বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৭ কার্তিক ১৪৩১
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-
‘খবরদারি’ কমিয়েছে পদ্মা সেতু, মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ
প্রকাশ: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ১:০৮ এএম আপডেট: ০৬.০৭.২০২৪ ১:২০ এএম |

 ‘খবরদারি’ কমিয়েছে পদ্মা সেতু, মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিম-লে এর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সরকার প্রধানের দৃষ্টিতে এই সেতু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর ‘খবরদারি’ কমিয়েছে, বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
শুক্রবার বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন, যার এক যুগ আগে যার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের কারণেই উন্নয়ন সহযোগীরা সরে যাওয়ার পর সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ হয়েছে। এতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়েছে। বিরাট এক অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কপথে বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০২৩ সালে সালে চালু হয় রেলপথ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “টোলের মাধ্যমে যে টাকা আয় হয়েছে, সেটা টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করব না। কারণ, এই সেতু আমাদের গর্বের সেতু, টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করার নয়।
“এই একটা সিদ্ধান্ত (নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ) বাংলাদেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে যেৃ আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করত আর ভাব এমন ছিল যে, এরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না; সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে।
“এখন বাংলাদেশ শুনলে আন্তর্জাতিকভাবে সবাই সমীহ করে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের পরে বাংলাদেশের মানুষ এখন গর্ব করে আন্তর্জাতিকভাবে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
“যতই বাধাই আসুক, সব প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে লাল সবুজের পতাকা বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে উড়বে।”
২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, গবেষণা এবং ডিজাইনের কথা উল্লেখ করে সেতু নির্মাণে বিলম্ব নিয়ে আক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর দোতলা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই নদীতে এই কাজ করা খুবই কঠিন। কারণ, গাড়ি, মানুষ, রেল- সব একসাথে সেতুতে উঠলে ওজন রাখা একটা কঠিন কাজ, আমি এই ডিজাইনটা পছন্দ করলাম। বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি সবাই এগিয়ে আসল।”
এরপর বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পদে রাখতে বৈশ্বিক নানা চাপ ও ‘তদবিরের’ কথা আবার তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “হিলারি ক্লিনটন ফোন করলেন, ২০ মিনিটে ফোন ছাড়লেন না। দুবার ফোন দিলেন।... ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি আসল, আমি শুধু বললাম, ‘এই এমডি পড়ে কী মধু আছে?’
পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক ও পদ্মা সেতুর একটি আউটলুক উপহার দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক ও পদ্মা সেতুর একটি আউটলুক উপহার দেওয়া হয়।
“গ্রামীণ ব্যাংকটা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর। কিন্তু যখন আইন করে শুরু হল, তখন এটা এরশাদ সাহেবের আমলে। তখন তিনি একজন এমডি খোঁজ করলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একজন প্রফেসরকে এনে বসানো হল। সেই প্রফেসর এমডির পদে বসে গ্লুতে এমনভাবে আটকে গেল যে আর উঠতে চান না।”
বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট যেদিন চলে দায়িত্ব থেকে চলে যান, সেদিনই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ করে দেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এজন্য হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশ ছিল। টাকা বন্ধ করার সাথে সাথে অন্যান্য দাতা সংস্থাও বন্ধ করে দিল।“
“আমি অনেক দেশের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সবাই মনে করেছিল, বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া এই সেতু করাই যাবে না। আমি বললাম কেন যাবে না? একমাত্র মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘আপনার সেতুটা আমি করে দেব।’
“তারা মোটামুটি একটা প্ল্যানও দিলেন। মুশকিল হয়ে গেল আমার দেশে। কেউ বলছে না যে, বিশ্বব্যাংক ছাড়া আমরা করতে পারব। আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞ-জ্ঞানী-গুনি, প্রত্যেকে বলে ‘এটা করা সম্ভব না।’ আমি বলেছি, আমরা করব। ১৭ কোটি মানুষ, টাকা এসে যাবে। আমরা তো একদিনে সব টাকা খরচ করব না, আমরা আস্তে আস্তে করব।”
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের কী কী কথা হয়, তাও এই সমাবেশে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে পারে না। জানতে চেয়েছিলাম, দুর্নীতিটা কোথায়, আমি তো কাগজ চাই। কীসের ভিত্তিতে বলে দুর্নীতি হয়েছে?
“প্রমাণ চেয়ে চিঠি পাঠালাম। সেই চিঠির জবাবে বিশ্বব্যাংকের চিঠি পাওয়া গেল। সেই চিঠিতে ছিল, ‘বিএনপির আমলে একটি সড়কে ও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল তা। আমি বললাম, ‘তখন তো আমি ক্ষমতায় ছিলাম না। এখানে আমার করণীয় কী?”
বিশ্বব্যাংকের টাকা দিতে নানা ধরনের ‘অনৈতিক শর্ত’ দিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা বলছে, মন্ত্রীকে (সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন) জেলে নিতে হবে, মসিউর রহমানকে (প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা) জেলে দিতে হবে, মামলা করতে হবে। আমি বললাম, ‘কোন অপরাধে মামলা?’
“আমাদের অর্থমন্ত্রী (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ও উপদেষ্টা এসে আমাকে বললেন যে, ওরা এই শর্ত দিচ্ছে, এটা মানলে টাকা দেবে। আমি বললাম, ‘ওদের টাকা নেব না।’ যেদিন টাকা হবে সেদিন করব।”
সেতু না হলে এবং বিশ্বব্যাংক টাকা না দিলে নির্বাচনে কী হবে- এই প্রশ্নও সেদিন উঠে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমি বললাম, জনগণ যদি ভোট না দেয়, আমি ক্ষমতায় যাব না, নিজের আত্মসম্মান বিক্রি করে তাদের শর্ত মেনে টাকা নিতে হবে নাকি?
“আমি তাদের বলে দিতে বলেছিলাম, এ দেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমি তা করবই।
“জনগণের সমর্থন ছিল, আমি এটা করতে পেরেছি। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন হয়েছে।“
এই সেতু একটা ‘জটিল অবকাঠামো’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর একটি হচ্ছে এই পদ্মা। সেই নদীর দুই কূল বেঁধে দেওয়া এটা কঠিন কাজ।”
যারা এই সেতুর জন্য বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়েছেন তাদেরকে এবং নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আন্তরিক ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সুধী সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিম সং প্রচার করা হয়। সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্রও দেখানো হয়।
সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক ও পদ্মা সেতুর একটি আউটলুক উপহার দেওয়া হয়।













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা সিটির ‘বঞ্চিত’ অপসারিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
ধর্মপুর-সাতরার রাস্তার সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন জামায়াতের কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক এমদাদুল হক মামুন
বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ ঢুকে পরার চেষ্টা, বাধা
কুমিল্লা নগরীর ২৭ হাজার কিশোরী পাবে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন
সুমি জুয়েলার্সের ২৭তম বর্ষপূর্তি উদযাপন
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বুড়িচংয়ের আলোচিত আদনান হায়দারসহ গ্রেপ্তার ২
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২