ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিলগেটসের প্রকাশনা
Published : Monday, 8 March, 2021 at 12:00 AM
জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিলগেটসের প্রকাশনাঅধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ।।
কিভাবে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানো যায় তা নিয়ে বিলগেটস “হাউ টু অ্যাভয়েড এ কাইমেট ডিজাষ্টার” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিগত ১৫ বৎসর যাবত তিনি জ্বালানি ও জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ে সম্যক উপলব্ধি করেছেন। সৌর ও বায়ুশক্তি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন খরচ বর্তমানে অনেক কমেছে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে অনেক পন্থা গ্রহণে মানুষের আগ্রহও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ক্ষতিকর গ্যাসের নি:সরণ কমাতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বইটিতে অমুলক কথাবার্তা স্থান পায় নি। জলবায়ু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার লোকজনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে বলেই মনে হয়। জটিল একটি বিষয়কে তার উপস্থাপনা অনেকের জ্ঞানের বহরকে সমৃদ্ধ করবে। উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষের সকলের কৌতুহল বৃদ্ধি পাবে বলে আমার ধারনা। বিল গেটসের সংগঠন “ব্রেকথ্রু এনার্জি” পরিচ্ছন্ন জ্বালানী উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান সমূহে যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরু করেছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানীতে রূপান্তরের কাজ করতে সরকারি-বেসরকারি সকল খাতেই বিনিয়োগ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে তাঁর সংগঠন। এসব নিয়ে বইটিতে অনেক উৎসাহ ও ধারনা বাস্তবায়নে অনেকেই প্রচেষ্টা চালাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে সহায়তা করার একটি উদ্যোক্তা আহ্বানই হচ্ছে বইটির আসল মর্মবাণী।
গ্রীন হাউস গ্যাসের নি:সরণ শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা পূর্বেও যেমন প্রয়োজনীয় ছিল এখনও তা অত্যাবশ্যকীয়। নি:সরণের উৎস বন্ধ না করে শুধুমাত্র নি:সরণের মাত্রা কমিয়ে আনার বিষয়টি অসম্ভব। “হাউ টু অ্যাভয়েড এ কাইমেট ডিজাস্টার” পুস্তকে বিলগেটস বলেছেন বিগত কয়েক বছরে ৩টি বিষয়ে তিনি সুনিশ্চিত হয়েছেন-
(১)    জলবায়ু দুর্যোগ এড়াতে হবে। আমাদের গ্রিনহাউস গ্যাসের নি:সরণ শূণ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
(২)    উপকরণের মধ্যে সহজপ্রাপ্য বায়ুশক্তি ও সৌরশক্তি যা আছে তা দ্রুততার সাথে উদ্ভাবনী উপায়ে ব্যবহার করতে হবে।
(৩)    আমাদের যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন ছড়িয়ে দিতে হবে। যা আমাদের সম্মুখের বাকী পথ পাড়ি দিতে সহযোগিতা করবে।
বিলগেটস ২০০৬ সালের শেষের দিকে মাইক্রোসফটের দুই সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাঁরা জ্বালানী ও জলবায়ুর উপর কাজ করছিলেন যা ছিল অলাভজনক। সাক্ষাতে তাঁরা দুজন জলবায়ু বিজ্ঞানী নিয়ে আসেন। যাঁদের ঐ দু’বিষয়ে পা-িত্য ছিল। গ্রিনহাউস গ্যাসের নি:সরণের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য উপাত্ত তাঁরা চারজন বিলগেটসকে দেখান। বিল গেটস জানতেন গ্রিনহাউস গ্যাস তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। তিনি এ ধারনা পোষণ করতেন যে, চক্রাকারে আবর্তিত কিছু বিষয় বা উপায় উপকরণ রয়েছে। যা প্রাকৃতিকভাবে সত্যি সত্যিই জলবায়ু বিপর্যয় রোধ করতে সক্ষম। আর গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরণ যে কোন মাত্রায় অব্যাহত থাকলেও তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে- এটা মেনে নেয়া ছিল কঠিন ব্যাপার। বিভিন্ন সম্পূরক প্রশ্ন নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার ঐ দলের কাছে ফেরত গিয়েছেন। কার্যত সে চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। চরম দারিদ্রের মাঝে বসবাসকারী মানুষ যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তাদের অধিকতর জ্বালানী সুবিধা প্রদান করা বিশ্বের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এমন জ্বালানী সরবরাহ করা দরকার, যা আর কোন গ্রিনহাউস গ্যাসের নি:সরণ ঘটাবে না।









কাইমেট ডিজাস্টারের উপর বইটি লেখার কারণ সম্পর্কে বিল গেটস বলেছেন, তিনি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাই দেখতে পান নাই। এ সমস্যা সমাধানের সুযোগও দেখছিলেন। এটা কোন অবাস্তব আশাবাদ নয়। বড় কোন পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে দুটি আমাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। প্রথমত, আমাদের উচ্চাকাঙ্খা। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক আন্দোলন ধন্যবাদ পেতেই পারে। দ্বিতীয়ত, সমস্যাটা সমাধানে আমাদের বড় বড় লক্ষ্য রয়েছে। নিজেদের অবস্থান থেকে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতিশীল জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের সংখ্যা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে। আমাদের এখন তৃতীয় উপাদানটি প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে- লক্ষ্য অর্জনের সুদৃঢ় পরিকল্পনা। জলবায়ু পরিস্থিতি কল্যাণের স্বার্থে আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এখন প্রয়োজন বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা। যাতে ভূমিকা রাখতে হবে-পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিভাগসমূহ। বিল গেটসের বইয়ের শেষের দিকে একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব আছে। যা তিনি এসব বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পেয়েছেন। বইটির দশম ও একাদশ অধ্যায়ে সবার জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন যা আমরা সবাই নিতে পারি এবং যা বৈশ্বিক নি:সরণ শূন্যে নামিয়ে আসতে সহায়ক হবে। আপনি ক্ষমতাসীন নেতা, উদ্যোক্তা অথবা ভোটার- যে ই হোন না কেন, জলবায়ু দূর্যোগ এড়াতে আপনারও কিছু করার সুযোগ রয়েছে। শেষের দিকে তিনি বলেছেন- আর কিছু বলার নাই। আসুন কাজ শুরু করা যাক- এ আবেদনটিই এ প্রস্তাবের উত্তম উপাদান বলা যায়।
বইটিতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া আছে। যাদের মাধ্যমে আমরা জলবায়ু দুর্যোগ এড়াতে নিজেদের সেরা সুযোগ দিতে পারি। প্রথম অধ্যায়ে ব্যাখ্যায়িত আছে কেন গ্রীনহাউস গ্যাসের নি:সরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কিভাবে বিশ্বজুড়ে সব জনগোষ্ঠির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে জানা অজানা বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে। দু:সংবাদ হচ্ছে- গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরণ শূন্যে নামিয়ে আনার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কারণ প্রতিটি পরিকল্পনার সূচনা ঘটে চলার পথে কি কি বাধা অতিক্রম করতে হবে, সেগুলো মূল্যায়নের মাধ্যমে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি আলোচনা করেছেন এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কি। তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি কিছু বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করেছেন যা সচরাচর শুনা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিটি আলোচনায় যে সকল প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় তিনি সেগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন এসকল প্রশ্ন অনেকবার তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে আটকে দিয়েছে। তাঁর বিশ্বাস আমাদের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে। সুসংবাদ হলো-আমরা গ্রিন হাউস গ্যাসের নি:সরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে পারি। চতুর্থ থেকে নবম অধ্যায় পর্যন্ত তিনি তা আলোচনা করেছেন। আজকের প্রযুক্তি কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে এবং কোথায় আমাদের নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন। বইটির সবচেয়ে বড় অংশ হবে এটি কারণ এখানে অনেক কিছুই আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের কাছে কিছু সমাধান রয়েছে। যা এখনি বড় পরিসরে প্রয়োগ প্রয়োজন। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে আমাদের অনেক নতুন উদ্ভাবনেরও প্রয়োজন। যা ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বজুড়ে।

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল