কাগজে-কলমে
এশিয়া কাপের আয়োজক পাকিস্তানই। কিন্তু কার্যত সেমিফাইনাল হয়ে আসা
ম্যাচটিতে তাদেরকে খেলতে হলো ‘অতিথি’ হয়েই, সেটিও আবার ‘স্বাগতিক’ হয়ে ওঠা
শ্রীলঙ্কার মাঠে। দর্শক-সমর্থন পক্ষে নেই, চোটের কারণে দুজন শীর্ষ সারির
পেসারসহ বেশ কয়েকটি পরিবর্তনও আনতে হলো। সেটিই যেন মাঠের শক্তিমত্তায়
পাকিস্তানকে নিয়ে এল শ্রীলঙ্কার সমান্তরালে, চোটের কারণে প্রথমসারির
বোলারদের শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলেছিল তো টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই। দুই দলের
ম্যাচটিও হলো ‘জমজমাট’। দুই দফা বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার গড়িয়ে শুক্রবার চলে
আসা ৪২ ওভারের ম্যাচটি ঠেকল শেষ বলে গিয়ে। পাকিস্তানের ২৫২ রানের জবাবে
শ্রীলঙ্কাও তুলল ২৫২ রান, কিন্তু ডিএলএস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল
সেটিই। ২ উইকেটের জয়ে ১১তম বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল লঙ্কানরা।
আগামী পরশুর ফাইনালে উজ্জীবিত শ্রীলঙ্কার অপেক্ষায় আগে থেকেই ভারত।
রান
তাড়ায় প্রায় পুরোটা সময় অবশ্য শ্রীলঙ্কাই ছিল ফেবারিট, কিন্তু তবুও যেন
পাকিস্তানকে ঠিক ছিটকে দিতে পারছিল না। শাহিন শাহ আফ্রিদি যখন ৪১তম ওভার
করতে আসেন, ১২ বলে দরকার মাত্র ১২ রান। তখন পর্যন্ত নিষ্প্রভ আফ্রিদি তৃতীয়
ও চতুর্থ বলে ফেরালেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও দুনিত ভেল্লালাগেকে, দিলেন
মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে অভিষিক্ত জামান খানের সম্বল থাকল ৮ রান। প্রথম ৪
বলে এল ২, তার ওপর রানআউট প্রমোদ মাদুশঙ্কা। তখন ফেবারিট পাকিস্তান, কিন্তু
পঞ্চম বলটি চারিত আসালাঙ্কার ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি বরাবর বেরিয়ে
গেল উইকেটকিপার ও স্লিপের মাঝ দিয়ে। জামান অথবা আসালাঙ্কা—এরপর নায়ক হওয়ার
কথা ছিল একজনেরই। শূন্য থাকা স্কয়ার লেগে খেলে সেটি হয়ে গেলেন আসালাঙ্কাই।
শ্রীলঙ্কার
রান তাড়ায় ঝোড়ো শুরুর পরই দুই বছরেরও বেশি সময় পর ওয়ানডেতে ফেরা কুশল
পেরেরা থামেন রানআউট হয়ে। কুশল মেন্ডিস ও পাতুম নিশাঙ্কার ৬০ বলে ৫৭ রানের
জুটি নিশ্চিত করে—দ্রুত উইকেট না হারানো, স্বাস্থ্যকর রানরেট। ওপেনিং
জুটিতে আক্ষরিক অর্থে পেরেরাকে শুধু সঙ্গই দেওয়া নিশাঙ্কা (প্রথম ১২ বলে ০)
কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অবশ্য ভালো অবদানই রাখেন।
অবশ্য নিজের স্ট্রাইক রেট সেভাবে বাড়ানোর আগেই শাদাবের বলে ফিরতি ক্যাচ
দিয়ে থামেন ৪৪ বলে ২৯ রান করে।
পরের উইকেটের দেখা অবশ্য দ্রুতই পায়নি
পাকিস্তান। মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমার জুটিও এগিয়েছে আগেরটির মতো
করেই, এবার ৯৮ বলেই ১০০। সামারাবিক্রমা ফিফটির আগেই থামেন ইফতিখারের বলে
স্টাম্পিং হয়ে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এভাবে আউট হলেন তিনি। কিন্তু
পাকিস্তানের বড় খচখচানির কারণ হয়ে ছিলেন মেন্ডিস। ইফতিখারের বলে কাভারে
মোহাম্মদ হারিসের দারুণ ক্যাচে ধরা পড়ে সেঞ্চুরির আগেই থামার আগে সেটি
ভালোই বাড়ান তিনি। সর্বশেষ ৪ ম্যাচে তৃতীয় ফিফটি পাওয়া মেন্ডিস এশিয়া কাপে
দ্বিতীয়বার থামলেন নড়বড়ে নব্বইয়ে। নিজের পরের ওভারে দাসুন শানাকাকে ফিরিয়ে
পাকিস্তানকে আরও আশা জোগান ইফতিখারই। কিন্তু একপাশে থাকা আসালাঙ্কা শেষ বলে
গিয়ে ভেস্তে দিয়েছেন তা, উল্লাসে ভাসিয়েছেন আর প্রেমাদাসাকে। তিনি অপরাজিত
ছিলেন ৪৯ রানে, ১০ রানেই যাঁকে জীবন দিয়েছিলেন রিজওয়ান।
সেই রিজওয়ানই
আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের নায়ক ছিলেন। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টি-বিরতিটাও বড়
অসময়ে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জন্য। ২৭.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩০ রান তোলা পাকিস্তান
ধুঁকছিল। তারাই কিনা ওই বিরতির পর ৪২ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৫২! পাকিস্তানকে
এত দূর নিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল অবদান রিজওয়ানের ৭৩ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত
ইনিংসের। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেন ৪০ বলে ৪৭ রান করা ইফতিখার আহমেদ। দুজনের
জুটিতেই আসে ৭৮ বলে ১০৮ রান। দুজনই ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন, কাজেও
লাগিয়েছেন দারুণভাবে। শেষ ১০ ওভারেই পাকিস্তান তোলে ১০২ রান।
ফর্মের
কারণে পরশু রাতে ঘোষিত একাদশে না থাকা ফখর জামান দলে আসেন ইমাম-উল-হকের
চোটে, তবে ফর্ম খুঁজে পাননি কালও। তবে তিনি ব্যর্থ হলেও তাঁর নতুন ওপেনিং
সঙ্গী শফিক পান ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। বাবর আজমের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয়
উইকেট জুটিতে বেশ ইতিবাচকই ছিল পাকিস্তান। বাবর ভালো শুরু কাজে লাগাতে
পারেননি ভেল্লালাগের দারুণ এক ডেলিভারিতে এ বছর চতুর্থবারের মতো স্টাম্পিং
হয়ে থামেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
এরপর ৩০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ
হারায় পাকিস্তান। সেটিই বদলে যায় বিরতির পর। ১১ রানে কুশল মেন্ডিস
স্টাম্পিং মিস করায় জীবন পাওয়া রিজওয়ান প্রথম ৩৬ বলে করেছিলেন ২৫ রান।
তিনিই ফিফটিতে যান মাত্র ৪৮ বলে। ইফতিখার থামলেও রিজওয়ান ছিলেন শেষ
পর্যন্ত। কিন্তু কলম্বোর মধ্যরাতে তাঁকে উল্লাসের সুযোগ দেননি আসালাঙ্কারা।
এবার ফুটবলমঞ্চে মেসিপুত্রের অভিষেক
আগস্টের
শেষ দিকেই ইন্টার মায়ামির একাডেমিতে অনূর্ধ্ব–১২ দলে যোগ দিয়েই আলোচনায়
এসেছিল লিওনেল মেসির ছেলে থিয়াগো। এবার ইন্টার মায়ামির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে
অভিষেকও হলো তার। ম্যাচের তার অভিষেকের কিছু মুহূর্তও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে সতীর্থদের সঙ্গে তাকেও গোল উদ্?যাপন করতেও দেখা
যায়।
১০ বছর বয়সী থিয়াগো মূলত বয়সভিত্তিক দলের একজন হিসেবেই এদিন
ফ্লোরিডা ব্লু ট্রেনিং সেন্টারের ম্যাচটিতে মাঠে নামে। এই মাঠে ইন্টার
মায়ামির মূল দলও অনুশীলন করে। ফ্লোরিডা ব্লুতে থিয়াগোর অভিষেক হয়েছে
ওয়েস্টন এফসির বিপক্ষে। যেখানে তার দল জিতেছে ২–১ গোলে।
বাবাকে অনুসরণ
করে সন্তানের ফুটবলের পথে হাঁটার গল্পটা নতুন কিছু নয়। বাবা–ছেলের ফুটবলার
হয়ে ওঠার এমন উদাহরণ অনেক আছে। কখনো বাবার ছায়ায় আড়ালে পড়ে যান ছেলে আবার
কখনো বাবাকে ছাড়িয়ে নিজের নামেই খ্যাতিমান হয়ে উঠেন ছেলে। সাফল্য বা
ব্যর্থতার সেই পথে হাঁটতে এসেছে থিয়াগোও।
এর গত ইন্টার মায়ামি
জানিয়েছিল, ২০২৩–২৪ মৌসুমের দলের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছে থিয়াগো। ইন্টার
মায়ামির বিভিন্ন পর্যায়ের যুবদলে থাকা ১৫০ ফুটবলারের একজন হিসেবেই খেলবে
মেসির বড় ছেলে। এ মৌসুমে থিয়াগো ছাড়াও আরও ৩৪ তরুণের অভিষেক হওয়ার কথা
রয়েছে।
২০১৮ সালে ইন্টার মায়ামি যাত্রা শুরুর পর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা
করা একাডেমিটি। তবে ইন্টার মায়ামির জার্সি থিয়াগোর পরা প্রথম জার্সি নয়। এর
আগে বার্সেলোনার ৬ থেকে ৮ বছর বয়সীদের একটি প্রজেক্টে যুক্ত ছিল থিয়াগো।
এমনকি ২০২০ সালে বার্সার জার্সিতে তার করা একটি গোলের ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরালও হয়েছিল।
ইন্টার মায়ামির একাডেমিতে থিয়াগো
যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলের ভেতর মেসি ও আর্জেন্টাইনদের সমর্থকদের মধ্যে
দারুণ উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। অনেকে সে সময় থিয়াগোকে শুভেচ্ছাও জানান।
তাঁদের আশা মেসির পর তাঁর ছেলেও ফুটবলমঞ্চে নিজের ঝলক দেখাবেন। তবে এখনো তো
মাত্র শুরু। থিয়াগোর পাড়ি দেওয়ার আছে লম্বা এক পথ।