বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪
৩১ আশ্বিন ১৪৩১
ভোক্তা অধিদফতরের সভা
আলুর দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:০৯ এএম |



জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আলু আমাদের দেশে মূলত প্রধান খাদ্য। আলু উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত কয়েক বছর ধরে আলুর মূল্য স্থিতিশীল ছিল। সম্প্রতি সময়ে দেশের বাজারে হঠাৎ আলুর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছিলাম। অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডলার সংকট বা বৈশ্বিক প্রভাব থাকলেও আলুর মূল্য বৃদ্ধির কোনও যৌক্তিকতা নেই।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলুর মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  
সভায় অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, আলু দেশে উৎপাদিত পণ্য। এটি আমদানি করা পণ্য নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি বা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সঙ্গে এই পণ্যের দাম বাড়ার সম্পর্ক নেই। তারপরও আগস্ট মাসে ২০-২৫ টাকার আলু বর্তমানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলোচনায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘যে উৎপাদনের কথা আমরা শুনি তাতে আলুর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। কেন মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদন হিসেবে আলু রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উৎপাদন আর চাহিদা অনুযায়ী আলুর সংকট হওয়ার কথা নয়। এটা নৈতিকতার অবক্ষয়। কোথাও গ্যাপ হচ্ছে, যার জন্য দাম বাড়ছে।’
শ্যামবাজার আলু ব্যবসায়ীরা বলেন, এ বছর দুই মাস আগেই কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে। মোবাইল ফোনে ব্যাপারীরা দাম ঠিক করে দেয়। আমরা আলু বিক্রি করে শুধু কমিশন পাই।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আলুগুলো কোল্ড স্টোরেজ থেকে কিছুদিন আগে বের হয়েছে। আমাদের কোল্ড স্টোরেজে এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ আলু আছে। তার মধ্যে বীজ আলু আছে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। যারা বেশি পরিমাণে আলু মজুদ করে রেখেছে তারাই মূলত বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। যারা কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদ করে রেখেছে তাদের ইতোমধ্যে তিনটি নোটিশ করেছি, যেন বিক্রির পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যদি বিক্রির ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা অক্টোবর মাস থেকে নিজেরাই আলু বিক্রির ব্যবস্থা করবো। অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলু সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় তাদের পাকা রশিদের মাধ্যমে আলু ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্য করতে হবে।’
আলোচনায় ক্যাবের মহাসচিব অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করি। ভোক্তা যেন সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পায় এটাই আমাদের দাবি। এফবিসিসিআই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে জেনে আমরা খুশি হয়েছি। ভোক্তা অধিদফতর এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে সব সংস্থার সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, ‘আলু আমদানি করা পণ্য নয়। তাই ডলার সংকট বা শুল্ক আরোপের বিষয়টি আলুর মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী আলুর পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে বিধায় আলুর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনও কারণ নেই। কোল্ড স্টোরেজে আলু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাকা রশিদ নিশ্চিতের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা হলে আলুর মূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে।’
সভায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর আলুর মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রতি কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ১৭ মার্চের পর আমরা লক্ষ্য করেছি, কোল্ড স্টোরেজে আলু আসা কমতে শুরু করেছে। এ বছর আলুর উৎপাদন কম হলেও চাহিদা অনুযায়ী তা পর্যাপ্ত রয়েছে এবং আলুর কোনও সংকট নেই। আমরা মনে করি, ভোক্তা বা খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম ৩৬ টাকার ওপর হওয়া উচিত নয়।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আলোচনায় উঠে এসেছে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আলুর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আলু যে পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে এবং চাহিদা যে পরিমাণে রয়েছে তা পর্যাপ্ত বিধায় আলুর মূল্য বৃদ্ধির কোনও যৌক্তিকতা নেই। আলুর কোনও ঘাটতি নেই। কোল্ড স্টোরেজে যে পরিমাণ মজুদ আছে তা আগামী ডিসেম্বরে নতুন আলু আসার আগ পর্যন্ত যথেষ্ট।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্যতামূলক পাকা রশিদ রাখবেন এবং ন্যায্য দামে সঠিকভাবে সঠিক পণ্য বিক্রয় করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলু সংরক্ষণে জন্য ব্যবহৃত কোল্ড স্টোরেজগুলোর মধ্যে যেগুলো তালিকাভুক্ত নয় সেগুলো তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামীকাল থেকে অধিদফতর সারা দেশে বিশেষ করে শ্যামবাজার ও খাতুনগঞ্জে আলুর ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা ভাউচার নিশ্চিতে বাজার মনিটরিং জোরদার করবে। মনিটরিংয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সমন্বিত মনিটরিং টিম গঠন করে যেন কোল্ড স্টোরেজগুলো মনিটরিং করা হয় তার সুপারিশ করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হলে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে হবে। এই সেক্টেরে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২