শুক্রবার দিনব্যাপি কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যুত সংযোগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ১২ ঘন্টা বিভিন্ন উপজেলা বিদ্যুৎহীন ছিলো। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পল্লী বিদ্যুত সংযোগে। শনিবার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামতের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করেছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি।
কুমিল্লার চারটি সমিতি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অন্তত ১২শ স্পটে বিদ্যুতের সংযোগ ছিঁড়ে গেছে। মিটার নষ্ট হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি। ট্রান্সর্মার নষ্ট হয়েছে ৬১টি এবং খুঁটি নষ্ট হয়েছে প্রায় দেড় শত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৪ এর অধীন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, লাকসাম এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছাদেক জামান জানান, প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে এই সমিতির আওতাধীন অন্তত ৮৯ টি পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) আতিকুর রহমান জানান, এই তিন উপজেলার অন্তত ৪০০টি স্পটে তার ছিঁড়েছে, ক্রসআর্ম ভেঙ্গেছে ৩১টি, ইনস্যুলেটর নষ্ট হয়েছে ৪৫টি, ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে ২৭টি এবং অন্তত ৭০০ মিটার নষ্ট হয়েছে। ঘূর্নিঝড়ের পর থেকে এসব মেরামতের চেষ্টা চলছে। রবিবার বিকালের মধ্যে সম্পূর্ণ সংযোগ মেরামত সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) প্রকৌশলী শ্রী দিপক কুমার সিংহ জানান, এই চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় খুঁটি ভেঙ্গেছে ৮টি, খুঁটি হেলে পড়েছে ২৬টি, মিটার নষ্ট হয়েছে ২২৩টি, ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে ৭টি। অন্তত ২৪৩টি স্পটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে এসব এলাকায়। তিনি জানান, যেসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- আমরা সেগুলোর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। যতদ্রুত সম্ভব সবগুলো এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করা হবে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) মোঃ মাসুদুল আলম জানান, এই সমিতির অধীনে সদর উপজেলার আংশিক, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৪৪টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৪১০টি স্পটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। ২০০টি মিটার এবং ৯টি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে।
এদিকে পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) মোল্যা আবু জিহাদ জানান, এই সমিতির আওতাধীন কুমিল্লার দাউদকান্দি, তিতাস, হোমনা, মেঘনা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের অন্তত ১৫০টি স্পটে তার ছিঁড়েছে। এছাড়া এসব এলাকায় অন্তত ১৮টি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুত সমিতির উর্দ্ধতণ কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্নিঝড় মিধিলির আঘাতে পল্লী বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গাছপালা ভেঙ্গে তারের উপর পড়ে তার ছিঁড়ে যায়। একই সাথে খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় মিটার ও ক্রসআর্ম নষ্ট হয়। যে কারণে সংযোগ মেরামতে সময় লাগছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত সম্পূর্ন ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বের করা সম্ভব হয় নি বলেও জানান কর্মকর্তারা।