![সবার জন্য হেলথ কার্ড]( https://comillarkagoj.com:443/2023/12/07/CK_1701886186.jpg)
স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও
তা জনপ্রত্যাশার সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়। অনেক বিশেষায়িত সরকারি
হাসপাতালেই রোগীদের দীর্ঘ লাইন থাকে। চিকিৎসার জন্য, বিশেষ কিছু পরীক্ষার
জন্য মাসাধিক কালের ‘সিরিয়াল’ প্রয়োজন হয়। বহু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক
দেখানো গেলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে।
অনেক ক্ষেত্রেই
সরকারি বরাদ্দের ওষুধ রোগীরা ঠিকমতো পায় না। পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসাসেবায়
বিশৃঙ্খলা, আন্তরিকতার অভাব, চিকিৎসকের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অত্যধিক হওয়া,
রোগীর চিকিৎসার তথ্য সংগ্রহ না করা, প্রতিবার শুরু থেকে চিকিৎসকের যাত্রা
শুরু করা, ভুল চিকিৎসা—এ রকম আরো অনেক দুর্বলতা। এসব কারণে বহু সংকটে ভুগছে
আমাদের স্বাস্থ্য খাত, ধুঁকে ধুঁকে চলছে সরকারি হাসপাতালগুলো। অথচ সরকারি
হাসপাতালই হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ দরিদ্র ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের
একমাত্র ভরসার জায়গা।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে
কিছু পরিকল্পিত প্রয়াস নিতে যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়,
স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করতে আসন্ন নতুন বছরে শুরু হতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য কার্ড
কার্যক্রম। জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ব্যক্তিগত তথ্যের মতো এই কার্ডে থাকবে
নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবার সব তথ্য। প্রথম ধাপে ঢাকা, গোপালগঞ্জ ও
মানিকগঞ্জের মোট আট প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চলবে।
উন্নত
বিশ্বে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য কার্ড অনেক আগে থেকেই চালু রয়েছে। চিকিৎসক এই
কার্ড দেখে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারেন। রোগী এর আগে
কবে কোথায় কী চিকিৎসা নিয়েছিল, তা জানতে পারেন। আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার
রিপোর্ট দেখতে পারেন। রোগীর বংশানুক্রমিক রোগ-ইতিহাস জানতে পারেন।
রোগীর
অ্যালার্জিক, হেপাটিক বা অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন।
এসবের ফলে রোগীর বর্তমান সমস্যার কারণ ও প্রতিকারের বিষয়গুলো চিকিৎসক সহজেই
বুঝতে পারেন। উল্টো দিকে আমাদের এখানে কী হয়? বেশির ভাগ রোগীই আগের
প্রেসক্রিপশন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংরক্ষণ করে না। চিকিৎসককে নতুন
করে সব কিছু জানতে হয়। এতে যেমন সময়ের অপচয় হয়, তেমনি খরচও বেশি হয়। ধরা
যাক দুর্ঘটনায় আহত একজন রোগীর কথা। দ্রুত রক্ত দেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু
চিকিৎসক জানেন না তার রক্তের গ্রুপ, ফ্যাক্টর কী? কোনো অ্যান্টিবায়োটিক
রেজিস্ট্যান্ট কি না জানা নেই। অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া জানা নেই। এসব
কারণে চিকিৎসক সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যাগ্রস্ত হন। হেলথ কার্ড থাকলে
চিকিৎসক অনেক তথ্য সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন। চিকিৎসা প্রদান অনেক সহজ হবে।
২০০৮
সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত
অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম ছিল জনগণের দোরগোড়ায় উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে
দেওয়া। তা কি সম্ভব হয়েছে? এখনো চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বহু পরিবার পথে
বসছে। এখনো বাংলাদেশে মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। যত দ্রুত সম্ভব এই
পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। ব্যক্তিগত হেলথ কার্ড এ ক্ষেত্রে এক ধাপ
অগ্রগতি হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বীমা, হাসপাতাল ও সেবাব্যবস্থার উন্নয়নসহ
আরো অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।