শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:০২ এএম |

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা
আমাদের বাজার কোনো নিয়ম-নীতি মানে না। নৈতিকতার অভাবও এখানে প্রকট। সুযোগ পেলেই ভোক্তার পকেট কাটা হয়। আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়া, তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজে পরিবহনের খরচ বেশি হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া- এমনই আরো কত কি! কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করা হয় না, দেশেই উৎপাদিত হয়- সেগুলোর দাম বাড়ে কেন? ভোক্তাদের এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না। ধরা যাক, কৃষিপণ্য আলুর কথাই। চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এর দাম কেবলই বাড়ছে।
সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হয় না। অবশেষে সরকার আমদানির অনুমতি প্রদান করে। আমদানি করা আলু দেশে ঢুকতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করেছে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে ডিমের ক্ষেত্রেও।
কেন এমন হয়?
জানা যায়, মৌসুমে যখন আলু উৎপাদিত হয়, তখন আলুর দাম ২০ টাকার নিচে, কখনো ১০ টাকার নিচে নেমে যায়। অনেক সময়ই উৎপাদনকারী কৃষকের উৎপাদন খরচও ওঠে না। তখন সস্তা দামে এগুলো কিনে নেন মজুদকারী ব্যবসায়ীরা। হাজার হাজার টন আলু কিনে হিমাগারে রেখে দেন। মৌসুমের আলু কমে এলে হিমাগার থেকে আলু বাজারে আসে।
তখনই মজুদকারীদের সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক আলু সংকটেরও কারণ এটি। সরকার হিমাগারগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাইকারি দাম নির্ধারণ করে কেজিপ্রতি ২৭ টাকা এবং খুচরায় ৩৫-৩৬ টাকা। আলুর কেনা দাম, হিমাগারে রাখার খরচ ও মুনাফা ধরেই এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই দামে আলু বিক্রি করতে চাননি ব্যবসায়ীরা। খুচরায় আলুর দাম ৮০ টাকায় উঠে যায়। অথচ আমদানির পর তা আবার নি¤œমুখী হতে থাকে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডিম ও আলু আমদানি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে আমদানির প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়। সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নতুন আলু তোলা হয়। আর আগাম জাতের কিছু নতুন আলু এরই মধ্যে সামান্য পরিমাণে বাজারে আসতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত পরিমাণে আমদানি হলে এবং তা বাজারে থেকে গেলে আলুর দাম খুব বেশি কমে যেতে পারে। এতে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কৃষকদের স্বার্থে সেই দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব বিবেচনায় জাতীয় কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে আছে কৃষিপণ্যের আমদানি একেবারে বন্ধ না রেখে মৌসুমভিত্তিক শুল্কব্যবস্থা চালু করতে হবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন সময়, সংগ্রহকাল ও খরা মৌসুম বিবেচনায় নিয়ে একটি পঞ্জিকা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া ফসল উত্তোলনের সময় মজুদ বা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য আরো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি টিসিবিকে আরো গতিশীল করতে হবে।


নতুন শিক্ষাক্রমের ভয়াবহ ভবিষ্যৎ
ড. কামরুল হাসান মামুন
পুরাতন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার পেছনে কতটা অশুভ উদ্দেশ্য কাজ করেছে তা অনেকেই জানে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি শিক্ষার মানের উন্নতি চাইত তাহলে তারা শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানিত ও আকর্ষণীয় করত, শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ না কমিয়ে বরং বাড়াত, বিনামূল্যে যে বইগুলো দেওয়া হয় সেইসব বইয়ের কাগজের মান, ছাপার মান, ছবির মান, বিষয়বস্তুর মান এত নি¤œমানের হতো না।
তাছাড়া বাংলা মাধ্যমের মান বৃদ্ধির জন্য বেশি অগ্রাধিকার পায় কোন জিনিসটি? শিক্ষাক্রমের আগে শিক্ষকের মান বাড়ানো জরুরি। শিক্ষকের মান পরিবর্তন বা বাড়ানোর আগে তাদের উন্নত বেতন ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
অনেক কোচিং সেন্টারে ভালো মানের শিক্ষক আছে। কী করলে তাদের মতো শিক্ষক স্কুলে নিয়ে আসা যায় সেই ব্যবস্থা করুন। তবে এই ধরনের সম্মান ও সম্মানিতে কোনো ভালো মানের শিক্ষক এই পেশায় আসবে না। শিক্ষক হয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপির দ্বারা অসম্মানিত হতে কারও ভালো লাগে না। এখন যে বেতন কাঠামো আছে এই বেতন কাঠামো রাখলে শিক্ষকদের কোনো না কোনো পথ বের করে জীবন বাঁচানোর জন্য বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি হাতে পেলাম। নবম শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৫৮ পৃষ্ঠার ৩ চ্যাপ্টার পদার্থবিজ্ঞান পড়বে। প্রথম চ্যাপ্টারে নিউটনের সূত্র, দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে তাপমাত্রা ও তাপ আর তৃতীয় চ্যাপ্টারে পড়বে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান যেখানে আছে তরঙ্গ-পার্টিকেল ডুয়ালিটি, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার প্রিন্সিপাল ইত্যাদি।
ওই বইয়ের বাকি চ্যাপ্টারে আছে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান। একই দেশের ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২১৬ পাতার ৮ চ্যাপ্টারের পদার্থবিজ্ঞানের বই পড়ে; যেখানে থাকে ইউনিটস এবং মেজারমেন্ট, ইলেক্ট্রিসিটি, ফোর্সেস অ্যান্ড মোশন, রশ্মি এবং তরঙ্গ, আর্থ অ্যান্ড স্পেস, এনার্জি, ম্যাগনেটস অ্যান্ড কারেন্ট, এটমস অ্যান্ড নিউক্লেই প্রভৃতি পড়বে। অর্থাৎ ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যা পড়বে বা জানবে নতুন কারিকুলামে আমাদের বাংলা মাধ্যমের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও তা পড়বে বা জানবে না।
আর নবম-দশম শ্রেণি বা ‘ও লেভেল’-এ আছে ২৭১ পাতার পূর্ণাঙ্গ পদার্থবিজ্ঞান বই যেখানে আছে ৮টি ইউনিট। ফোর্স অ্যান্ড মোশন, ইলেক্ট্রিসিটি, ওয়েভস, এনার্জি রিসোর্সেস, সলিড্স, লিকুইডস অ্যান্ড গ্যাসেস, ম্যাগনেটিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, রেডিওএক্টিভিটি অ্যান্ড পার্টিকেল এবং এস্ট্রোফিজিক্স।
তাহলে একই দেশের নবম-দশম শ্রেণি পাস করা ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পার্থক্য বুঝতে পারছেন? একটা দেশ অর্থে-বিত্তে ধনী এবং ইংরেজি মাধ্যমের খরচ বহন করতে পারবে তাদের সন্তানেরা সপ্তম শ্রেণিতেই যতটা পদার্থবিজ্ঞান পড়বে আমাদের বাংলা মাধ্যমের নবম শ্রেণিতে এসেও ততটা গভীরে পড়বে না। এই বৈষম্য আপনি কীভাবে ঘোচাবেন?
কোনোদিন ঘুচবে না। আবার নতুন শিক্ষাক্রমে উচ্চতর গণিত তো নবম-দশম শ্রেণি থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে মানবিক বিভাগ নিয়ে যারা পড়তো তাদেরও কেউ কেউ চতুর্থ বিষয় হিসেবে উচ্চতর গণিত নিতো যাতে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অর্থনীতিতে ক্যালকুলাসের ব্যবহার অনস্বীকার্য। অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে মেজর এবং গণিতে মাইনর ছিলেন। গণিতে শক্ত ভিত্তির কারণেই উনারা অর্থনীতিতে এত ভালো।
অথচ ইংরেজি মাধ্যমের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গণিতে ৪৪৩ পাতার একটি পূর্ণাঙ্গ বই পড়ে। এই বইয়ে আছে ১২টি চ্যাপ্টার যেখানে আছে নাম্বার, এলজেব্রা-১, পরিমিত বিদ্যা, জিওমেট্রি, এলজেব্রা-২, ট্রিগোনোমেট্রি, গ্রাফস, সেট্স, ভেক্টরস অ্যান্ড ফাংশনস, ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ট্রান্সফর্মাশন্স, স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড প্রোবাবিলিটি, ইনভেস্টিগেশনস, প্রাকটিক্যাল প্রব্লেমস অ্যান্ড ধাঁধা। অর্থাৎ বর্তমান কারিকুলামের উচ্চতর গণিতের অনেক কিছুই ইংরেজি মাধ্যমের নবম-দশম শ্রেণির গণিতের বইয়ে আছে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী কিংবা অর্থনীতিবিদ হওয়ার জন্য উচ্চতর গণিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর একেই কি না একেবারে উধাও করে দিলো।
নতুন শিক্ষাক্রমে যেহেতু বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সবার জন্য ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই বর্তমান শিক্ষাক্রমের এইসব চ্যালেঞ্জিং এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সামান্য রাখা হয়েছে। তারা গণিত কত কম জানবে বুঝতে পারছেন? একই কথা বলা চলে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। গণিত হলো পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা। গণিত কম জানা মানে পদার্থবিজ্ঞান কম জানবে এবং কম বুঝবে। শুধু ইংরেজি মাধ্যমেই এইসব চ্যালেঞ্জিং বিষয় আছে এমন না।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানিতে যারা বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়ে তারা আরও গভীর পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞান পড়ে। আগেই বলেছিলাম, ম্যাক্স প্ল্যাংক মাত্র ১০ বছর বয়সে শক্তির নিত্যতা সূত্র স্কুলে পড়েছিলেন। সেই জায়গায় আমাদের শিশুরা কী পড়ছে?
প্রশ্ন হলো, ৯ম বা ১০ম শ্রেণির নতুন পাঠ্যক্রমের ভেতরে কতটুকু বিজ্ঞান আর গণিত রয়েছে, তা কি একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানের আলাদা আলাদা বইগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে? একদমই না।
নতুন শিক্ষাক্রমে একটা মাৎৰ বিজ্ঞানের বই পড়ে একাদশের শিক্ষার্থীরা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর জীববিজ্ঞান আলাদা তিনটি বিশাল সিলেবাসের ভার বইতে পারবে না। এই সামান্য জিনিসটা বুঝতে কি বড় বিজ্ঞানী হওয়া লাগবে? এটা অতি সাধারণ বিষয়। তার মানে এখন উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাসও কেটেছেঁটে লঘু করতে হবে! তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম পড়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা কীভাবে গণিত অলিম্পিয়াড করবে? কীভাবে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড করবে? অথচ বর্তমান শিক্ষাক্রম পড়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা এই দুটিসহ অন্যান্য সব অলিম্পিয়াডে খুবই ভালো করছে।
আমার বড় কন্যা যখন বিদেশে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন বাংলাদেশের বাংলা মাধ্যমের সেরা কয়েকটি কলেজের ছাত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। ও তাদের পারফর্মেন্স দেখে আমাকে বলেছিল বাংলা মাধ্যমের ছেলেরা তো সাংঘাতিক মেধাবী।
প্রতি বছর প্রচুর বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাচ্ছে। এরা আরও ভালো করতো যদি স্কুলগুলোয় ভালো মানের শিক্ষক দিতে পারতাম, আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা যদি শ্রেণিকক্ষে আরও অধিক মনোযোগী হতো। হবে কীভাবে? এত অল্প বেতনে এরা তো জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে।
অনেকেই বাংলা মাধ্যমের বর্তমান সিলেবাসের ওপর একটা কালিমা লেপে দিয়ে নতুন কারিকুলামের গুণগান গাইতে চাইছে। একটা কথা চালু আছে যে, বাংলা মাধ্যমের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটা মুখস্থ নির্ভর, কোচিং নির্ভর। না বুঝলে তো মুখস্থ করতেই হবে। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান কিংবা গণিত তো মুখস্থের তেমন কিছু নেই। অথচ মুখস্থের কালিমা লেপে এইগুলোই কেটেছেঁটে দেওয়া হয়েছে।
কম্পিউটারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে মেমরি বলতে একটা জিনিস আছে এবং তা মনে রাখার জন্যই আছে। কিছু কিছু জিনিস মুখস্থ রাখার দরকার আছে। সমস্যা হলো শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞানকে সার্জারি করে স্লাইস করে করে যৌক্তিকভাবে পড়াতে পারার মতো যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না।
কিছু কিছু কোচিং সেন্টারে ভালো শিক্ষক আছে বলেই শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হয়েছে। কিন্তু যত ভালো শিক্ষকই থাকুক, কোচিং একটা ব্যবসা। সেইখানে সঠিকভাবে পড়ানোর বদলে ওই মেধাবী শিক্ষকরা কৌশল বা শর্টকাট রাস্তা শেখায়। অথচ কোচিং-এর মানের শিক্ষকদের যদি বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তাদের যথেষ্ট বেতন দেওয়া হয় আর তারা যদি বিদ্যালয়ে যথেষ্ট সময় দেয় তাহলেই বর্তমান বাংলা মাধ্যমের সিলেবাস দিয়ে ম্যাজিক্যাল সাফল্য সম্ভব।
২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা অনার্স সম্পন্ন করেছিল তাদের অনেকেই অত্যন্ত মেধাবী। এদের একজন জার্মানি চলে গিয়েছে, কয়েকজন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে চলে গিয়েছে বাকিরা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগেই আছে। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানেও আমি একটি কোর্স পড়াই বলে ওদের সবাইকেই আমি পড়িয়েছি। পড়িয়ে আমি মুগ্ধ।
এদের অন্তত একজন ভর্তি পরীক্ষায় একদম প্রথম দিকে থেকেও পদার্থবিজ্ঞানেই ভর্তি হয়েছে। সে বুয়েটেও সুযোগ পেয়েছিল। সম্প্রতি এদের কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে জিআরই দিয়েছিল। এদের অন্তত দুজনের কথা জানি যারা ৯৩০-এর ওপরে পেয়েছে, একজন সাধারণ জিআরইতে ৩২৩ পেয়েছে, আইইএলটিএসে ৮.৫ পেয়েছে। এছাড়া আমার আরও ৩ জন ছাত্র খুবই অল্প প্রস্তুতিতে আইইএলটিএসে ৮ পেয়েছে। এরা সবাই বাংলা মাধ্যমে পড়ে এসেছে। এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
আমি এদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে এত আনন্দ পাই। আমার আশঙ্কা নতুন শিক্ষাক্রম যারা পড়ে আসবে তাদের মধ্যে থেকে এমন মেধাবী আর হয়তো পাবো না। আমার এই আশঙ্কার কারণগুলো নিশ্চয়ই পুরো লেখা পড়ে বুঝতে পারছেন। বর্তমান বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাক্রমকে আরেকটু কেটেছেঁটে, স্কুলগুলোয় ভালো শিক্ষক দিয়েই আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য পেতে পারতাম। আসলে বিজ্ঞানের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই দেশ থেকে আর বড় বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার পাবো না।
ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত আপনারা সিভিক আইন শেখান, রান্না বান্না শেখান, সুস্থ থাকা শেখান, বনে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ ও প্রাণীদের সম্বন্ধে শেখান। পরীক্ষা কম থাকুক। এইসবে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সপ্তম শ্রেণি থেকে আস্তে আস্তে সিরিয়াস বিষয় পড়াতে হবে।
নবম শ্রেণিতে এসে যাদের গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয় ভালো লাগবে তাদের গণিত ও বিজ্ঞান নিতে দিন, যাদের মানবিকের বিষয় ভালো লাগবে তাদের মানবিকের বিষয় নিতে দিন আর যাদের ব্যবসার বিষয় ভালো লাগবে তাদের ঐসব বিষয় নিতে দিন। এই সময়টাই ভিত্তি গড়ার সময়।
বড় বহুতল ভবন বানাতে হলে যেমন ভিত্তির জন্য মাটির নিচে গভীরে যেতে হয় অর্থাৎ যত বেশি উঁচু ভবন হবে তত বেশি গভীরে ভিত্তি গড়তে হবে। তাই সপ্তম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই ভিত্তি তৈরির কাজ স্কুল ও কলেজকে করতে হবে। এখানে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়













সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft