
রণবীর ঘোষ কিংকর।
শারদীয়
দুর্গা পূজার আজ মহা অষ্টমী। ষষ্ঠী থেকে দশমী, ওই পাঁচদিনের দেবী বন্ধনার
সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন আজ। শারদীয় দুর্গোৎসবের সব চেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ তিথি মহাঅষ্টমী। মহা অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। শিল্প,
ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির শহর কুমিল্লায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না কুমারী
পূজা।
পঞ্চিকার তিথি অনুযায়ী আজ (সোমবার) সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের পূর্বে
শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি, কল্পরাম্ভ, কেবল মহাষ্টমী
কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। ১০৮টি পদ্মে প্রতিটি পূজা মন্ডপে
মায়ের অর্চণা করবে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়।
এ তিথিতে সন্ধী পূজা,
কালী পূজাসহ নারী জাতিকে সম্মান জানিয়ে মায়ের সাকার উপশনার জন্য কুমারী
পূজা করা হয়। বিকাল ৪টা ৫ মিনিট থেকে বিকাল ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে সন্ধি
পূজা। ২০১১ সাল থেকে কুমিল্লার রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হওয়া কুমারী পূজা
তৃতীয়বারের মতো এবারও বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার দুর্গতিনাশিনী মা
দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজা শুরু হয়। সকালে
ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। মা দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে
শনিবার শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়
দুর্গা পূজা। সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লা পূজা মন্ডপগুলোতে ঢাকের ঢোলে
ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালির হৃদয়তন্ত্রীর বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার।
মূলত দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু হয় সপ্তমীতে। গতকাল রবিবার চলে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ।
মহাসপ্তমীতে
ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা চলে। দেবীকে আসন, বস্ত্র,
নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দ্বীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। গতকাল
সপ্তমী পূজার দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামন্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ
পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ
স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে সপ্তমী পূজা। আজ
সোমবার মহাঅষ্টমী। দেবী পূজার ষষ্ঠী থেকে দশমী, তার মধ্যে মহা ধুমধামে
পালিত হয় মহা অষ্টমী পূজা।
হিন্দু শাস্ত্রানুসারে সব স্ত্রীলোক ভগবতীর
(মা দুর্গা) এক-একটি রূপ। ঈশ্বরকে মাতৃভাবে আরাধনাই হলো দুর্গাপূজা। মানুষ
প্রতিমায় দুর্গাপূজাই হলো কুমারী পূজা। সব নারীর মধ্যেই মহামায়া দুর্গা
বিরাজমানÑ এ তত্ত্ব উপলব্ধি থেকেই দুর্গোৎসবের অংশ হিসেবে কুমারী পূজা করা
হয়। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ বেশি সবচেয়ে’ কুমিল্লার রামকৃষ্ণ
মিশনে আরাধ্য রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণীকে সামনে রেখে গত বছরের মতো এবারও
অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা।
জানাযায়, ১৯০১ সালে কলকাতায় স্বামী
বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মঠে কুমারী পূজা হয়ে
আসছে। আর এ পূজা ঢাকার রাম কৃষ্ণ মিশনে শুরু হয় ১৯১৪ সালে এবং কুমিল্লার
রামকৃষ্ণ মিশনে শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৯ সালের করোনা ভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবের পর ২০২২ সাল থেকে পরপর তিন বছর কুমারী পূজা বন্ধ রাখা হয়েছে
কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনে।
এব্যাপারে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালনা পর্ষদের
সভাপতি অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক জানান, কুমিল্লার রামকৃষ্ণ আশ্রমে ৫০এর
দশকে তিন বছর কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের বেলুর মঠ ২০০৭ সালে
কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশন অধিগ্রহণ করায় ২০১১ সালে প্রথম কুমার পূজা শুরু হয়।
আর প্রতিটি কুমারী পূজায় কুমিল্লায় ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছরই
প্রায় ১৫-২০হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগম হয়। কোভিড-১৯ এর পর জনসমাগম ঠেকাতে
কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা বন্ধ রাখা হয়। এবছরও মূলত দুইটি কারণে
বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রথমত, এখনও শেষ হয়নি করোনার প্রাদুর্ভাব। দ্বিতীয়ত,
মিশনের মন্দিরের নির্মাণ কাজ চলার কারণে জায়গা সংকুলান না হওয়া। মা কৃপা
করলে আগামী বছর থেকে আবারও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে এমটাই প্রত্যাশা করছি।