
দেশের স্বাস্থ্য
খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ একেবারেই নতুন নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী
বলয় তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগও আছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি মেডিক্যাল
কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য
বরাদ্দ সরকারি বাজেটের একটি বড় অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যাশিত
স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত বছরের শুরুতেই দুর্নীতি
দমন কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ,
পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি বেশি হয়। তখন এসব দুর্নীতি
প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করে সংস্থাটি। তখন স্বাস্থ্য খাতের
দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন উঠেছিল।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
রোগীদের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনেক ধরনের ওষুধের মধ্যে কভিড
ডেডিকেটেড হাসপাতালে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন
মেরোপেনাম। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, সরকারি আটটি
হাসপাতালে এই ইঞ্জেকশন কেনা হয়েছে অনেক বেশি দামে। এমনকি সরকারি ওষুধ
প্রস্তুতকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠানও এই ইঞ্জেকশন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়েও
কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অডিট প্রতিবেদনের তথ্য
অনুসারে আরেক অস্বাভাবিক কা- করেছে ইডিসিএল। যে ওষুধ প্রাইভেট কম্পানি
বিক্রি করেছে ১৭০ বা ২৪০ টাকায়, সেই ওষুধ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি সরকারি
হাসপাতালের কাছেই বিক্রি করেছে ৭৯৩ টাকা ২৮ পয়সা দরে। প্রতিবেদনে উল্লেখ
করা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিজেরা ওষুধ কিনলে সেখানে দাম কম পড়েছে;
কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল ঠিকাদারের মাধ্যমে ওষুধটি কিনেছে কয়েক গুণ বেশি
দামে। আর এই সুযোগে অপ্রয়োজনেও বেশি কিনে ওষুধ মজুদ করার মাধ্যমে বিশেষ
লাভবান হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
করোনাকালে জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল
কেলেঙ্কারির ঘটনা স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির বিষয়টি সবার
সামনে নিয়ে আসে। পর্যবেক মহলের ধারণা, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের
গভীরে যাওয়াটাই মূল চ্যালেঞ্জ। সিন্ডিকেট বা স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব
থেকে স্বাস্থ্য খাতকে মুক্ত করা আদৌ সম্ভব কি না—পর্যবেকদের অনেকেরই এ নিয়ে
প্রশ্ন আছে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,
এটাই আমাদের প্রত্যাশা।