করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই
শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্যের অবরোধ-নিষেধাজ্ঞার
কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কৃষ্ণসাগর দিয়ে
পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায় এবং একই সঙ্গে বেড়ে
যায় পরিবহন খরচ।
ফলে সারা বিশ্ব এক ধরনের সংকটে পড়ে যায়। ব্যাপক
মূল্যস্ফীতি শুরু হয়। বাংলাদেশও তার বাইরে থাকেনি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে কমতে থাকলেও বাংলাদেশে
দাম সেভাবে কমছে না।
বরং উল্টোটাই ঘটছে, দাম আরো বেড়ে যাচ্ছে। কখনো ডিম,
কখনো পেঁয়াজ, আলু, সবজি কিংবা কখনো মাছ-মুরগির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে
যাচ্ছে। আর সব মিলিয়ে ভোক্তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের বাজারের হাল দেখে এটাই স্পষ্ট হয় যে বাজারের ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
কিছু
অসাধু ব্যবসায়ীর চক্র বা সিন্ডিকেট মাঝেমধ্যেই বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে
পারে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাজারের এমন বেসামাল
চিত্রই ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)
মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে। গত রবিবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত আগস্ট মাসে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি বেড়ে
হয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ, যা জুলাই মাসে ছিল ৯.৭৬ শতাংশ। শহরের চেয়ে গ্রামে
মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯২ শতাংশ।
জুলাই
মাসে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৯ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এ সময়ে
খাদ্যপণ্যের দাম অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম
না কমাকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা
সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর
রহমান মনে করেন, এর অন্যতম কারণ হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং
সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
মূল্যস্ফীতি হলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত
আয় কমে যায়। আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৯২ শতাংশ হওয়ার অর্থ হচ্ছে,
২০২২ সালের আগস্টে একজন মানুষ যে পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কিনেছিল, চলতি
বছরের আগস্টে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা। খাদ্যপণ্যের
দাম আরো বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাড়ছে। কিন্তু
সেভাবে একজন চাকরিজীবীর বেতন বেড়েছে কি? কিংবা নি¤œ আয়ের মানুষের উপার্জন
বেড়েছে কি?
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের সংশ্লিষ্ট সরকারের যেসব বিভাগ ও সংস্থা রয়েছে, তাদের
কার্যক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা
পালন করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন বাজারকে অস্থির করতে না
পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।