
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি শুরু থেকেই করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। ফলশ্রুতিতে শুরুর দিকে পুলিশে করোনা আক্রান্তের হার ছিল উদ্বেগজনক। পরবর্তীতে সদর দফতরের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় পুলিশে করোনায় আক্রান্তের হার কমে আসে। নতুন করে আবারও পুলিশ সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সকাল ৯টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সহ ৯ ইউনিটে ৩৮ জন পুলিশ সদস্য নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এ সময়ে নতুন করে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ডিএমপিতেই রয়েছেন ১৬ জন। সিএমপিতে রয়েছেন ১০ জন। বাকিরা অন্যান্য ইউনিটের। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে দায়িত্বরত অবস্থায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক হামলায় অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার কারণেও মারা গেছেন অনেকে। কিন্তু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার চেয়েও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনার নির্মম শিকার হয়েছেন ১৯ হাজার ৭১৩ জন। এরমধ্যে সাতজন অতিরিক্ত আইজিপি, ১৬ জন ডিআইজি, ২০ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১৩৩ জন পুলিশ সুপার, ২০১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২৫৫ জন সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি), এক হাজার ৩৪ জন ইন্সপেক্টর, তিন হাজার ২২৩ জন এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআই, ৫৭৩ জন নায়েক, নয় হাজার ১৭২ জন কনস্টেবল এবং অন্যান্য পদবির দুই হাজার ১৩৯ জন। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে নারী আছেন ৮১৬ জন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২৮ এপ্রিল প্রথম ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য কনস্টেবল জসিম উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর একে একে শনিবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত ৮৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। এছাড়া ইন্সপেক্টর ১১ জন, এসআই (সাব ইন্সপেক্টর) ১৪ জন, এএসআই (অ্যাসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর) আটজন, নায়েক একজন, কনস্টেবল ৪৩ জন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্য ছয়জন এবং পুলিশে কর্মরত সিভিলিয়ান সদস্য মারা গেছেন তিনজন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ছিল শতকরা ২৬ ভাগ। বর্তমানে ১১৬ জন পুলিশ ও র্যাব সদস্য কোয়ারেন্টিনে আছেন। আইসোলেশনে আছেন ৩৩০ জন। রাজধানীর কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাধীন আছেন ২৭৮ পুলিশ সদস্য। আইসিইউতে আছেন ১৪ জন এবং এইচ ডি ইউ’তে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) আছেন ১৫ জন পুলিশ সদস্য। সিলেটের বিভাগীয় হাসপাতালে দু’জন এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় হাসপাতালে আটজন চিকিৎসাধীন আছেন।
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চিকিৎসকদের পাশাপাশি সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ান। চিকিৎসায় সহায়তা ছাড়াও লাশ দাফন ও সৎকারে পুলিশ সদস্যরা সামনে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায়ও পুলিশ বাহিনী পিছপা হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা।