বুধবার ৪ অক্টোবর ২০২৩
১৯ আশ্বিন ১৪৩০
খাদ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:১৬ এএম |



বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশে প্রধান খাদ্যশষ্য ধান-চাল ও গমের যাতে সংকট না হয়, সে জন্য খাদ্য শষ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে একদিকে অভ্যন্তরীন উৎস্য থেকে ধান-চাল এবং বিশ্ব বাজার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গম কিনে মজুদের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর। বর্তমানে সরকারি খাদ্য গুদামে প্রায় ১৯ লাখ টন খাদ্যশষ্য মজুদ রয়েছে। এর বাইরে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই আরো প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন গম এবং ১ লাখ টন চাল যুক্ত হবে। এতে সরকারি খাদ্য মজুদ রেকর্ড ২৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তার অর্জনও বেশ সন্তোষজনক। এবার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টন। আর বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রথমে ৪ লাখ টন, পরে সেটি কমিয়ে ২ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ টন। আর ধান সংগ্রহ ২ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং এবারের বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা প্রায় পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
সংগ্রহ কার্যক্রম ভালো হওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে এখন খাদ্যশষ্য মজুদও বেশ ভালো। গত বুধবার পর্যন্ত সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্য শষ্য মজুদ রয়েছে ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৫ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ টন, গম রয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩ টন এবং ধান রয়েছে ২৮ হাজার ৬২৯ টন। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে বোরো সংগ্রহের অংশ থেকে আরো প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন চাল আসবে খাদ্য গুদামে। এতে করে শুধু চালের মজুদই হবে প্রায় ১৮ লাখ টন।
খাদ্য সংগ্রহ ও মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে চালে দাম বাড়ছে। চালের বিশ্ব বাজারে অস্থিরতাও চলছে। বিষয়টি আমরা খুবই গভীরভাবে মনিটরিং করছি। তবে এবারের বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতার প্রভাব আমাদের দেশের চালের বাজারে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এবার আমাদের দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা ধান-চাল ও গম সংগ্রহও করছি পর্যাপ্ত পরিমাণে। আমরা রাশিয়া, বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়া থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন গম সংগ্রহ করছি। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে কেনা হবে ৩ লাখ টন এবং অন্য দুই দেশ থেকে কেনা হবে আরো দেড় লাখ টন গম। রাশিয়া থেকে যে গম কেনা হবে সেটি বুধবারের ক্রয় কমিটিতে ইতোমধ্যেই অনুমদোন হয়ে গেছে। আর বাকি দেড় লাখ টন গম কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সর্বনি¤œ দর ৩১৩ ডলারে কেনা হবে ওই গম। সুতরাং সরকার পর্যাপ্ত খাদ্যশষ্য মজুদ করছে। এ জন্য দেশের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কোনো সুযোগ নেই, বরং চালের দাম কমতে পারে।’
জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) ভিত্তিতে রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই গম কিনতে খরচ হবে এক হাজার ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এতে প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৪ টাকা ৪৩ পয়সা।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই গম কিনতে অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা গম ক্রয়ের বিষয়টি অনুমদোন পায়।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য সংগ্রহ সুসংহত রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকেও গম সংগ্রহ করে থাকে। চলতি অর্থবছরে গমের চাহিদা সরকারি পর্যায়ে ৯ লাখ ২২ হাজার টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এখন পর্যন্ত গম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন গম সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান।
সূত্র জানিয়েছে, গম আমদানির প্রধান উৎস রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে দামও বেড়ে যায়। আবার ভারত সরকার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় গমের বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ কারণে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার পাশাপাশি গমের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অতি জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। গত ১৯ জুন রাশিয়ার ফরেন ইকোনমিক করপোরশন (এফইসি) গম সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি দেয়।
সেই চিঠি পর্যালোচনা করে দেশের চাহিদা বিবেচনায় এফইসির সঙ্গে ১৭ আগস্ট ভার্চুয়াল সভায় জি টু জি পদ্ধতিতে গম আমদানির চুক্তিনামা এবং মূল্য নিয়ে আলোচনা ও নেগোশিয়েশন শেষে রাশিয়া থেকে প্রতি টন সিআইএফ-এলও টার্মে ৩১৩ মার্কিন ডলার দরে ৩ লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়। উভয় পক্ষ সভার সিদ্ধান্তপত্রে সই করে।
জানা গেছে, রাশিয়ার প্রতিনিধিদল লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ৩ লাখ টন গম সরবরাহে সম্মত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ১৫ দিন পর পর ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিটি জাহাজে গম সরবরাহ করবে রাশিয়া।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ধান-চাল-গম, প্রধান এই তিন খাদ্য পণ্য মজুদে এখন আমরা খুব ভালো অবস্থায় আছি। শুধু চালের মজুদই প্রায় ১৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এর সঙ্গে সাড়ে চার লখ টন গম ও আরো কিছু চাল চলে আসলে মোট খাদ্য মজুদ ২৪ লাখ টনের বেশি হবে। সুতরাং দেশে এখন খাদ্যশষ্যের কোনো সংকট নেই, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কোনো সংহট হবেও না।
সংগ্রহ ও মজুদ ভালো হওয়ায় দেশে বর্তমানে খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশের বর্তমান জনসংখ্যার হিসেবে ২ কোটি ১৮ দশমিক ৪ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য প্রয়োজন। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরেও খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা নেই বলে মনে করছে খাদ্য বিভাগ।
এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা আরো এক সপ্তাহ বাড়ালো খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় সময়সীমা আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোরো সংগ্রহের যে লক্ষমাত্রা এবার নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি পূরণে কিছুটা বাকি থাকায় এবং খাদ্য মজুদ আরো ভালো অবস্থানে নেওয়ার লক্ষ্যেই সময় বাড়ানো হয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সময় বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মমতাজ উদ্দিন।
 উল্লেখ্য গত ১৩ এপ্রিল বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য ও সময়সীমা নির্ধারণ করে সরকার। সেদিন মন্ত্রীপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভায়  এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সভায় বোরো সংগ্রহ ২০২৩ মৌসুমে ৪ লাখ টন ধান, সাড়ে ১২ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ১ লাখ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে অবশ্য ধানের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২ লাখ টন করা হয় এবং চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা বাড়িয়ে সাড়ে ১৪ লাখ টন করা হয়। আভ্যন্তরীণ সংগ্রহের সময়সীমা প্রথমে ৭মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঠিক করা হয়। পরে সেটি বাড়িয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। আর গতকাল বাড়লো আরো এক সপ্তাহ।
এদিকে এবার প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ টাকা, সিদ্ধ চাল  ৪৪ টাকা এবং গম ৩৫ টাকা। ২০২২ সালে বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ধান-চাল ও গমের মূল্য  ছিল যথাক্রমে  ধান ২৭ টাকা,সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং গম ২৮ টাকা।













সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত দুই শিশুর মৃত্যু
আত্মঘাতী গোলে জয় নিয়ে ফিরলো রিয়াল মাদ্রিদ
প্রেমিকাকে নিয়ে সুখে থাকতে মামার বুক খালি করলেন তরুণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রেমিকাকে নিয়ে সুখে থাকতে মামার বুক খালি করলেন তরুণ
অভিযানের খবরে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছে সবাই!
কাল শুরু ওয়ানডে বিশ্বকাপ, আজ থাকছে যেসব অনুষ্ঠান
দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত দুই শিশুর মৃত্যু
বিয়ের পরদিন বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল পুলিশ কর্মকর্তার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft