
আগামী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন
নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন যে আবেদনপত্র আহ্বান করেছে, তাকে আমরা ইতিবাচক
হিসেবে দেখতে চাই। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়:
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০(ক)-এর অধীন নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক
এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮-এ উল্লিখিত শর্তাবলি পূরণে সক্ষম
রাজনৈতিক দলসমূহকে বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা
মোতাবেক আবেদন করার আহ্বান করা হয়েছে।
বর্তমানে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক
দলের বাইরেও অনেক দল আছে, যারা রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং
আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। নিবন্ধন না থাকায় অতীতে এসব দলের
নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নিবন্ধনে
ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলো আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে পারবে। সময়ের
বিবেচনায় এটিকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। আবেদনকারীরা তিন মাস সময় পাবেন।
নির্বাচন কমিশনের শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার পর দলীয় প্রতীক নিয়ে
একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে একটি আসন লাভের প্রামাণিক দলিল অথবা মোট
ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার প্রত্যয়নপত্র। পুরোনো দলের জন্য এসব শর্ত পালন
করা কঠিন হবে না।
কিন্তু নতুন দল, যারা ইতিপূর্বে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন
করার সুযোগ পায়নি, তাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কার্যকর দপ্তর, কমপক্ষে
১০০টি উপজেলায় দপ্তর থাকার শর্ত কতটা বাস্তবসম্মত, তা-ও ভেবে দেখার বিষয়।
নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য ‘কাজির গরু কাগজে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থা কাম্য
নয় কোনোভাবে। আবার এমন কোনো দল থাকতে পারে, যাদের সারা দেশে সাংগঠনিক
তৎপরতা নেই; কিন্তু বিশেষ এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ়। নির্বাচন কমিশনের
শর্ত অনুযায়ী এসব দল নিবন্ধনের যোগ্য হবে না।
এ ছাড়া কমিশন নিবন্ধনের
জন্য দলের গঠনতন্ত্র, (খ) দলের নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), (গ) দলের
বিধিমালা (যদি থাকে), (ঘ) দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, (ঙ) দলের কেন্দ্রীয়
নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, (চ)
দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি দাখিল করার যে শর্ত
দিয়েছে, তা-ও সমর্থনযোগ্য। দলের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতার জন্য এটি প্রয়োজন।
বিস্ময়ের
বিষয় হলো, নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত শর্তাবলি পূরণ করার পরও বিগত নূরুল হুদা
কমিশন অনেক রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়নি। এ নিয়ে তারা উচ্চ আদালতের
সুস্পষ্ট নির্দেশনাও মানেনি। অর্থাৎ গায়ের জোরে অনেক দলের নিবন্ধন ঠেকিয়ে
রাখা হয়েছিল।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। যদি সেটি তাদের মনের কথা হয়, নতুন রাজনৈতিক
দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পক্ষপাত কিংবা জবরদস্তি করা যাবে না। যেসব দল
নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করবে, তাদের সবাইকে বর্তমান কমিশন নিবন্ধন
দেবে, এটাই প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের উদ্দেশ্য নির্বাচন
প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, সহজ ও জবাবদিহিমূলক করা। তাই নিবন্ধনের নামে কোনো
রাজনৈতিক দলকে অহেতুক হয়রানি, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া
কিংবা রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।