তানভীর দিপু: কুমিল্লা নগরীর কান্দিপাড় এলাকায় ফোমের গোডাউন থেকে ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় জিলা স্কুল সংলগ্ন চৌধুরী ভবনে এই ঘটনা ঘটে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটের চেষ্টায় ২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ১১ টায় কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে চৌধুরী ভিলার নিচ তলায় ফোমের গোডাউনে আগুন লাগে। পরে সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ইব্রাহীম ভবনসহ আরো একটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট এসে আগুন নিভায়। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে নি।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কুমিল্লা জেলা স্কুলের সামনে মেইন রোড থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার গলির ভেতরে চৌধুরী ভিলা ভবনটি। সাততলা ভবনের নিচ তলায় দুইটি কক্ষে ছিল ফোমের গোডাউন, যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। অগ্নিকা- শেষে গোডাউন দুইটি ঘুরে দেখা গেছে, চৌধুরী ভিলা ভবনের মূল ইলেকট্রিক বোর্ড থেকে একাধিক ইলেকট্রিসিটির তার গোডাউনের ভেতরে অরক্ষিতভাবেই প্রবেশ করানো হয়েছে। আগুনের পর সেসব তার গুলো এলোমেলো ভাবেই ঝুলছিল। ওরা ফোনের সাথে পেঁচানো ইলেকট্রিসিটি তারও দেখা গেছে। ওই ভবনের একাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবনের নিচে দুইটি কক্ষে গত বুধবার সোফা তৈরীর ফোম ও বিছানার ম্যাট্রেস এনে রাখা হয়। সেগুলো আগুনে পুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের ভবনেও। এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ঘটনার সময় আশেপাশের বাড়ির ঘরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মূলত আগুনে সূত্রপাত কোথা থেকে সেটি কেউই বলতে পারছে না।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে জানান, ফোমের গোডাউন থেকেই আগুন ছড়িয়েছে চারপাশে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি যে ফোমের গোডাউন থেকে আগুন লেগেছে। তবে গোডাউন নিয়ে কিভাবে আগুনে লেগেছে তা অনুসন্ধান করে বের করা হবে। এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতো তা জানা যায়নি। তবে ভিতরে কোনো লোক আটকে নেই।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর হাবিবুর আলামিন সাদি বলেন, স্থানীয়রা ও ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশসহ দ্রুততম সময়ে উদ্ধার কাজ করায় এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে নি। আবাসিক ভবনের নিচে এভাবে গোডাউন করা সম্পূর্ণ বেআইনী। যারা এখানে গোডাউন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অগ্নিকান্ডের ভবনে মোট ৩টি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা এ ভবনগুলো মানুষ বসবাসের উপযোগী কিনা তা খতিয়ে দেখবো।
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, পরিকল্পনা বিহীন, নকশা অনুমোদন বিহীন ভবন সারা কুমিল্লা ছেয়ে গেছে। আমরা কিছুদিন আগেও দেখেছি ঝড়ের সময় দেয়াল পড়ে একটা শিশু নিহত হয়েছে। একটা দিন মজুরের সন্তান মারা গেছে। আজকে আপনারা দেখছেন একটা ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং এখানে সিঁড়ি দিয়ে উদ্ধারকারী দল বের করার মত অবস্থা ছিলো না। এখানে দুইটা বিষয় - প্রথমত তারা গ্যারেজের মধ্যে ফোমের গোডাউন ভাড়া দিয়েছিলো এবং সেই ফোমগুলো জ্বলেই এই আগুন বাড়ে। আমরা এই বিষয়ে খুব কঠোর পদক্ষেপ নিবো। আবাসিক কোন ভবনের নিচে গোডাউন ভাড়া হবে না। আমরা আগামী দুই দিনের মধ্যে এই বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।