
বাজার
অস্থির। যে যেভাবে পারে দাম বাড়িয়ে চলেছে। চাল, ডাল, তেল, আদা, রসুন,
পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, মাছ, মাংস-সব কিছুরই দাম ক্রমাগত বাড়ছে। দাম বাড়াতে
সংশ্লিষ্টদের অজুহাতেরও কোনো অভাব হয় না।
করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ডলারের দাম কমে
যাওয়া-আরো কত কী! এভাবে রাতারাতি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেও বাড়ে না কেবল
মানুষের দাম তথা বেতন বা মজুরি। ফলে সংসার চালাতে কিংবা জীবন বাঁচাতে বহু
মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের দুশ্চিন্তার পারদ কেবলই ঊর্ধ্বগামী
হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণের মূল্যবৃদ্ধির এই প্রতিযোগিতায় এবার যোগ
হয়েছে পাস্তুরিত তরল দুধ। এই দুধ উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে
লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে গত মে মাসেও তারা আরেক
দফা দাম বাড়িয়েছিল।
দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মাছ-মাংস প্রায়
ছেড়েই দিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে ডিমের বাজারে ঘটে যাওয়া তেলেসমাতির কারণে
ডিমকেও এখন তারা দূরের বস্তু মনে করছে। সন্তানের শারীরিক-মানসিক বৃদ্ধির
কথা বিবেচনা করে যারা মাঝেমধ্যে এক লিটার তরল দুধ কিনত, তারা হয়তো এবার সেই
এক-আধ লিটার দুধ কেনাও বাদ দেবে। ফলে বাজারে ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের কণ্ঠ থেকে
বেরিয়ে আসছে—এসবের শেষ কোথায়? দেশে আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বলে কিছু আছে কি?
এবার কি আমাদের না খেয়ে মরতে হবে? মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
সরকারের যেসব সংস্থা বাজারে পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার কাজে নিয়োজিত
তারা কী করছে?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পাস্তুরিত তরল
দুধ উৎপাদনকারী যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তাদের উৎপাদিত তরল দুধের
দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তারা খামারিদের কাছ থেকে দুধ এখন পর্যন্ত আগের দামেই
কিনছে। তাহলে কেন তাদের উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধের দাম বাড়াতে হলো? এটা ঠিক,
পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু তা কি লিটারে কয়েক পয়সার বেশি হবে? কেউ
কেউ বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে? তাহলে তো দুধের দাম খামার পর্যায়ে
বাড়বে। কিন্তু তা তো বাড়েনি। পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর
মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কি কোনো যৌক্তিকতা থাকবে না? তাদের পণ্যের মূল্য
নির্ধারণে কি কোনো নিয়ম-নীতি অনুসৃত হবে না? এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ
কোথায় যাবে?
দাম যৌক্তিকীকরণের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ
অধিদপ্তর বা সরকারের আরো যেসব সংস্থা কাজ করে, তাদের এসব ক্ষেত্রে আরো বেশি
তৎপরতা প্রয়োজন। কোন যুক্তিতে পাস্তুরিত তরল দুধের দাম লিটারে ১০ টাকা
বাড়ানো হলো তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং সেই যুক্তি ভোক্তাদের জানাতে হবে।
কাউকে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেওয়া যাবে না।