বন্যা কবলিত কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ও অন্যা কারণে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা গত তিনদিনে চার শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবারওকুমিল্লায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যেবুড়িচং উপজেলার বাকশীমুল ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে পানির স্রোতে ভেসে আবুল হাসেম (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। এদিন সকালে লাকসামের আউশপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে স্ট্রোক জনিত কারণে মাকসুদা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।আর সব মিলিয়ে বন্যার শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত কুমিল্লায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকার বৃদ্ধ আবুল হাসেম মঙ্গলবার সকালে বাড়ির অদূরে রেলপথ সংলগ্ন খালে মাছ ধরতে গিয়ে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন রেজা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।একইদিন সকালে কুমিল্লার লাকসামের আউশপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে স্ট্রোক জনিত কারণে মাকসুদা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি পার্শ্ববর্তী এলাকার মনিরুল ইসলামের স্ত্রী।
এর আগের দিন সোমবার (২৬ আগস্ট ) দুপুর থেকে রাতের মধ্যে জেলার বুড়িচং, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে ২ শিশুসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সকালে বুড়িচং উপজেলার পাশ্চিম সিংহ এবং দুুপুরে আড়াগ এলাকায় হাসিবুল (১০) ও ইব্রাহিম (৪) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়াও এ দিন পানিতে ডুবে যাওয়া এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের পশ্চিম সিংহ দক্ষিণ পাড়া ফকির বাড়ির আল-আমিনের পুত্র ইব্রাহিম (৪) সকাল ১১ দিকে বাড়ির পাশে পানিতে ডুবে মারা যায়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আব্বাস।
এদিকে বুড়িচং ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, সোমবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলা সদরের আড়াগ আনন্দপুর গ্রামের নুরুল আমিনের পুত্র হাসিবুল ইসলাম (১০) ও সোহাগ (১১) নামের দুই শিশু বাড়ির পাশে বানের পানিতে তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন দুই শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক হাসিবকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সোহাগকপ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে একই দিন বিকেলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সেরাজুল হক নামে এক ব্যক্তি বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি। মারা যাওয়া সেরাজুল উপজেলার গোরক মুড়া এলাকার বাসিন্দা।
মনোহরগঞ্জের মির্জাপুর এলাকায় পানিতে ডুবে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি মর্জিাপুর এলাকার দুলাল ময়িার প্রতবিন্ধী পুত্র। আমরা তার নাম জানতে পারিনি। সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরে রাতে তার মরদহে উদ্ধার করা হয়।
তার আগের দিন রবিবার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাঘাইরামপুর গ্রামে সড়ক ভেঙে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে মাদ্রাসায় পড়ুয়া দুই চাচাতো বোন নিহত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মুমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলো- উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের বাঘাইরামপুর গ্রামের মোক্তার হোসেনের মেয়ে আয়েশা আক্তার (১০) ও মনির হোসেনের মেয়ে সামিয়া আক্তার (১০)। একইদিন জেলার উপজেলায় ফরিদ মিয়া (৬০) এবং এরশাদ মিয়া (৭০) নামে ২ জনের মৃত্যু হয়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাহিদা আক্তার তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও কুমিল্লায় বন্যা শুরুর পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আরো চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।