রোববার ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
হঠাৎ আলোচনায় আবদুল মান্নান চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশ: সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ৯:৪২ পিএম |

হঠাৎ আলোচনায় আবদুল মান্নান চৌধুরীদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী’র নাম। ইতোমধ্যে তিনি অনলাইনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে তা জমা দিয়েছেন। এর আগে তিনি দেখা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। এরপর থেকেই তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক মহল। সর্বত্রই চলছে তাঁকে নিয়ে আলোচনা। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী’র বাড়ি কুমিল্লা মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢুলিপাড়া এলাকায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাথমিক তালিকায় আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও আঞ্জুম সুলতানা সীমার নাম থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে আবদুল মান্নান চৌধুরীর নামটি আলোচনায় আসে। এরই মধ্যে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন। মূলত: এর পর থেকেই তাঁর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক মহলসহ নানা অঙ্গনে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। বরেণ্য এ শিক্ষাবিদের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জেলার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তথ্য চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্রহ প্রকাশ করার পর থেকেই তাকে ঘিরে এ তোরজোড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী কুমিল্লার কাগজকে জানান, ‘আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে নির্বাচন করতে কুমিল্লায় আসতে বলেন তাহলে তো ‘না’ করার সুযোগ নেই।’
হঠাৎ আলোচনায় আবদুল মান্নান চৌধুরী
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী ১৯৫৯ সালের দিকে স্কুলে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে কুমিল্লা জিলা স্কুলের শতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের একজন প্রথম সারির নেতা এবং ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট, শিল্প ও সাহিত্য সংঘের যথাক্রমে সাহিত্য সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগের হয়ে ফজলুল হক হলে দু’বার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। মহসিন হলে দু’বছর কেবিনেট না থাকলেও সে হলে দলের স্বার্থেই তিনি প্রায় দু’বছর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হলে ছাত্রলীগ তাতে দ্ব্যার্থহীণ সমর্থন করেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দিবসে কার্জন হলের সামনে পিকেটিং কালে তিনি পাকিস্তানি পুলিশের লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলির মুখোমুখি হয়েও দৈবক্রমে আজও বেঁচে আছেন। ১১ দফার আন্দোলনেও তিনি ওৎপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে পর বিএলএফ বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের কার্যক্রমে গভীর ভাবে জড়িয়ে পড়েন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে ৩ মার্চ সকাল ১১টায় বটতলায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তিনি স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বস্তুত: এই প্রস্তাবটি ছিল ছাত্রদের পূর্বেই শিক্ষকদের স্বাধীনতা ঘোষণার নামান্তর।ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনানুষ্ঠানিক থিংক ট্যাংকেরও সদস্য হবার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল যা বঙ্গবন্ধুকে নিরন্তর তথ্যাদি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করত। বঙ্গমাতা মাধ্যমে এসব তথ্যের আদান-প্রদান করেছিলেন। বিশ^বিদ্যালয়ের ১২৮ জন শিক্ষকদের অন্যতম হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীতে বিবৃতি দিয়েছিলেন। ৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হলে তিনি কুমিল্লার যুদ্ধোত্তর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ার কাজে জড়িত হন। ঢাকা ফিরে বিশ^বিদ্যালয়ে পূর্ণযোগদান করেন। তিনি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক মনোনীত হন এবং ১৯৯২ সালে সিলেকশান গ্রেড পান।২০১২ সালে তিনি ঢাকা বিশ^বদ্যিালয়ের সিলেকশান গ্রেড প্রফেসর এবং এমআইএস বিভাগের প্রধানের পদে আসীন হন।
২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর কুমিল্লায় প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তারপর ৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে সীমান্ত অতিক্রম করে কুমিল্লার যোদ্ধাদের সহায়তায় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের হাতিয়ার স্বরূপ পূর্বাঞ্চলের একমাত্র মুখত্র বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও কলাম লেখকের দায়িত্ব নেন। তারপর মুজিব বাহিনীর ক্রমান্বয়ে সহ কোষাধ্যক্ষ ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পূর্বাঞ্চল মুজিব বাহিনীর প্রধান উনাকে মুজিব বাহিনীর মূল কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করলে তিনি রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং, ইনডাকশান, সমন্বয় ও সুপারভিশনের ঝুঁকিময় দায়িত্ব পালন করেন। তদুপরি শেখ মনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অভিযাত্রার কালে পূর্বাঞ্চল মুজিব বাহিনীর সাময়িক প্রধান এবং এই বাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে যৌথ কমান্ডের সাথে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
 বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মম হত্যার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা থেকে তিনি প্রতিশোধের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযুক্ত হয়েছিলেন যার ফলে দেশে টিকতে না পেরে ১৯৭৮ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৮৫ সালে নাইজেরিয়ার চাকুরী ছেড়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলের নেত্রী তখন তিনি গোপনে তার সাথে দেখা করতেন যা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মকান্ড চালাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৯২ সালে সূচিত ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের প্রধান পৃষ্ঠ-পোষক ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছিলেন এই আন্দোলনের আহবায়ক ও ড. চৌধুরী ছিলেন তার সদস্য-সচিব। এই আন্দোলনের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় ও তাঁকে একজন আসামী করা হয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘাতক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়ে এখনও তা চলছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকাবস্থায় বিশ^বিদ্যালয়কে বস্তি মুক্ত করে, সন্ত্রাস প্রশমিত করে এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অভূতপূর্ব অবস্থানে ছিলেন। সিনেট সদস্য থাকাকালে তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে হল সৃষ্টির ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের প্রস্তাব করেন। সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট হিসেবে হলের সংস্কার ও শৃঙ্খলায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বহুবিধ কর্মকান্ডে নিরন্তর জড়িয়ে থেকেও অন্তত: ২১টি বই রচনা বা সম্পাদনা করেন। তিনি বঙ্গমাতার নামে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ ও তার নামে হল নির্মাণের প্রস্তাব করে তাকে পাদপ্রদীপের আলোতে নিয়ে আসেন। দীর্ঘকাল যাবত তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদের সভাপতি।
ড. চৌধুরী’র বড় ছেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষে ডারহাম থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে তাঁর চেয়ে বহু কষ্ট সৃষ্টে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েছেন। মেঝো ছেলে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে এমবিবিএস এবং স্কটল্যান্ড থেকে এমআরসিএস ডিগ্রি নিয়েও সিঙ্গাপুরে চাকুরী করছেন। ছোট ছেলে ম্যাসাচুছেট বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২