
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষার্থীদের পাচঁ দফা দাবির চারটি নিরসনের
আশ্বাসে অনশন তুলে নিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায়
প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন
আন্দোলনরত ৭ শিক্ষার্থী।
জানা যায়, টানা ১০দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের
পর রবিবার বিকেল ৪ টায় অনশনে শুরু করেন সাময়িক বহিষ্কার হওয়া লোকপ্রশাসন
বিভাগের শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের
শিক্ষার্থী সালমান চৌধুরী হৃদয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের
শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ শাহরিয়া ও কাজল হোসাইন। পরে রাত ৮ টায় কম্পিউটার সাইন্স
এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান পলাশ তাদের সাথে অংশ
নেয়। দাবী আদায় না হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম এবং দুপুর একটায় মার্কেটিং বিভাগের
শিক্ষার্থী রবি দাস অনশন শুরু করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের
আশ্বাসে আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র জাহিদুল ইসলাম এবং
দুই সমন্বয়ক ইমামুল হক মাসুম ও তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী। সেখানে পাচঁ
দফা দাবির চারটি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের
উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ স্থগিত
করা, বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও অছাত্রদের হলে প্রবেশে
নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা তা মেনে নেয়।
পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ট্রেজারার অধ্যাপক ড.
মো. আসাদুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত হয়ে অনশনরত
শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙায়।
অনশন স্থগিত করার বিষয়ে
আন্দোলনের মুখপাত্র জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের অনুরোধে আমরা আলোচনায়
বসি। আমাদের পাচঁটা দাবির বেশীরভাগ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এরমধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে বহিস্কারাদেশ আজকে অফিস টাইমের মধ্যে স্থগিত করা
হবে। তারা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার কথা দিয়েছেন। অছাত্ররা হলে থাকতে পারবে না। তবে প্রক্টর
অপসারণের দাবির বিষয়ে প্রমাণ চেয়েছেন, আমরা যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে সে
ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিবে। আমরা আশ্বাস্ত হয়ে আন্দোলনটি শিথিল করছি। সময়ের
প্রয়োজনে আবারও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে দাঁড়াবো।
আন্দোলনরত
শিক্ষার্থী নাজমুল পলাশ বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন আমরা শিথিল করেছি।
আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে আমরা আরও
কঠোর আন্দোলনে যাব।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন,
শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের মাঝে সকল বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এবিষয়ে আর কিছু
বলার নেই।প্রক্টরের অপসারণের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত ছাত্রলীগের একটি
দল আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকারণে পদত্যাগ চেয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
দিয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
প্রশাসনের
সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির।
পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নাই।
তোমরা তোমাদের শিক্ষা জীবনে ফিরে যাও। আমরা তোমাদের সাথে আছি তোমাদের
আমাদের মিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা তোমাদের পুরো নিশ্চয়তার দেওয়ার পরেই
তোমরা অনশন ভাঙ্গছ এটা ধরে নিচ্ছি। এই আন্দোলন শেষ, এইখান থেকে চলে যাবা
তারপর যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলে এটার ব্যবস্থা আমরা নিবো।
সার্বিক বিষয়ে
উপচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে আইডি কার্ড
নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হবে। আর অছাত্র এবং অবৈধ কেউ হলে থাকতে পারবে
না। যে দুইজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার দেওয়া হয়ছে সেটা স্থগিত থাকবে।
এটা নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদের রিপোর্ট অনুসারে সিন্ডিকেটে
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর প্রক্টরের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে আমরা
ব্যবস্থা নিব।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে
মারধরের ঘটনায় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, প্রক্টরের অপসারণ, বহিষ্কৃত
দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ পাচঁ দফা দাবিতে এ আমরণ অনশনে
বসেন তারা।