
বাংলাদেশ
থেকে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে বহু তরুণের সেখানে আটক হওয়া, সমুদ্র
পাড়ি দিতে গিয়ে উপকূলে ধরা পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে
যাঁরা সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ভাগ্যোন্নয়নে বিদেশে গিয়ে দালাল চক্রের
হাতে জিম্মি হন, তাঁদের ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দালাল চক্র
মুক্তিপণ আদায়ের জন্য এই হতভাগ্য মানুষগুলোর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
ভুক্তভোগী
পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দু-তিন দিন ধরে চার পরিবারের লোকজনের কাছে
অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন আসছে। তাঁরা সাড়ে আট লাখ টাকা করে দেওয়ার
জন্য বলছেন। তাঁরা বড়জোর এক মিনিট কথা বলেন। তাঁরা লিবিয়াতেই আছেন। ফোন
পাওয়ার পর থেকে তাঁদের আতঙ্কে দিন কাটছে।
কেবল লিবিয়া হয়ে ইউরোপ
গমনেইচ্ছুক তরুণেরাই যে প্রতারণা, জালিয়াতির শিকার হচ্ছেন, তা-ই নয়।
মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার নামেও দালাল চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। এই চক্র মালয়েশিয়াগামী তরুণদের সমুদ্রপথে যাওয়ার
নাম করে ট্রলারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নামিয়ে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে।
ঘাটে ঘাটে এই চক্রের লোক থাকেন, যাঁরা পার করে দেন; কিন্তু এই তরুণেরা
কখনোই গন্তব্যে যেতে পারেন না। সম্প্রতি জুয়েল নামের এক তরুণকে সিঙ্গাপুরে
নিয়ে যাওয়ার নাম করে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে তুলে দেয় দালাল চক্র। তিনি বিমান
থেকে নেমে দেখেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর।
গণমাধ্যমের খবর থেকে আরও জানা
যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন ঘাট থেকে রোহিঙ্গাদের তুলে
তিন থেকে চার দিন সাগরপথে ঘুরিয়ে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুল পথে। অভিযোগ আছে,
শক্তিশালী দুটি সিন্ডিকেট ছয় ভাগে বিভক্ত হয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর
নাম করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাতের আঁধারে
বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে তাঁদের ট্রলারে তুলে নিয়ে কয়েক দিন সাগরে
ঘুরিয়ে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেন্ট মার্টিনসহ আশপাশের দ্বীপে। সবচেয়ে ভয়ংকর
তথ্য হচ্ছে, অনেককে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী পাহাড় ও জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসছে
তারা।মানব পাচার চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটকের পর বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর
এসব তথ্য। সাগরপথে বিদেশে পাঠানোর নামে মানুষের কাছ থেকে লাখ টাকার বান্ডিল
বুঝে নিচ্ছেন মানব পাচার চক্রের গডফাদাররা। মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে
কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন ঘাট থেকে তোলার পর তিন থেকে চার
দিন সাগরপথে ঘুরিয়ে তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন
দ্বীপে। অথচ দুই কিস্তিতে সবার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে সর্বনিম্ন দুই থেকে
ছয় লাখ টাকা।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে
র্যাব চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বাঁশখালী এবং পেকুয়া এলাকায় অভিযান
চালিয়ে চার গডফাদারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে সরকার লিবিয়াসহ
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বহু বাংলাদেশি আটকা পড়েন। বিদেশে আটকা এসব
বাংলাদেশিকে উদ্ধার করাই যথেষ্ট নয়। জরুরি হলো, যে দালাল চক্র মানব পাচারের
সঙ্গে যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া। এ বিষয়ে সরকারের
সংস্থাগুলো কী করছে, কতজন পাচারকারীকে তারা শাস্তি দিতে পেরেছে, সেসবই
জানতে চায় দেশবাসী।