বাংলাদেশে
করোনার সংক্রমণ যখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে এবং মৃত্যুশূন্য দিনও পার করেছে,
তখনই কয়েকটি দেশে রোগটির নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণের খবর নিঃসন্দেহে আমাদের
উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বতসোয়ানায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন
শনাক্ত হওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুন এই ধরন
হলো বি.১. ১.৫২৯ সার্স-কভ-২।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন ধরনের সংক্রমণের
ক্ষমতা ডেলটার চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি। ইতিপূর্বে নেওয়া টিকা ওমিক্রন প্রতিরোধে
কার্যকর হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। শুক্রবার ওমিক্রনের ঝুঁকি বিষয়ে
আলোচনা করতে জেনেভায় জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি মনে
করে, করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীদেরও আবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা
আছে। এ জন্য দেশগুলোকে নজরদারি বাড়ানো, ধরন শনাক্ত করার জন্য জিনোম
সিকোয়েন্স কার্যক্রম চালু করা, শনাক্ত হলে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে,
সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভাইরাসটি সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে
তারা।
করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ পদক্ষেপ নিয়েছে।
যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও জাপান কোয়ারেন্টিন জোরদারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও
আশপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের
জোটভুক্ত সব দেশে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের
প্রস্তাব করেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা
মোকাবিলায় ঝুঁকিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বতসোয়ানা ও হংকংয়েও করোনার নতুন ধরন
পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী? স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
বলেছেন, ‘সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট নিয়ে আমরা অবহিত হয়েছি। এই ভেরিয়েন্ট
খুবই অ্যাগ্রেসিভ। এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ এখনই স্থগিত করা
হচ্ছে।’ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ
বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের ফ্লাইট স্থগিত বা বন্ধ
করাই একমাত্র প্রতিকার নয়। কারণ, অন্য অনেক দেশেই এই ধরন পাওয়া যাচ্ছে এবং
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে যে খুব সময় লাগে না, সেটা আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখছি।
ইতিমধ্যে
দক্ষিণ আফ্রিকা ও বতসোয়ানা থেকে আরও অনেক দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে
কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করলেই করোনার নতুন ধরন ঠেকানো
যাবে না। নতুন ধরনের করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি অন্য দেশ থেকেও
বাংলাদেশে আসতে পারেন। অতএব, আমাদের প্রথম কর্তব্য হবে বিমানবন্দরসহ সব
প্রবেশপথে স্ক্রিনিং বাড়ানো, আগত ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন
নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, তাঁরা যেন দেশের ভেতরে কোনো
মানুষের সঙ্গে মেলামেশা না করতে পারেন। প্রবেশপথে শনাক্ত করতে না পারা ও
ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টিনের কারণেই ডেলটা ধরন দ্রুত দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে
সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশে টিকাদানের চিত্র হতাশাজনক। মাত্র
২০-২২ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা
ছিল ৮০ শতাংশ। এ অবস্থায় করোনার ধরন পরীক্ষা করতে দ্রুত জিনোম সিকোয়েন্সিং
নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে টিকার সংগ্রহ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে
চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে যে শৈথিল্য লক্ষ করা
যাচ্ছে, তা-ও দূর করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতার
পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে।