাসময়ে যা ঘটার ঘটবে।
কিন্তু ঘটবে। প্রচলিত ব্যবস্থা এমনই, আমরা তোকে একদিন শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো, তোর প্রতি আমাদের দুর্বলতা বশতঃ একজন ঘরজামাই নিয়ে আসবো না নিশ্চয়ই। বেমানান এবং কোনো না কোনো কারণে অসঙ্গত বলে সমাজ ব্যবস্থায় ঘরজামাই প্রথাটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি আদিকাল থেকেই।
কোনো একটা নতুন ঠিকানায় নতুন পরিবেশে তুই কেমন থাকবি সেটা চিরকালের অনিশ্চয়তার বিষয়। তোর ভালো থাকা মন্দ থাকা নিয়ে শুধু ওই ঠিকানার মানুষগুলোর ভূমিকাই শেষ কথা নয়। তোকেও, এমনকি তোর আপনজন হিসেবে আমাদেরকেও যথাযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে।
এটা বিনয়ের সাথে মনে রাখবি, কোনো একটি পরিবারে তুই নবাগত সদস্য হবি। আমাদের পরিবারে তোর অভ্যস্ত বিষয়াদি সেখানে চাপিয়ে দেবার বদলে তাঁদের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে পারলে জীবনযাপনে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। আমি বলছি না সেখানে মন্দ কিছু থাকলে মুখ বুঁজে তোকে সব সহ্য করতে হবে বা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার হলেও তুই এড়িয়ে যাবি। বরং অসঙ্গত কিছু সেখানে থাকলে উপযুক্ত যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার সাথে, প্রধানত প্রেমের সাথে পরিবর্তনের চেষ্টা করবি। এ জন্য তোর ধৈর্য্য ধরার দরকার হতে পারে। এ ব্যাপারে যুক্তির থলে হাতে নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তুই হেরে যাবি, অনেককিছুই এলোমেলো হয়ে যাবে।
স্বামী হিসেবে যাকে পাবি, সেই পুরুষ মানুষটাকে জীবনের শুরু থেকেই একজন সম্ভাব্য অত্যাচারি প্রতিপক্ষ বলে ভেবে রাখিস না। জানিস তো, অর্ধাঙ্গিনী বলে যে মানুষটির পরিচয় দেয় একজন পুরুষ, তাকে নিয়ে সে পুর্নাঙ্গ মানুষ হবার স্বপ্ন দেখে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ তার জান মাল বিশ্বাস ভবিষ্যৎ নারীর কাছে সমর্পণ করে নির্ভার থাকতে চায়, নিজেকে প্রেমে বন্দী মানুষ হিসেবে দেখতে চায়। সমর্পণ বৃথা গেলে সে আহত হয়, হতাশ হয়, বদলে যায়। একই কথা একজন নারীর বেলাতেও সত্য। আমি নিজে পুরুষ বলে, তুই আমার কন্যা বলে যেভাবে বলা প্রয়োজন সেভাবেই বলছি বাবা!
বাবা, তুই কি খেয়াল করেছিস কখনও- বিশ্বসংসারে নারীর অবমাননা এবং দুর্ভোগের জন্য প্রায়শই অন্য একজন নারী কোনো না কোনোভাবে দায়ি থাকে। বহু পরিবারে একজন নিগৃহীত পুত্রবধূ অথবা একজন অসহায় শাশুড়ির অস্তিত্ব সহজলভ্য। শাশুড়ি বউয়ের মিষ্টিমধুর সম্পর্ক অনেকটাই কাল্পনিক। কালননদিনী বলে বিবেচিত যে নারী পিতৃ সংসারে তার ভাতৃবধূর জন্য মুর্তিমান আতঙ্ক, সেই একই নারী তার স্বামীর সংসারে একইভাবে নির্যাতিত আরেক ননদিনীর হাতে।
আমি মনেপ্রাণে চাই, তুই কারও ঘরের অসভ্য পুত্রবধূ হবিনা, অবিবেচক শাশুড়ি হবিনা, দুষ্ট ননদিনী বা নিষ্ঠুর ভাতৃবধূ হবিনা। একটা কথা ভুললে চলবেই না, নিজের ভালোটা আগে দিয়ে পরে অন্যের কাছ থেকে তা আশা করতে হয়। তারপরও যদি তোর জীবনে শান্তির ঘাটতি ঘটে, তাহলে জানিস - আমরা, তোর মা-বাবা তোকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারিনি, অথবা শিক্ষাটা তুই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছিস।
প্রকৃত অর্থেই তুই শতভাগ সঠিক থাকার পরও যখন তোর হেরে যাবার মতো পরিস্থিতি হবে, তখন যদি তোর বাবাটা জীবিত থাকে, নিশ্চয়ই তোর পাশে দাঁড়াবে।


 হংকংয়ের চাইল্ড স্পেসালিস্টের চিঠি
প্রিয় পুত্র,
তোমাকে এসব বলছি বা বলতে চাই তিনটি কারনে-
১) জীবন, ভাগ্য এবং দৈবদুর্বিপাক চিরকাল অনিশ্চিত। কেউ জানে না সে কয়দিন বাঁচবে। তাই তোমার উদ্দেশ্যে কিছু কথা আগেভাগেই বলে ফেলা উচিত।
২) যেহেতু সম্পর্কে আমি তোমার পিতা, তাই এসব গূঢ়-কথা যদি আমি বলে না যেতে পারি, নিশ্চিত থাকো আর কেউ বলবে না।
৩) যা কিছু আজ তোমাকে লিখতে বসেছি এসব মূলতঃ আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার সমাহার। লিখতে বসেছি কারন আমার ধারণা এসব জৈবনিক অভিজ্ঞান তোমাকে হয়তো অনেক অপ্রয়োজনীয় মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে দেবে। আশা করি জীবনের প্রতিটি পরতে এই চিঠির সার তুমি মনে রাখবে-
    ক) কেউ মন্দ হলেও তার প্রতি বিদ্বেষ পুষে রেখো না। আমি আর তোমার মা ব্যতিত অন্য কেউ তোমার প্রতি ভালো আচরণ করবার দায়িত্ব নেয় নি। যারা তোমার জন্য শুভময় তাঁদেরকে ভুলে যেও না এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তবে তোমাকে সতর্কও থাকতে হবে, কারন কেউ একজন তোমার প্রতি ভালো হলেও এর মানে এই নয় যে সে তোমাকে পছন্দ করে। তোমাকে সাবধান থাকতে হবে কাউকে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করবার আগে। কেননা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যতিত কেউ কোন পদক্ষেপ নেয় না।
    খ) জীবনে কেউই অত্যাবশ্যক নয়, এমন কিছু নেই দুনিয়ায় যা তুমি আজীবন ভোগ করতে পারো। যখনই তুমি এই দর্শনটুকু আত্মস্থ করতে পারবে তখন প্রিয় কোন কিছু কিংবা আর কাউকে হারানোর বেদনা তোমাকে খুব একটা কষ্ট দেবে না। এমনকি তোমার আশেপাশের লোকজনের নিকট তোমার গুরুত্ব ফুরিয়ে গেলেও অতি সহজে বিষয়টি হজম করে ফেলতে পারবে।
    গ) জীবন ছোট। আজ তোমার জীবনকে যদি অপচয় করো কাল ঠিকই জীবন তোমাকে ছেড়ে যাবে হলফ করে বলতে পারি।
ঘ) প্রেম এক ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি, সময়ের সাথে সাথে যা ম্লান হতে থাকে। হয়তো মর্জি নির্ভরও হয়ে পড়ে এক পর্যায়ে। যদি তোমার তথাকথিত প্রিয়তমা তোমাকে ত্যাগ করে, ধৈর্য ধরো; সময় তোমার সকল মনোবেদনা ধুয়ে দেবে নিশ্চিত।। ভালোবাসার সৌন্দর্য ও কোমলতা সম্পর্কে অতিশয়োক্তি থেকে বিরত থেকো এবং বিরহজনিত দুঃখবোধকেও অতিরঞ্জিত করো না।
ঙ) জগতের সকল সফল মানুষের মধ্যে একটা বড় অংশ কথিত শিক্ষিত নয়। তার মানে এই নয় যে তুমিও পড়াশোনা ব্যতিত সফল হতে পারবে। যে জ্ঞানই অর্জিত হোক না কেন, মনে রেখো এসব জ্ঞানই তোমার অস্ত্র। যে কেউই দরিদ্র থেকে ধনী হতে পারে, কিন্তু কোন একজনকে তো অন্তত ছেঁড়া জামাকাপড় থেকেই শুরু করতে হয়েছে, তাই নয় কি?
চ) আমি বৃদ্ধ হলে আশা করি না তুমি আমাকে আর্থিকভাবে দেখভাল করবে। তাছাড়া এটাও সত্য যে আমিও তোমাকে জীবনভর টানতে পারবো না। আমার দায়িত্ব কেবল বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। অতঃপর ধনী বা গরিব যাই হও না কেন, তুমি গণপরিবহনে চড়বে নাকি লিমোজিন হাঁকাবে সেটা একান্তই তোমার সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল।
ছ) তোমার যেকোন বক্তব্যকে তুমি সম্মান করতেই পারো, কিন্তু আশা করো না অন্যেও করবে। তুমি সকলের প্রতি ভালো আচরণ করতে পারো, কিন্তু সবার নিকট একই আচরণ প্রত্যাশা করা ভুল। এসব গুঢ়-বিষয় তুমি যদি হৃদয়ঙ্গম করতে না পারো তবে তোমাকে পদে পদে পস্তাতে হবে।
জ) বহু বছর ধরে আমি লটারীর পেছনে প্রচুর অহেতুক ব্যয় করেছি, কেননা আজ পর্যন্ত আমি কোন পুরষ্কার পাই নি। তার মানে তাহলে কী দাঁড়ালো? অর্থ্যাৎ ধনী হতে হলে তোমাকে ঘাম ঝরাতে হবে। পরিশ্রমই পারে তোমাকে সম্মানজনক কোন জায়গায় পৌঁছে দিতে। বিনামূল্যে খাবার দেবে না কেউ।
ঝ) তোমার সাথে কতক্ষণ কাটাচ্ছি এটা উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু যতোটা সময় পিতা-পুত্র একসাথে যাপন করছি তার সবটুকু স্মৃতির পাতায় তুলে রেখো, কারন আমরা জানি না পরবর্তী জীবনে আবার মিলিত হবো কিনা।



(আব্রাহাম লিংকনের চিঠি ) রবিবাসরীয়....

মাননীয়
মহোদয়,
আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা।
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এও শেখাবেন; প্রত্যেক খারাপের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিবিদের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকেন। তাকে শেখাবেন, পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান।
তাকে শেখাবেন, কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন একথা বুঝতে শেখে, যারা অত্যাচারী তাদেরকে নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে শেখাবেন। আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করে পাস করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। নিজের ওপর তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে, এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে।
তাকে শেখাবেন, ভালো মানুষের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন হুজুগে মাতাল জনতার পথ অনুসরণ না করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন। সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যটা ছেঁকে যেন শুধু ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন। সে যেন শেখে দুখের মাঝেও কীভাবে হাসতে হয়। আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই, সে কথাও তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃণা করতে শেখে। আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেননা, কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তান যেন বিপদে ধৈর্যহারা না হয়, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য। তাকে এ শিক্ষাও দেবেন, নিজের প্রতি তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।
ইতি
আপনার বিশ্বস্ত; আব্রাহাম লিংকন।


 ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী লুইস গ্লিক লুইস গ্লিকের কবিতা
 ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী লুইস গ্লিক লুইস গ্লিকের জন্ম ১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে। বেড়ে উঠেন লং আইল্যান্ডে। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সারাহ লরেন্স কলেজ ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যাল্যয়ে। সমকালের অন্যতম এই মার্কিন কবি তাঁর কবিতায় নিঃসঙ্গতার স্বরুপ , পারিবারিক সম্পর্ক, বিচ্ছেদ ও মৃত্যু প্রভৃতি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। ২০২০ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর কাব্যকৃতি বৃত্তান্তে নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছেন- 'তাঁর অভ্রান্ত কাব্যকন্ঠ ও কবিতার নিরাভরণ সৌন্দর্য ব্যক্তিক অস্তিত্বকে বৈশ্বিক করে তোলে।' ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক সাহিত্যে নোবেলজয়ী নারীর তালিকায় ষোলতম। ১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী টনি মরিসনের পর গত সাতাশ বছরে নোবেলজয়ী প্রথম মার্কিন নারী তিনি। গ্লিকের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলোঃ ফার্স্টবর্ণ, দ্য হাউজ অন মার্সল্যান্ড, দ্য গার্ডেন, ডিসেন্ডিং ফিগার, দ্য ট্রায়াম্প অভ একিলিস, এবং পুলিৎজার প্রাপ্ত দ্য ওয়ালন্ড আইরিস।
 ১. অতীত আকাশে উদয় হলো ক্ষুদ্র আলোর আচম্বিত দুটো পাইন ডালের মাঝে, তাদের সুন্দর সুচালো কাটাগুলো গেঁথে আছে যেন উজ্জ্বল উপরিতলে এবং এর উপর উঁচু, পালকময় স্বর্গ-- বাতাসের ঘ্রাণ নাও। সাদা পাইনের ঘ্রাণ সেটা, খুব তীব্র হয় যখন বাতাস বয়ে যায় বাতাসের ধাক্কায় সৃষ্ট আওয়াজ সমান অদ্ভুত, সিনেমার বাতাসে শব্দের ন্যায়-- ছায়াগুলো হেঁটে যাচ্ছে। রশির শব্দ হচ্ছে। তুমি এখন যা শুনছ হতে পারে নাইটিঙ্গেল বা কর্ডাটা পুরুষ পাখি তার সঙ্গীনীকে প্রেম নিবেদনের -- দড়ি নড়ে গেছে। দোলনা বাতাসে দুলছে, দুটো পাইন গাছের সাথে দৃঢ়ভাবে বাঁধা। বাতাসের ঘ্রাণ নাও। সাদা পাইনের ঘ্রাণ সেটা, আমার মায়ের স্বর শুনছো হয়তো তুমি অথবা গাছ জোড়ার গায়ে বাতাসের ধাক্কার শব্দ কারণ কোন কিছুর ধাক্কা ছাড়া কিসের আওয়াজ হবে?
২. প্রসঙ্গ সত্যের প্রসঙ্গ অন্ধকার এটা ঝাট দেয় ইসরাইলের মরু। তুমি কি আলোর ঝলকানি বা মোহের জালে বন্দী? এটা তোমার জন্য ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার রাস্তা, যার পরিচয় নেই কোন, নেই কোন হাত দৃশ্যমানঃ এক ফন্দি অন্ধকার জলাধারের উপর পূর্ণিমারাতের।
৩. পার্থিব ভীতি আমি একটা সম্ভ্রান্ত নগরীর প্রবেশমুখে দাঁড়িয়েছিলাম। দেবতার প্রয়োজনের সবকিছু আমার ছিল; আমি প্রস্তুত ছিলাম; প্রস্তুতির বোঝা ছিল দীর্ঘ। এবং সেই মুহূর্তটি ছিল সঠিক মূহুর্ত, যখন আমার পালা ছিল। আপনি ভীত ছিলেন কেন? সেই মুহূর্তটি ছিল সঠিক মূহুর্ত; উত্তর অবশ্যই প্রস্তুত ছিলো। আমার ঠোঁটে, যে শব্দগুলো কাঁপছিল সেগুলোই ছিল আসল উত্তর। কম্পিত-- এবং, এটা আমি জানতাম যে দ্রুত উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হতো।
৪. এপ্রিল আমার হতাশা অন্যের চেয়ে আলাদা-- এই বাগানে তোমার কোন স্থান নেই এসব চিন্তা করে, আপাতদৃষ্টিতে ক্লান্তির চিহ্ণ ফুটে তুলে , লোকটি স্পষ্টত একটা পুরো বাগান সাফ করছে, মহিলা খুঁড়িয়ে চলছেন, অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তার পরনের জামাকাপড় বদলাতে, বা চুল পরিস্কার করতে। তোমার কি মনে হয় আমি কিছু মনে করি যদি তোমরা দুইজন আলাপ করো? কিন্তু আমি চাই তুমি এটা জানো যে আমি দুইজনের কাছে আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম যাদের মন আছেঃ আর নাহয় তোমরা যদি একে অপরকে নিয়ে ভাবতে অন্তত এটা বুঝতে পারতে যে দুঃখ ভাগাভাগি হয়েছে তোমাদের মধ্যে, তোমাদের মতো সবার মধ্যে, আমার জন্য তোমাকে জানা, যেমন গাঢ় নীল চিহ্ন বুনো সিল্লার গায়ে, সাদা, বাগানের রং রক্তবেগুনী।
৫. ফসল তোমার অতীত নিয়ে ভাবতে আমার কষ্ট হয়-- নিজেকে দেখো, অন্ধভাবে পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরে যেন এটা বেহেশতের আঙ্গুর বাগান যখন জমিগুলো তোমার চারিদিকে ফেঁপে উঠে-- আহ, ক্ষুদ্র জিনিস, কতই অস্পষ্ট তুমিঃ এটা একই সাথে উপহার ও বেদনা। মৃত্যুকে ভয় করে কি হবে? যদি শাস্তি এর চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে, তাহলে মৃত্যুকে তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেইঃ কতবার আমি নিজের সৃষ্টি বিনাশ করব তোমাদকে জানাতে এই হলো তোমার শাস্তিঃ মাত্র এক ইশারায় আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দুনিয়া ও বেহেশতে।
রবিবাসরীয়....