গত
বছর সেপ্টেম্বরে সালাম মুর্শেদীকে সরিয়ে হঠাৎ বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির
সভাপতির দায়িত্বটা নিয়েছিলেন তিনি। আবার ছাড়লেনও হঠাৎ। বাফুফের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটিপ্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে আবার আলোচনায় কাজী
সালাউদ্দিন। আজ হঠাৎ করেই তিনি এই দায়িত্বে বসিয়ে দিয়েছেন বাফুফের সহসভাপতি
ইমরুল হাসানকে।
ইমরুল হাসান টানা চারবারের প্রিমিয়ার লিগজয়ী বসুন্ধরা
কিংসের সভাপতি। এত দিন বাফুফের অধীনে থাকা ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির সভাপতি
ছিলেন। এই পদে এখন অন্য কাউকে দেওয়া হবে। ইমরুল হাসান সামলাবেন পেশাদার লিগ
কমিটির প্রধানের দায়িত্ব।
শুধু প্রিমিয়ার লিগ নয়, পেশাদার লিগ কমিটির
অধীনে আছে প্রিমিয়ারের দলগুলো নিয়ে আয়োজিত স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপও।
কিন্তু ক্লাবের শীর্ষ ব্যক্তি যখন লিগ পরিচালনা কমিটির শীর্ষ পদে বসেন, তখন
স্বার্থের সংঘাত চলেই আসে। তবে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘১২ বছর সভাপতি ছিল
সালাম, সে–ও তো একটা ক্লাবের।’ কিন্তু কাজী সালাউদ্দিন এ কথা বললেও বাফুফের
জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী মোহামেডান পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত
ছিলেন না। ফলে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি।
বিতর্ক এড়াতেই
সরাসরি ক্লাব পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কাউকেই লিগ কমিটির শীর্ষ পদে
চায় বাফুফের বড় একটা অংশ। কিন্তু বাফুফেতে নাকি তেমন যোগ্য সংগঠক নেই।
অন্তত কাজী সালাউদ্দিনের কথা তেমনই, ‘আমার মনে হয়েছে, এ মুহূর্তে তাঁর চেয়ে
(ইমরুল হাসান) যোগ্য কেউ নেই এ পদের জন্য। তাই তাঁকে দেওয়া হয়েছে।’
কিন্তু
এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয়নি। এমনকি
সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরাও জানেন না যে লিগ কমিটির সভাপতি বদলে গেছে।
জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী, বাফুফের অন্যতম সহসভাপতি ও দেশের শীর্ষ
ক্লাব আবাহনীর ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদও জানেন না বিষয়টি।
বাফুফের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত।
লিগ
কমিটির চেয়ারম্যান পরিবর্তনের বিষয়টি বাফুফের নির্বাহী সভায় বা লিগ কমিটির
সভায় না উঠিয়ে কেন এভাবে সাংবাদিকদের ডেকে ঘোষণা? আজ দুপুরে বাফুফে ভবনে
ইমরুল হাসানকে পাশে নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘বোর্ড থেকে আমার ওপর
দায়িত্ব দেওয়া আছে এই ব্যাপারে। যে কাউকে কমিটির চেয়ারম্যান আমি করতে পারি।
বোর্ড সেটা অনুমোদন দেয়।’
কিন্তু প্রশ্ন এসেছে ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করে
কেন এখন ছেড়ে দিলেন পেশাদার লিগ কমিটির সভাপতির পদ? কাজী সালাউদ্দিনের
ব্যাখ্যা, ‘লিগ কমিটির অনেক কাজ। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন অনেক কিছু
ঠিকঠাক চলছিল না। ফিকশ্চারসহ অনেক কিছু বদল হয়ে যেত। এখন গুছিয়ে দিয়েছি
সব। সভাপতি হিসেবে আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। সেসবও গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে
করি, ইমরুল হাসান অনেক দক্ষ, তাই তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
একটি শীর্ষ
ক্লাবের সভাপতিকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি না দিলেই চলত না? এমন
প্রশ্নে কাজী সালাউদ্দিন পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘জাতীয় দল কমিটির
চেয়ারম্যান কাজী নাবিল। সে সরাসরি আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত। অনেকেই ক্লাবের
সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাহলে তো পুরো নিয়মই পাল্টাতে হয়। জাতীয় দল কমিটিতে
যারা রয়েছে, তারা প্রায় সবাই তো আবাহনীর।’
জাতীয় দল কমিটির সভাপতি পদে
আছেন আবাহনীর কর্মকর্তা কাজী নাবিল আহমেদ। একই কমিটিতে আবাহনীর একাধিক
প্রতিনিধি আছে। বিষয়টা স্বার্থের সংঘাত উল্লেখ করে বাফুফেকে একাধিকবার চিঠি
দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। জাতীয় দলে খেলোয়াড় না ছাড়ার হুমকিও দিয়েছিল তারা।
কিন্তু এখন কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান নিজেই স্বার্থের সংঘাতপূর্ণ পদই গ্রহণ
করেছেন।
লিগ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ হবে কি না, প্রশ্নে ইমরুল হাসান বলেছেন, ‘কাজ শুরু করি, সময় এর
উত্তর দেবে।’