
বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা, বোমাবাজি, বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আর অধিকাংশ ঘটনাতেই ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম জড়িয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
রবিবার রাজ্যটির ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২ টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে তৃণমূল পায় ২১৩ টি আসন, ৭৭ আসনে জয় পায় বিজেপি, ১টি আসনে জয় পায় সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী, অন্যরা ১টি।
ভোটের ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রবিবার রাত থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয় রাজনৈতিক সহিংসতা। কলকাতার কাঁকুরগাছি এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে পাথর মেরে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। নিহত ব্যক্তির নাম অভিজিৎ সরকার। বিজেরি তরফে থেকে দাবি করা হয়, ওই ব্যক্তি তাদের দলের কর্মী। হামলার আগে ওই বিজেপি কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন।
পরিবারের দাবি, পুলিশের চোখের সামনেই পিটিয়ে মারা হয় তাকে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতাপনগর এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়েছেন আরেক বিজেপি কর্মী। হারান অধিকারীকে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। পরে তাকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় তৃণমূলের জড়িত থাকার ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থ গাঙ্গুলী।
ফল প্রকাশের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নদীয়া জেলার গাংনাপুর এলাকা। গাংনাপুর থানার দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা উত্তম ঘোষ নামে এক বিজেপি কর্মীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পেশায় কৃষক উত্তম সাম্প্রতিক নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর হয়ে কাজ করেছিলেন। গতকাল মুকুটমণি জেতার পরই উত্তমের ওপর হামলা চালানো হয়। লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে চড়াও হয়, প্রাণ বঁচাতে একটি বাড়িতে ঢুকে গেলে সেই বাড়িও ভাঙচুর করা হয় এবং তাকে টেনে বের করে পিটিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
ভোট পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একাধিক এলাকাতেও। সোমবার সকালে কদম্বগাছির উলা গ্রামে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) কর্মী হাসানুর রহমানকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ৪০ বছর বয়সী হাসানুরকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি বোমা ছোড়া হয়, একটি বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দুইটি বোমা তার শরীরে আঘাত করে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনায় সকাল থেইে চাপা উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর রবিবার রাত ১১টা নাগাদ মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি বাঘডাঙ্গা এলাকায় কান্দি টাউন বিজেপি সভাপতি বিনিতা রায়ের বাড়িতে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার বাড়ি লক্ষ্য করে দুইটি বোমা ছোড়া হয়। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার।
আর ভোট গণনা পরবর্তী সহিংসতার প্রেক্ষিতে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী। সোমবার বিকালে কালীঘাটের বাড়িতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘বাংলা শান্তিপ্রিয় ও সংস্কৃতিপ্রিয় জায়গা, নির্বাচন হয়েছে। আবহাওয়া কখনও কখনও গরম হয়েছে, আবার ঠাণ্ডা হয়েছে। বিজেপি, কেন্দ্রীয় বাহিনী অনেক অত্যাচার করেছে আমরা সেটা জানি। কিন্তু তা সত্বেও আমি বলবো শান্ত থাকতে হবে। আমরা যেন কোনো সহিংসতায় না জড়াই। করোনাকালে এখন মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ হল মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই ভাইরাসর বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমি সকলকে শান্ত থাকতে বলবো। কারও বিরুদ্ধে কোনরকম অভিযোগ থাকলে তা যেন পুলিশকে জানানো হয়। তবে বিজেপি এটাকে নিয়ে একটু বাড়াবাড়িও করছে। আজকেও বর্ধমানে আমার একজন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কোচবিহারেও ওরা খুব অত্যাচার করছে।