
সাধারণ
মানুষ এখনো উপলব্ধি করতে পারছে না যে আমরা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে
ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের এমন সব ধরন বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে,
যেগুলোর সংক্রমণমতা ও মৃত্যুহার দুটোই অনেক বেশি। টিকা প্রদানের হার অনেক
বেশি হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপের অনেক দেশই ভাইরাসের এসব ধরনকে সামাল দিতে পারছে
না। নতুন করে লকডাউন দিতে হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দ্রুত বাড়ছে নতুন
নতুন ধরনের সংক্রমণ। অথচ দেশের বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক পরাসহ জরুরি
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বন্ধ হচ্ছে না বিয়েশাদিসহ সামাজিক নানা
আনুষ্ঠানিকতা। সভা-সমাবেশও চলছে। সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের
উপচে পড়া ভিড়। নতুন ঢেউ মোকাবেলায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা দিলেও সেগুলো
বাস্তবায়নের েেত্র রয়েছে উদাসীনতা। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরীা বিবেচনায়
আক্রান্তের হার ২ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এলেও গত সোমবার এই হার ছিল প্রায়
১৯ শতাংশ। রবিবার ও সোমবার দৈনিক মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন করে। তার পরও
বইমেলা চলছে। পৌরসভা-ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। হাট-বাজার বা বিপণিবিতানগুলোতে
মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত কঠোর
ব্যবস্থা নেওয়া না হলে করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে
যেতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম দফা সংক্রমণের চেয়ে
দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বহুগুণে শক্তিশালী। আগের সংক্রমণে বড় য়তি হয়নি বলে
দ্বিতীয় দফা সংক্রমণকে অবহেলা করা হলে অনেক বড় ভুল করা হবে। এখনই
হাসপাতালগুলোতে ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা। করোনা রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি
আইসিইউ চিকিৎসাসেবা নাগালের বাইরে চলে গেছে। সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে
রীতিমতো বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা হবে। সারা বিশ্বেই চাহিদা
অনুযায়ী টিকার সরবরাহ নেই। অনেক দেশ এখনো টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরুই করতে
পারেনি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যে চাহিদা অনুযায়ী টিকা পাবেই তারও কোনো
নিশ্চয়তা নেই। আর টিকা দিলেই যে করোনায় আক্রান্ত হবে না, এমনও নয়। ভাইরাসের
নতুন নতুন অনেক ধরনে টিকার কার্যকারিতাও কম। তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা পরীার সংখ্যা আরো
অনেক বাড়াতে হবে। কেউ সংক্রমিত হলে তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের
সবাইকে পরীার আওতায় আনতে হবে। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা আরো অনেক
বাড়াতে হবে। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে।
আমরা মনে
করি, করোনা প্রতিরোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা সঠিক। এখন এই
নির্দেশনাগুলোকে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিতে হবে। উচ্চ
ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনে লকডাউনসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে
হবে। টিকা প্রদান দ্রুততর করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার েেত্র মানুষকে
আরো সচেতন করতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার
সুযোগ আরো অনেক বাড়াতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মান নিশ্চিত
করার পাশাপাশি সেবামূল্য যৌক্তিক করতে হবে।