সারা দেশেই বন্যার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এর মধ্যে
বৃহত্তর সিলেট এলাকা আবারও বন্যার কবলে পড়তে পারে। প্রায় সব নদীর পানি
বাড়ছে। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি
বাড়ছে উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলাসহ প্রায় প্রতিটি
নদ-নদীর। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী
নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনী জেলার
বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা
বৃহত্তর সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
ভারি বর্ষণ
অব্যাহত রয়েছে। এ বছরের এক দিনের রেকর্ড ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে
সুনামগঞ্জে গত সোমবার। একই দিন তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় পয়েন্টে ২১১
মিলিমিটার এবং ছাতকে ২২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে উজানের ঢল
অব্যাহতভাবে নেমে আসছে।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের
আসাম রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে
রাজ্যের ১৯টি জেলায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৪
জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরও আগামী কয়েক দিন সেখানে ভারি বৃষ্টিপাতের
পূর্বাভাস রয়েছে। সেই পানির প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশে নেমে আসবে।
তাই গোটা উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যেতে পারে।
এ
বছর আগেও দুই দফা বড় বন্যার শিকার হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
একবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকবার বন্যার কারণে
মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি জুলাই মাসজুড়েই
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। তার অর্থ, চলতি জুলাই
মাসজুড়েই বন্যার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন,
আগস্টেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সেই সঙ্গে কুড়িগ্রাম, রংপুর,
বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে ভাঙন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা
বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। এতে
একসময় বৃষ্টিপাত প্রবল হবে। একসময় খরায় ফসলহানি হবে। বন্যা, ঝড়,
জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটিই বাড়বে। হচ্ছেও তা-ই। উজানের পার্বত্য
অঞ্চলগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সেই পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে
গিয়ে পড়বে, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। একে ঠেকানো যাবে না। সমস্যা হচ্ছে, আগে
নদীগুলোর গভীরতা ছিল। সেই পানির বড় অংশ নদী দিয়েই যেতে পারত। এখন নদীগুলো
ভরাট হয়ে গেছে। নদী সেই পানি ধারণ করতে পারছে না। ফলে নদীর দুই কূলে থাকা
জনপদ, ফসলের মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হচ্ছে। নদী অববাহিকার মানুষের জীবনমানের অবনতি হচ্ছে। তাই বন্যা থেকে
মানুষকে রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বন্যার আশঙ্কা
মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও মনে করি, এ
ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঘাটতি রাখা যাবে না। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
মেটানোর পাশাপাশি বন্যাজনিত অসুখবিসুখ মোকাবেলায়ও পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে
হবে।