বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৭ কার্তিক ১৪৩১
একদিন আলুটিলা অভিমুখে
মেহেরুন্নেছা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪, ১২:৫৬ এএম |

  একদিন আলুটিলা অভিমুখে
এবছর আষাঢ়ের প্রথম দিনেই আকাশ গর্জে উঠেছিল। মেঘপুঞ্জের বিহ্বলতা ভাবরসে সিক্ত করে দিল আমায়। হয়ে গেলাম কালিদাসের 'মেঘদূত'-এর সেই যক্ষপ্রিয়া। উথলে উঠলো কলম। করে ফেললাম 'বর্ষানন্দ' নামে একখানা কাব্য।

....ঐ শোনো ওই গুড়গুড় ধ্বনি
হরষে মাতিছে মন,
নামিবে এখন মেঘের খনি
জাগাতে প্রেমের লগন।

ভেজা ঘাস আর বকুল লয়ে
এলো কদম ফুটিবার বেলা,
শ্বেতবসনা আমি যুগযুগ ধরে
ভাসাই প্রেমের ভেলা।

ওগো সখা, তুমি দেবে সাড়া
ডাকিবে তোমার প্রেমের ঘোরে,
জুড়াবে আমার ব্যাকুল প্রাণ
ভিজিবো আমি তোমার তরে।

পরনে থাকিবে কলমি শাড়ি
দেখিবো দুচোখে চালতার ফুল,
খোঁপায় পরিবো বেগুনি দোপাটি
কানে লাগাবো টগরের দুল।

এসো সুদর্শন, এসো আরো কাছে,
দেখে যাও তোমার অলকানন্দাকে;
পঞ্চরূপে সাজিয়াছে সে যে
সঙ্গমে বাঁধতে স্বয়ম্ভু তোমাকে।....

এমনি এক বৃষ্টিবিধৌত ভোরে রওনা দিয়েছিলাম চেঙ্গী নদীর তীরে আলুটিলার পথে। পূর্ব নির্ধারিত হওয়ায় সে ভ্রমণ এড়ানো যায়নি। একদিনের জন্য আমরা কয়েকজন প্রফেসর মিলে বোটানি ডিপার্টমেন্টের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষাসফরে বেরিয়ে পড়লাম। কুমিল্লা থেকে বাসে যখন উঠে বসি, তখনো ভাবতে পারিনি এই ভ্রমণ এতটা গেঁথে রইবে মনে। বাস থেকে দেখছিলাম সবুজ সমতলে নেমে আসা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে অঝোর ধারার পতনও দীর্ঘ যাত্রায় ছন্দপতন ঘটাতে লাগলো। চট্টগ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে বারইয়ারহাট হয়ে রওনা হলাম খাগড়াছড়ির দিকে। পার্বত্যজেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আমাদের আরাধ্য আলুটিলা গুহা। একে আলুটিলা সুড়ঙ্গও বলে।

পাহাড়ি পথ। চালকের সতর্কতার কমতি নেই। তবুও ভয়! এই বুঝি ব্রেক ফেল করে বাস উল্টে গেলো পাশের গহীন খাতে। যে খাতে দৃষ্টি দিলে বুক হিম হয়ে আসে। সাথে সাথে চোখ বুঁজে হাতল চেপে ধরছি। মৃত্যুকে কি আমার মতো এতো ভয় পায় সকলে? মৃত্যুর পরে কি হবে আমার? জন্মের পূর্বে মানুষ যেমন অস্তিত্বহীন, মৃত্যুর পরেও কি তা! সত্যি বলতে কি আমার কাছে এই বেঁচে থাকা, শিল্প-সাহিত্যে বুঁদ হওয়া,  মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না, প্রেমে মগ্নতা, ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া, এসবই স্বর্গের অনুভূতি। যখন রোগাক্রান্ত হই, যখন মানুষের বিষাক্ত আচরণের খপ্পরে পড়ি, তখনই মনে হয় এটা নরক! এটা নরক!

তবুও আমার বিশ্বাস, মানুষের ক্ষুদ্র জ্ঞান মহাজ্ঞানের দিকে ধাবিত হয়। মানুষের ক্ষুদ্রতা বিশালতায় বিলীন হয়। মানুষের হাহাকার, অনুশোচনা, প্রশান্তি ; সবকিছু মিলিয়ে জীবনভর সে অদ্ভুত এক অস্থিরতায় লিপ্ত থাকে। তারপর একদিন মহাকালের গর্ভে সব বিসর্জন দিয়ে চির রহস্যময়তার পথে পাড়ি জমায়।

যাই হোক! বহু পাহাড়, বহু জনপদ আর বাজার পেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম রামগড় চা-বাগানে। ১৯১৭ সনে স্থাপিত এটি। তার মানে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের উত্তাপ পেয়েছে এই বাগান। দেখেছে সাতচল্লিশের দেশভাগ, দেখেছে পাক-হানাদার বাহিনীর লকলকে জিহবা, পেয়েছে একাত্তরে স্বাধীনতার সুখ।

পথে দেখেছি রাস্তার দুপাশের বাজারে থরে থরে আম, কলা, কাঁঠাল। পাহাড়ের ঢালে কিছু কাঁঠাল গাছও নিমিষের তরে চোখে পড়েছে। এগুলো সটান হয়ে থাকলেও ডালপালা কাঁঠালের ভারে ন্যুব্জ। সেই কাঁঠাল পেকে কোষগুলো খুলে খুলে পড়ছে। নিশ্চিত এগুলো বনের পশুপাখিদের রসালো আহার।

সাড়ে এগারোটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম রামগড় চা-বাগানের প্রধান ফটকে। তখনও চুটিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। লোকজন ছাতা মাথায় আসা-যাওয়া করছে। কিছু গরুর পালও ভিজে একাকার, চা-বাগানে ঢুকছে, আবার বের হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি হবে! আমাদের শিক্ষাসফর কি ভন্ডুল হয়ে যাবে! আমরা কি বাসে বসে থেকে বৃষ্টি কমার অপেক্ষায় থাকবো! নামবো কি নামবোনা, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে অবশেষে নেমেই পড়লাম সবাই । অবশ্যই ছাতা মাথায়। বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। বিষাদ ঘিরে রেখেছে ছাত্রছাত্রীদের। কেউ কেউ সাপ-খোপের কথা উঠতেই  নিজের চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো। আসলে সাম্প্রতিক দেশে নতুন করে চন্দ্রবোড়া সাপের উৎপাত বেড়েছে বলে সবাই এমন করছে। অভয় দিয়ে বললাম, চন্দ্রবোড়া এত উঁচুতে আসতে পারবেনা। এ সাপ ধানক্ষেতে বেশি থাকে। পদ্মার দুপাশের অববাহিকায় পাওয়া যায় এদের। একসময় আমাদের দেশে চন্দ্রবোড়া বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিলো। এখন নতুন করে উপদ্রব বেড়েছে। প্রাণীবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশের উষ্ণতা বাড়ার কারণে এই সাপের বিচরণ ও প্রজননের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। চন্দ্রবোড়া বর্তমানে রাসেল ভাইপার নামে পরিচিত। তবুও সাবধানের মার নেই। রাসেল ভাইপার না থাকলেও অন্য সাপ থাকতে পারে। সুতরাং সতর্ক থাকতেই হবে।

এতো ভয়ভীতি সত্ত্বেও আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছি, ছবি তুলেছি, সঙ্গীতে মজেছি, ভিডিও করেছি। তারপর মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য গেলাম খানিক দূরে গোধূলি রেস্টুরেন্টে। সেখানকার সৌন্দর্যও মনপ্রাণ ভরে উপভোগ করেছি। বৃষ্টি ততক্ষণে কমে এসেছে। তারপর ভাতঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বাসে উঠলাম। এবারের গন্তব্য আলুটিলা।

পার্বত্যজেলা খাগড়াছড়ির আলুটিলা পাহাড়ে ভয়ানক রহস্যঘেরা এক প্রাচীন গুহা আছে। স্থানীয়রা একে বলে 'মাতাই হাকড়' বা 'দেবতার গুহা'। এটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় কয়েক শ বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে এটির সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকে মনে করেন, পাহাড়ের ঝরনার কারণে সৃষ্ট ফাটল ধীরে ধীরে গুহায় পরিণত হয়েছে। এর ছাদে নাকি বাদুড় ঝুলে থাকে। ঢুকতে হলে মশাল নিয়ে ঢুকতে হয়। দুর্বলচিত্তের মানুষদের ঢোকা বারণ। গুহা এলাকার আদিনাম মহাজনপাড়া। জনশ্রুতি রয়েছে , প্রবীণ সেন ত্রিপুরা নামক এক ব্যক্তি ১৯২০ সালে মহাজনপাড়ার কার্বারি ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে প্রথম আলুটিলা গুহা আবিষ্কার করেন। ইতোমধ্যে গুগল ও ইউটিউবের কল্যাণে গুহা সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় জেনে নিয়েছি। একসময় আলুটিলা পাহাড়ে প্রচুর জংলি আলু হতো। ওখানকার একজন বললো, এখনও নাকি সেখানে আলু পাওয়া যায়। তবে পর্যটনের ছোঁয়ায় আলুটিলার প্রকৃতিতে কৃত্রিমতার যে বেষ্টনী তাতে করে আমার আলুটিলা পাহাড়ের জংলি আলু দেখার ফুরসত মেলেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে এখানকার মানুষ এই পাহাড়ের বনআলু খেয়ে বেঁচে ছিল। তখন থেকেই এর নাম  ‘আলুটিলা’।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে আট কিলোমিটার আগে আলুটিলার অবস্থান। এর আরেক নাম আরবারি পাহাড়। আমাদের বাস এসে যে তোরণের সামনে দাঁড়ালো সেটির আদল বৌদ্ধ স্থাপত্যের মতন। নেমে পড়লাম  সবাই বাস থেকে। বুঝতে পারলাম পর্যটন এই আলুটিলাকে কতটা ঢেলে সাজিয়েছে। হোকনা কৃত্রিমতা, কিন্তু নান্দনিকতায় যে আলুটিলা অসাধারণ! আরেকটা জিনিস ভেবে বিস্মিত হয়েছি। আমরা কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে তিন হাজার ফুট উপরে দাঁড়িয়ে আছি!

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আঁধার ঝেঁকে বসলে ভয়ও গলাচিপে ধরবে। তখন ভেস্তে যাবে আমাদের গুহা অভিযান। ছাত্রছাত্রীরা যে যার মতো ছড়িয়ে পড়লো। আমরা কয়েকজন চললাম গুহার দিকে। সিঁড়ি বেয়ে নামছি তো নামছি, যেন এর শেষ নেই। অবশেষে ২৬৬ টা সিঁড়ি পার হয়ে গুহার কাছে এসে দাঁড়ালাম। এটাই আলুটিলার রহস্যময় গুহা। যেন এক প্রাচীন দানব হা করে গিলে খেতে আসছে। চারপাশে ছোপ ছোপ আঁধার। ঢুকার পথটা বেশ এবড়োথেবড়ো, তার উপর পিচ্ছিল। গুহামুখে বনলতার সমাহারও ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে! ভেতরের কালো পাথরগুলো আরো কালো দেখাচ্ছে। গা ছমছমে ভাব! আমার গুহা অভিযানের ইচ্ছেটা ফিকে হতে শুরু করেছে! পরক্ষণেই শক্ত করলাম নিজেকে। ভগ্নমনোরথ হলে চলবেনা। গুহায় আমাকে ঢুকতেই হবে।

পরনে জিনস। ওড়নাটা কোমরে বেঁধে ফেললাম।  এখন আর মশাল নিয়ে কেউ যায়না। সবার হাতে টর্চ অথবা মোবাইল। আমাদেরও ভরসা মোবাইল। চলতে শুরু করলাম গুহা অভিমুখে। শক্ত পাথরগুলো মাড়িয়ে সত্যি ঢুকে গেলাম ভেতরে।   মারাত্মক বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছিল সবকিছু। কোথাও হাঁটু সমান পানি। আগেই জানতাম গুহার মেঝেতে প্রবহমান ঝরনার কথা।  উপর থেকে টিপটিপ পানি এসেও মাথায় পড়লো। সবমিলিয়ে এ এক দুরূহ অতিক্রম। প্রথমে অন্যের সাহায্য নিলেও পরে নিজে নিজেই পার হতে থাকি। কেবল উঁচু জায়গায় আসলে মোবাইলটা সম্মুখজনের কাছে দিয়ে হাত দিয়ে পাথর ধরে পার হয়ে গিয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। আতঙ্কিত যে হইনি তা বলবোনা। অশুভ সব চিন্তা এসে ভর করছিল। যদি ভূমিকম্প হতো তখন! যদি পাহাড়ি ঢলের জল গুহায় ঢুকে পড়তো। নাহ! এ হতেই পারেনা! আমাকে দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে। বহু সিনেমায় এমন আটকে থাকা মানুষদের করুণ পরিণতি দেখেছি। ভেবেছিলাম অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট হবে। কিন্তু তেমনটা অনুভব হয়নি আমাদের। হয়তো সে মুহূর্তে আমরা দুজন মাত্র মানুষ ছিলাম বলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়নি।

প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ গুহা পার হতে হতে গুহাবাসী প্রাচীন মানবদের কথা মনে পড়ছিল। কি লড়াই না ছিল তাদের জীবনে! আমরা সৌভাগ্যবান যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে জন্মগ্রহণ করেছি।

এরই মধ্যে গুহার শেষ মাথায় এসে পড়েছি। ওই তো আলো! এতোক্ষণ আলোর ছিটেফোঁটাও ছিলনা। বের হয়ে এলাম গুহা থেকে। সর্বনাশ! দুর্ভোগ যে পিছু ছাড়ছেনা! যে সিঁড়ি বেয়ে আলুটিলার উপরে যেতে হবে সেটার নাগাল পেতে আরো দ্বিগুণ কসরত করতে হবে। সুড়ঙ্গের বাইরের এতটুকু পথ ভেতরের চেয়েও দুর্গম। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। ওমা! পেছন থেকে আমার পুত্রসম এক তরুণ হাত বাড়িয়ে দিল। বললো, আন্টি আমাকে ধরুন। তার সহযোগিতায় নিরাপদে কাদা ডিঙিয়ে কাঙ্খিত সিঁড়ির নাগাল পেলাম। বড্ড হাঁফাচ্ছিলাম, যেন হৃৎপি- বের হয়ে আসতে চাইছে। প্রাণভরে অক্সিজেন নিলাম, শান্ত করলাম নিজেকে। তবে সেলফি, ছবি তুলার ব্যাপার-স্যাপার আমরা কেউ এক সেকে-ের জন্যও ভুলিনি। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে বাইরের খোলা আকাশের নিচে চলে এলাম। উঠে গেলাম ওয়াচ টাওয়ারে। দাঁড়িয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে চাইলাম। কিন্তু তখনও সুড়ঙ্গের ঘুটঘুটে অন্ধকার আর পায়ের তলার হিমশীতল জলপ্রবাহের প্রতিধ্বনি হচ্ছিল ভেতরে। একটু আগে আমি যেন প্রস্তর যুগের ভয়াবহতা থেকে ফিরে এসেছি। প্রাচীন আর বর্তমানের দোলায় দুলতে দুলতে দলবেঁধে আমরা আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের উদ্দেশ্যে এগুতে লাগলাম।

দুই পাহাড়ের সংযোগকারী ঝুলন্ত সেতুতে উঠে পড়লাম। তার দুপাশে আবার দুটো কাচের বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো পাহাড়ের উপর ভাসছি। নন্দনকানন, রোমান কোলোসিয়ামের আদলে তৈরি মঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার...এইসবের নান্দনিকতাও ভুলতে পারবোনা কোনোদিন।

একসময় সকল সৌন্দর্যকে পেছনে ফেলে ফিরে যাওয়ার জন্য তাড়া এলো। যে পথে এসেছি সে পথ ধরে ছুটে চললো আমাদের বাস। ততক্ষণে দুপাশের অন্ধকার চেপে ধরেছে আমাদের। বাসের সম্মুখের লাইট জ্বলছে। জীবন, জগৎ, মৃত্যু, মানুষ, সমাজ, ধর্ম...কত ভাবনা মাথায় এসে ভর করছে।

ভাবছি মানব জাতির ইতিহাস যেমন লড়াইয়ের তেমনই আবেগ-অনুভূতির। প্রেম, ভালোবাসা, আকুতি, মহানুভবতা, হাসি, কান্না, দুঃখ এসব নিয়েই টিকে থাকার সংগ্রাম। পৃথিবী এক মানবীয় সভ্যতার আবাসভূমি। ব্রহ্মা-ের আর কোথাও এমন বিচরণ আছে কিনা তা পাগলের মতো খুঁজে ফিরছে মানুষ। অজেয় এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান মিলবে কিনা সেটাও ভবিতব্যই বলতে পারে। জৈব উপাদানে গড়া মানুষের শরীর পৃথিবী কতদিন আগলে রাখতে পারবে তাও বিজ্ঞানের কাছে ধোঁয়াশা। মহাবিশ্বের জ্যামিতিক-গাণিতিক সূত্র আমাদের নীল মার্বেল সদৃশ পৃথিবীকে সূক্ষ্মলয়ে উত্তপ্ত করে চলছে। বিজ্ঞান বলে, একদিন এই পৃথিবী বুধ গ্রহের পরিণতি লাভ করবে; অর্থাৎ তপ্ত হয়ে উঠবে, যদিও তা ঘটতে আরো দুশো কোটি বছর লাগতে পারে। আসলে আমাদের জীবদ্দশা মহাশূন্যের এক পরমাণুর চেয়েও কোটিগুণ ক্ষুদ্র পৃথিবীতে আবদ্ধ। মহাবিশ্বের কল্পনাতীত দূরত্ব এবং সময়ের বিশালতার কাছে আমরা পৃথিবীর মানুষগুলো আটকে গিয়েছি। বিশ্বব্রহ্মা-ের রহস্যের কূলকিনারা করা মানুষের পক্ষে কতটা সম্ভব সেটাও আজ অবান্তর প্রসঙ্গ বটে!

তবুও প্রশ্ন জাগে, কে বিশাল? মানুষের মস্তিষ্ক নাকি ব্রহ্মা-? মাঝে মাঝে স্তব্ধ হয়ে যাই এই চিন্তা করে যে , মানুষ এতোটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অথচ এই মানুষ পুরো ব্রহ্মা- নিয়ে ভাবতে পারে। কল্পনাশক্তি দিয়ে মহাকাশ ফুঁড়ে চলে যেতে পারে অসীম থেকে অসীমে।

কতকাল ধরে এই পৃথিবীর যাবতীয় ভূ-ভাগ, সমুদ্র আর বনভূমিতে লাগছে ঋতু বদলের দোলা। বিস্তীর্ণ পাহাড় যেন সেইসব বৈচিত্র্যময়তার স্বাক্ষী। এই ভুবনের আকাশজুড়ে মেঘের ভেলা। বৃষ্টির সুর আসে দূর অতীতের কোনো গুহামুখ হতে আধুনিক ইট-কাঠ-পাথরের জানালা ঘেঁষে। হয়তো সেই প্রথম  বৃষ্টি তার নান্দনিকতা  নিয়ে হাজির হয়েছিল গুহাবাসীর মন্দ্রিত হৃদয়ে। তবে বৃষ্টির মানবীয় ইতিহাসের শুরুটা ঠিক কবে ; এমন প্রশ্নের অবতারণা নিশ্চয়ই বৃষ্টির রিমঝিম সুরের কাব্যকথাকে এলোমেলো করে দেয়। তার চেয়ে আজিকে কালিদাসের মেঘদূতের মতো মেঘের বাহনে উৎসারণ করে দেই সঙ্গীর জন্য আমাদের অমোঘ ভালোবাসা। বৃষ্টির কোলাহল মাথায় করে একসময় আবাসস্থলে ফিরে এলাম আমরা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত বারোটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট তখন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা।












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা সিটির ‘বঞ্চিত’ অপসারিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
ধর্মপুর-সাতরার রাস্তার সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন জামায়াতের কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক এমদাদুল হক মামুন
বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ ঢুকে পরার চেষ্টা, বাধা
কুমিল্লা নগরীর ২৭ হাজার কিশোরী পাবে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন
সুমি জুয়েলার্সের ২৭তম বর্ষপূর্তি উদযাপন
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বুড়িচংয়ের আলোচিত আদনান হায়দারসহ গ্রেপ্তার ২
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২