
জুলফিকার নিউটন ||
পূর্বে প্রকাশের পর
২০
শৈশব পার হয়ে মানুষ যখন বয়ঃসন্ধিতে পড়ে তখন সে একটি জটিল সময়ের মধ্যে উপস্থিত হয়। সে তখন আর শৈশবের বালক নয়, সে তখন যৌবনময় পুরুষও নয়, সে তখন একটা বিরাট সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। সংঘর্ষটা হচ্ছে চৈতন্যের। এক দিকে শৈশবের দাবি ও অন্যদিকে যৌবনের প্রমত্ত আহ্বান, এ উভয়ের দ্বন্দ্বে সে বিভ্রান্ত হয়। বলা যেতে পারে এ সময়টি অদ্ভুত এক সংকটের সময়, এমন এক আনন্দের সময় যে আনন্দকে ব্যাখ্যা করা যায় না। আবার এটা একটা বিভ্রান্তিরও সময়। এ সময় একটি বালক পৃথিবীর মধ্যে জেগে ওঠে। শৈশবকালে আমরা আমাদের সাংসারিক বৃত্তের মধ্যে জেগে উঠি কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে জেগে উঠি পৃথিবীর মধ্যে। এ সময় নানারকম ইচ্ছা জাগে, নানারকম কল্পনা জাগে। নানাভাবে নতুন প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে ব্যবহার করতে ইচ্ছা হয়। পাশের বাড়ির মেয়েটিকে একটু নতুন করে দেখতে ইচ্ছা হয় এবং তার মধ্যে একটি নতুন শরীরের আকর্ষণ সে অনুভব করে। অনেকগুলো ব্যাপারে তার জন্য পিতামাতা আর সিদ্ধান্ত নেন না। সে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয়। স্কুল থেকে কলেজে যখন এলাম তখন কলেজের কি পাঠক্রম গ্রহণ করবো, সে সিদ্ধান্ত আমার ছিল। বাবা-মা কিংবা আত্মীয়স্বজন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করতে বলেছিলেন।
আমি দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ফার্স্ট বয় এবং ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাতটি লেটারসহ স্টারমার্ক পেয়েছিলাম। আমাদের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম ফজলুল হোসেন আমাদেরকে পড়াতেন ফাংশনাল ইংলিশ প্রথম পত্র। নতুন প্রকাশিত ফাংশনাল ইংলিশের কোন একটি বই হাতে ক্লাসে ঢুকতেন। দেখতে দীর্ঘ দেহী পড়নে টেট্টনের সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট, সাজানো মাথার চুল, পায়ে পলিশড জুতা এবং সবসময় ক্লিন সেভ থাকতে পছন্দ করতেন। এমন স্মার্ট মেধাবী প্রধান শিক্ষক সেই সময় সমগ্র বাংলাদেশে দ্বিতীয় আরেকজন ছিল বলে আমার মনে হয় না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধুপন্থী ছিলেন। তাঁর বড় ভাই আওয়ামী লীগ মনোনীত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত ক্যাপ্টেন (অবঃ) সুজাত আলী কর্তৃক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটোনা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে অত্র অঞ্চলের ছাত্র ও যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের প্রেরণা যোগাতেন। পরবর্তীতে ভারত থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা যারা দেশের অভ্যন্তরে আসতেন তাঁদেরকে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদানে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন।
ফর্সা চেহারা, শুদ্ধভাষী, দূরদৃষ্টি সম্পর্ণ, সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবী পরিহিত প্রিয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ভিরাল্লার আব্দুল মান্নান স্যারের কথা প্রায়শই স্মরণ করি। আমার মনে হয় শিক্ষকতায় না এলে হয়ত বড় মাপের সিএসপি অফিসার হতে পারতেন। তিনি আমাদের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পড়াতেন। শিক্ষা জীবনে কাউকে তিনি কখনো বেত্রাঘাত করেন নি। আপাতমস্তক একজন আদর্শবান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছাত্রদের শিখিয়েছেন, ব্যক্তিকে শিখিয়েছেন, সমাজকে শিখিয়েছেন কিভাবে সত্যের মধ্যে, কল্যাণের মধ্যে, সাহসের মধ্যে জীবন-যাপন করা যায়। তাঁর কাছে আমাদের ঋণের অন্ত নেই। আব্দুল মান্নান মাষ্টারের স্নিগ্ধ সৌজন্য দেশে-বিদেশে কম শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের ভিতর দেখেছি। তাঁর রূপ ছিল অসামান্য। কিন্তু তাঁর চাইতে আকর্ষনীয় তাঁর মনের প্রসন্নতা ও আভিজাত্য। তাঁর আচরণ ছিল সর্বদাই প্রফুল্ল সুরসিক সদায়তা। অল্প পরিচিত, অ-পরিচিত জনও তাঁর সান্নিধ্যে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। স্মিত হাসি এবং উচ্চরোল হাসি দুয়েতেই তাঁর মনের স্বভাবসিদ্ধ সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলা পড়াতেন অলিন্দ্রমোহন চক্রবর্তী। যিনি সিলেবাসের খুব একটা থাকতে পারতেন না। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ এমনকি মধুসুদন দত্তের কাব্যজগতের অলিতে-গলিতে আমাদেরকে বেশিরভাগ আবদ্ধ করে রাখতেন। একজন কবি এবং তাঁর কবিতা দুটি ভিন্ন বস্তু। কবির সাংসারিক জীবন আছে, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এবং বিভিন্ন কর্মের উদ্যাতনা আছে। কবি এবং কবিতা কখনও এক হয় বটে, যেমন মাইকেল মধুসূদনের ক্ষেত্রে হয়েছিল। কিন্তু সাধারণত কবিতায় যে অভিজ্ঞতা ধরা পড়ে একজন কবির জীবনে অনুরূপ অভিজ্ঞতা নাও থাকতে পারে। তবে যেহেতু শিল্প একটি অভিজ্ঞতার প্রকাশ সেই অর্থে কবিতাও অভিজ্ঞতার অন্তঃসার। আমরা জানি জীবন যেরকমই হোক না কেন, তা একটি অভিজ্ঞতার দ্যোতনা। এবং অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন সেটি একটি সময়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত।
তার একটি সময়কাল আছে এবং বিভিন্ন অধ্যায়। অভিজ্ঞতা খুব সরল এবং সাধারণ হতে পারে, যেমন একটি শিশুর অভিজ্ঞতা এবং একটি অনিশ্চিত চৈতন্যের মানুষের অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা আবার জটিলও হতে পারে, যেমন একজন বিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা অথবা কবির অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞানী অথবা কবি একটি সময়ের মধ্যে বাস করেন, সে সময়কালটি বিচার করা চলে না অথবা বিবেচনার মধ্যে গণ্য করা যায় না। শৃংখলাবদ্ধ জীবনের দায়ভাগ আছে অথবা কর্তব্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্যোতি আছে। মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে জীবনের যে বিকাশ সে বিকাশকে আমরা কর্মব্যস্ততার মধ্যে নিরীক্ষণ করতে পারি অথবা মানসিক চৈতন্যের মধ্যে অনুভব করতে পারি। মানুষের চেতনাগুলো কয়েকটি বিশিষ্টতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মানুষ সচেতনভাবে স্পর্শ করে এবং স্পর্শের অনুভুতি তার অনুসঙ্গে জাগ্রত হয়। সে শ্রবণ করে এবং শ্রবণের অনুভুতি সে তার অভিপ্রায়ের মধ্যে ধারণ করেন। দূরাগত শব্দ অথবা নিকটের শব্দ, কঠোর শব্দ অথবা নিকটের শব্দ, কঠোর অথবা স্তিমিত শব্দ, ঝংকৃত শব্দ অথবা অলস শব্দ সবই তার শ্রুতিতে ধরা পড়ে। আবার মানুষ বিভিন্ন বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করে এবং সে সমস্ত ঘ্রাণের তারতম্য বিচার করে। কখনও কোন বিলুপ্ত, ঘ্রাণ তার স্মৃতিতে রক্ষিত থাকে এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে সে তাকে সংরক্ষণ করে। এই যে অনুভুতি এটা সকলে জন্য নয়, যারা সাধারণ লোক এবং নিরঙ্কুশ নিশ্চিন্ততার মধ্যে বাস করি তারা এই ঘ্রাণের কোন পার্থক্য বুঝতে পারে না।
সংক্ষেপে বলতে গেলে একজন মানুষের স্পর্শের অনুভুতি আছে, ঘ্রাণের অনুভুতি অনুভুতিআছে এবং মানসিক চেতনালব্ধ বিবেচনার অনুভুতি আছে। কবিতা এবং জীবন প্রধানত ভিন্ন বস্তু, কিন্তু তাদের মধ্যে যোগসূত্র আছে, একে অন্যের উপর নির্ভরতা আছে, এবং প্রভাব আছে একটি ঘটনার কারণ এবং তার সম্পর্কিত প্রতিক্রিয়ার উপর। এগুলো কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না, যিনি কবি তিনি শব্দেরও শিল্পী। শিল্পীর বিশ্রাম দরকার এবং শান্তির নিশ্চিন্ত দরকার। তিনি যখন লেখেন তখন পাঠকের কল্পনা হয়তো করেন না, কিন্তু পাঠক না হলে কবিতার গ্রহণযোগ্যতা হয় না। পাঠক এবং কবির মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে সে সম্পর্ক হচ্ছে সাহিত্যগত সম্পর্ক যাকে ইংরেজিতে বলে লিটাবারী লাইফ। একজন কবি বারবার সে জীবনের মন্ডপে ফিরে আসেন। এই জীবনের মধ্যে বিভিন্ন ঘূর্ণাবর্ত আছে। সে সমস্ত ঘূর্ণাবর্ত অতিক্রম করে উজ্জ্বল আলোতে তাকে প্রকাশিত হতে হয়। অন্যথায় অন্ধকারে সে আচ্ছন্ন থাকে। এ সমস্ত শিল্পীদের মত কবিরাও এক ধরনের শ্রষ্টা। শিল্পী মাতিস একবার শিল্প সম্পর্কে একটি উক্তি করেছিল যা শিল্প জগতে একটি প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে, একজন শিল্পী অনুভুতিকে এবং চিন্তাকে অথবা অস্তিরতাকে একটি অস্তিত্বের মধ্যে নিয়ে আসেন। হারবার্ট রীড একে ব্যাখ্যা করেছেন : ঃড় নৎরহম রহঃড় নবরহম বলে। অর্থাৎ একটি সত্যকে অথবা অনুসন্ধানকে একটি অস্তিত্বের মধ্যে আনা। যখন একটি অস্তিত্বের মধ্যে শিল্প চলে আসে তখনই তা রূপ লাভ করে। কবিতাও তেমনি একটি অভিজ্ঞতা বিশেষ সচলতায় এবং বিশেষ মাধুর্যে যখন রূপলাভ করে তখন তা কবিতা হয়।
ভিক্টোরিয়া কলেজের মিসেস লায়লা নূর আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। তিনি প্রথম দিন ক্লাসে বলেছিলেন, তোমরা এখন স্বাধীন যুবক, স্কুলের দ্বিধাগ্রস্ত বালক নও। এখন তোমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে জীবনে কি করবে এবং কোন পথে চলবে। মিসেস লায়লা নূরের এ কথাটি আমার মনে দাগ কেটেছিল।
এ বয়সে পিতামাতার সঙ্গে বিরোধ বাধতে পারে। স্কুল জীবনে একটি ছাত্র তার পিতামাতার নির্দেশেই চলে এবং সে বড় হয়। কিন্তু যখনই সে কলেজে আসে তখনই পিতামাতার জন্য সে সমস্যা হয়ে ওঠে। সে নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করতে চায়, কলেজের স্বাধীন জীবন তাকে নতুন পথের আগন্তুক করে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা দেখা দেয় নি। আমার বাবা-মা উভয়েই আমার চলাফেরায় এবং পাঠক্রমগত সিদ্ধান্তে আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এর ফলে আমার স্বাধীন আচরণের মধ্যে আমি নিজেই শাসন প্রবর্তন করেছিলাম। অর্থাৎ কোনো কিছু করতে যাওয়ার পূর্বে অথবা কোথাও যাওয়ার পূর্বে মাকে জিজ্ঞেস করে নিতাম। মার বোধহয় বিশ্বাস ছিল যে আমি ভুল পথে যাবো না। তাই কখনো অনুমতি দিতে দ্বিধা করেন নি। কোন নতুন যৌবনকেও আমি সাহিত্যের তাৎপর্যের মধ্যে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করেছিলাম। এ সময় একটা উপন্যাস আমি পড়েছিলাম অচিন রাগিনী’ নামে। একটি বালকের ক্রমশ বড় হওয়ার কথা আছে। সে কাব্যের মধ্য দিয়ে নিজের যৌবনের চিন্তাকে আবিষ্কার করবার চেষ্টা করেছিলো। উপন্যাসের নায়কের নাম অরুণ। সে তার কলেজ জীবনের প্রথম দিনটিকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা করবার ইচ্ছায় নবোদিত সূর্যকে প্রণাম করেছিলো। সেদিন ছিলো বর্ষার প্রভাত। সারারাত বৃষ্টি হয়ে চারদিক সজল স্নিগ্ধ মনে হচ্ছিলো। তালপুকুরের ওপারে নারকেল শাখার আড়ালে সূর্যোদয় হয়েছিলো। যেন নিকষ মনির পেয়ালা থেকে গলিত স্বর্ণস্রোত চারদিকে উপচিয়ে পড়ছিলো। অরুণ সূর্যের এই দীপ্তি দেখে গভীর আনন্দ অনুভব করেছিলো। আমিও সাহিত্যের মধ্যে তখন যৌবনের স্বাদ ও আনন্দকে গ্রহণ করেছিলাম।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বাংলা পড়াতেন কাজী নুরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথের ‘সোনারতরী’ আমাদের পাঠ্য ছিল। কাজী নুরুল ইসলাম স্যার সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে ক্লাসে ঢুকেই অন্যদের মতো রোলকল করতেন না। রোলকল করতেন ক্লাসের শেষে। তার পড়াবার ধরনটা ছিল একটু নতুন রকমের। রবীন্দ্রনাথের যে কবিতা পড়াবেন সেটা নিজেই আবৃত্তি করতেন। আবৃত্তি শেষ হলে টেবিলের উপর বই উপুড় করে রেখে হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলতেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার কি ব্যাখ্যা হয়? মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে হয়। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি না করলে এ কবি তার অর্থ খুজে পাবে না। কবিতায় শব্দের মধ্যে তাৎপর্য যেভাবে সঞ্চারিত রয়েছে তা উচ্চারণের। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে অনুভব করতে হবে। অবশ্য এরপর তিনি কবিতা ব্যাখ্যা করতেন। আমরা কাজী নুরুল ইসলামের এই ভঙ্গিটা পছন্দ করতাম।
কাজী নুরুল ইসলাম ছিলেন আনন্দিত চৈতন্যের লোক। তত্ত্ব জিজ্ঞাসু হয়েও সে তত্ত্বকে আনন্দের উপলব্ধি হিসাবে প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ধর্মের মানবীয় দিক উদঘাটন করার চেষ্টা করতেন। একটি হাদিসের কথা প্রায়ই তিনি আমাদের বলতেন। আরব দেশে তখন ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করার রীতি প্রচলিত হয়। সে সময় একজন ব্যভিচারিণী রমণী রসূলের কাছে এসে বলে, হে রসূলে খোদা, আমি মহাপাপ করেছি আমি ব্যভিচারিণী, আমাকে শাস্তি দিন। রসূল এ কথা শুনে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দিলেন। মেয়েটি সেদিকেও গিয়ে একই কথা রসূলের কাছে নিবেদন করলো, রসূল তখন বললেন, তোমার সন্তানের জন্ম পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করো, তারপর এসো, মেয়েটি বৎসরান্তে নবজাত সন্তান নিয়ে রসুলের কাছে এলো এবং আবার সে শান্তি কামনা করলো। রসূল আবার তাকে বললেন, তুমি ফিরে যাও। তোমার সন্তান যখন দুগ্ধপান ছেড়ে দেবে তখন এসো। মেয়েটি কয়েক বছর পর আবার এলো। তখন রসূল প্রস্তর নিক্ষেপের সাহায্যে তাকে হত্যা করতে নির্দেশ দিলেন। মৃত্যুর পর তার জানাজা নামাজ পড়তে তিনি এগিয়ে গেলেন। একজন সাহাবী তখন বললো “হে রাসূল, এ পাপীর জানাজায় আপনি কি করে অংশ নেন? তিনি উত্তরে বললেন, “এর মতো চরমতম শুদ্ধি কারো ঘটেনি, এর মতো তওবা কেউ করে নি। হাদিসের এ উপাখ্যান বলে কাজি নুরুল ইসলাম মন্তব্য করতেন, মানবতাই হচ্ছে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। আমাদের রসূল ছিলেন এ মানবতার বিশুদ্ধতম প্রতিনিধি।
চতুর্দিকে যখন অন্ধকার তখন পায়ের কাছে কি ফুল ফুটে রয়েছে তা শুধু গন্ধ দিয়েই অনুভব করা যায়। চোখে কিছুই পড়ে না। কিন্তু সুগন্ধ একটি স্বভাব এবং জাতির বার্তাবহ হয়। এ ভাবে কিছু না দেখা গেলেও অনুভব করেই আমরা সত্যকে পাই। কোন ফুল আমার পায়ের কাছে ফুটেছে এদিক ওদিক ঝােপে কি সমস্ত ফুল ফুটে রয়েছে সেগুলো ফুলের গন্ধের সাহায্যেই আমরা অনুভব করি। দেখার চাইতে অনুভবের সাহায্যে একটি বস্তুকে জানা অনেক বেশি গভীর এবং তাৎপর্যবহ।