ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিশ্বনন্দিত শেখ হাসিনা
Published : Wednesday, 28 September, 2022 at 12:00 AM
৭৬তম জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধার্ঘবিশ্বনন্দিত শেখ হাসিনাজুলফিকার নিউটন ||
বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার আবির্ভাব একটি যুগান্তকারীঘটনা। কেবল স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে নয়, নিজের চারিত্রিক গুণাবলি ও যোগ্যতার বলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শীর্ষ পদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি বলে অভিহিত করা যেতে পারে। তাকে আধুনিক ভারতেররূপকার পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু তনয়া ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যদি তুলনা করা যায় তাহলে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। ইন্দিরা গান্ধীর শৈশবকাল থেকে তার স্বনামধন্য পিতা জওয়াহেরলাল নেহরুর রাজনীতি ও সামাজিক আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একজন অসাধারণ প্রজ্ঞাবান জননেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। শেখ হাসিনাও শৈশব থেকে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমানের সংগ্রামী জীবনকে প্রত্যক্ষ করেছেন, তার স্বদেশপ্রেমের দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছেন এবং তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে ধর্ম ভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, বিশেষ করে ভাষাআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তার মানস চেতনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি পাকিস্তানের ধর্ম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সুস্পষ্টরূপে পরিহার করে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন বলিষ্ট প্রবক্তা হিসেবে আবিভুত হন।
শেখ হাসিনা তার ছাত্রী জীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। সৌভাগ্যবশত বিয়ের পর তার স্বামী বিশিষ্ট পরমানূ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ ওয়াজেদ মিয়াকে শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন তার মহান পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী হিসেবে। যদিও ড. ওয়াজেদ সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে দুরে রেখেছেন, তিনি জাতির ক্রান্তিলগ্নে স্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে উৎসাহ দিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন। ড. ওয়াজেদ সক্রিয় রাজনীতি থেকে কুকুরে থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার রচিত অসাধারণ বইটি থেকে।
চার দশক ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চলেছে, তার প্রকৃত বা প্রধান নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন এবং আজও আছেন। তাকে ঘিরেই এখনোআবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সাধারণ মানুষের সাধারণ স্বপ্ন স্বাধীনতার পরম আকাঙক্ষা, নিজের মনুষত্ব্যকে পুর্ণতা দেয়ার পরম আর্তি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো, শেখ হাসিনার মধ্যে জনগণের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার এক অদম্য বাসনা দেখা যায়। তিনি বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে যে কোন বিপদের সম্মুখীন হতে ভয় পান না। বঙ্গবন্ধুর মতোই বিপদেকে মোকাবিলঅ করেন দু হাত বাড়িয়ে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে তিনি দুদুবার ফিরে এসেছেন মৃত্যুভয়কে কারাগারের ভয়কে তুচ্ছ করে,একবার ১৯৮১ সালে আরেকবার ২০০৮ সালে। তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের কল্যাণ চিন্তাই অনিবার্ণ ।
দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে মনে করা হয় বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিবেক। বিবেকের মতো তিনি সদা জাগ্রত। গণনন্ত্রের জন্যে শোষিত বঞ্চিত মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় তিনি নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এক জীবনে এটা সম্ভব হয়েছে তার জন্যে বিস্ময় বোধ করতে হয়।
আমার বিশ^াস, শেখ হাসিনা ভাতের কষ্ট, খাওয়া পরার কষ্ট গভীর ভাবে অনুভব করেন। সেই বোধ তার রাজনীতির কেন্দ্রে , ভিত্তিতে, মুলে। এখান থেকে তিনি সরে আসেননি। তিনি ভাতের কথা ভেবেছেন আর ভোটের কথা ভেবেছেন। এই দুই অধিকার তার রাজনীতির বিশ^াসের মূলে। প্রথম অধিকার প্রতিষ্ঠা না পেলে ভোট অর্থহীন হয়ে যায়। আবার দ্বিতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা না পেলে নিরন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। তাই ভাত এবং ভোট পরস্পর প্রবিষ্ট এবং দুই অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্য নাম ; রাজনীতি। শেখ হাসিনা খুব সহজভাবে খুব সাবলীলভাবে এই লড়াই করে চলেছেন। এ্ই লড়াই গ্রামবাংলার মানুষ বোঝে, শহরের সাধারণ মানুষ বোঝে, সেজন্য সাধারণ মানুষের কাছে, গ্রামবাংলার মানুষের কাছে তার জনপ্রিযতার শেষ নেই। তিনি সবার আপা, বোন, তাই সাধারণ মানুষ তাকে ঘিরে রেখেছে। এই ঘিরে রাখা তার রাজনীতির সেরা উপহার।
বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভাত ও ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত । খেতে না পেলে মানুষ ভোট বিক্রি করে দেয়। আবার ভোটের অধিকার পেলে মানুষ খাদ্যের অধিকারের দিকে অগ্রসর হয়। এই দুই অধিকার ভিত্তি করে জাগরণের দিকে অগ্রসর হতে হয়। তাই শেখ হাসিনা ভেবেছেন অর্থনীতিকে আরো দক্ষ করতে হবে, ফুল এমপ্লয়মেন্টের সম্ভাবনায় বিশ^াস রাখতে হবে, সমাজ সংস্কারের বিশ^াস রাখতে হবে, যে সংস্কার ধারাবাহিকভাবে হ্রাস করবে শ্রেণী বৈষম্য, যাতে কোন একদিন সুখী ও ন্যায়নিষ্ঠ একটা সমাজ রচনা করা যায়। তিনি হয়তো এমন করে ভাবেন, অনেককে সঙ্গে করে তিনি ভাবনার জগৎ নাড়াচাড়া করতে থাকেন।
আমি মাঝে মধ্যে ভাবি দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজের মধ্যে এই সাহস তৈরি করেন কী করে? এর একটা কারণ হাসিনা সাহিত্যের ছাত্র, অনুপুঙ্খভাবে তিনি নানা জাতের বই পড়তে ভালোবাসেন। তিনি বই পড়েত পড়তে কাজ করেন, কাজ করতে করতে তিনি বইয়ের মধ্যে নিজেকে মগ্ন করে দেন এবং এই মগ্নতা থেকে তিনি চারপাশে চোখ তুলে তাকান। তার দেখার মধ্যে তখন ঝিকমিক করে ওঠে অসীমের স্পন্দন। সেজন্য তার কৌতুক বোধ প্রগাঢ়, কৌতুক করতে পারেন বলেই তার চারপাশে কুশ্রীতা ও মলিনতা দুরে সরে যায়। এভাবেই তিনি নিজের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করেন, তিনি হয়ে ওঠেন কাছের মানুষ, একই কাজ দুরের মানুষ।
আমরা কেন জানি মনে হয় শেখ হাসিনা খুব ভাল করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠায় সেপাই এবং খোয়াবনামা উপন্যাস পড়েছেন, খুব ভালো করে শওকত ওসমানের বনী আদম এবং জননী উপন্যাস পড়েছেন, পড়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ভিক্ষ বিষয়ক গল্প। পড়তে পড়তে তিনি ভেবেছেন মানুষ, গ্রাম বাংলার হতদরিদ্র মানুষ কিভাবে ভাতের জন্য লড়াই করে, সুযোগ পেলেই ভাতের লড়াইকে ভোটের লড়াইয়ের দিকে নিয়ে আসে। তারা লড়াকু মানুষ, অজেয় মানুষ, অমর মানুষ, এই মানুষজনের কাছে শেখ হাসিনার দায়ভাগ আছে। এই দায়ভাগই তার রাজনীতি কিংবা তার নিয়তি। যতবার হত্যাকারীরা তাকে মারবার চেষ্টা করেছে, ততবারই তিনি মাথা উচু করে দু হাতে মৃত্যুকে ঠেলে অনন্ত আকাশের দিকে মাথা উচু করে দাড়িয়েছেন। আকাশ তার শিরস্ত্রাণ, মাটি? মানুষ তার কর্ম, তার মৃত্যু নেই মৃত্যু নেই।
সাধারণ মানুষ তাদের জান দিয়ে তাকে রক্ষা করে চলেছে। তার জেদ সাধারন মানুষের খাওয়া পরার ব্যবস্থা তিনি করবেনই, এর আগে পৃথিবী থেকে তার বিদায় নেওয়া চলবে না। এই প্রতিজ্ঞা তার সাধারণ মানুষের কাছে, এই প্রতিশ্রুতি তার সাধারণ মানুষের কাছে। যখন তিনি হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন কি তার মনে ঝিলিক দিয়ে ওঠে না বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি, শেখ হাসিনা, ভাত ও ভোটের লড়াই করে যাচ্ছেন, এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি হাসিনা, পিতামাতার লাশের ওপর হামাগুড়ি দেওয়া শিশুটিকে বাচিয়ে চলেছেন।
শেখ হাসিনা নিজের মতো করে বাংলাদেশকে বুঝতে চেয়েছেন। এই চাওয়ার মধ্যে অসাধারণ এক কল্পনার বোধ রয়েছে, যে বোধ এক ঐতিহ্য ও এক সভ্যতার প্রতীক। তার মধ্যে ঋজুতা নেই, আছে বিভিন্নতা, তিনি প্রায়ই বদলে যান তাঁর বক্তব্যের বিভিন্নতায়। তাঁকে মনে হয় কল্পনাকুশল, আশাবাদী, আত্মবিশ্বাসী, তার মধ্যে ভয় নেই, তেমনি তিনি হাসি-খুশি। তিনি বিশ্বাস করেন যে, কেবল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো, নিজেদের অর্থায়নে। এই অর্থায়ন নেহায়ত টাকা পয়সার না, দৃঢ়চিত্ত স্বপ্নের, স্বপ্ন প্রয়োগের, ভবিষ্যতের দিকে তাকাবার স্বচ্ছতায়। এ যেন নদীর দিকে তাকানো, যে পদ্মা নদী ভাটিয়ালি গান উদ্ভাবন করেছে, সেই গান গেয়ে কবি নদীর উজান পারি দেয়ার। যাঁরা ভাটিয়ালি গান গেয়ে নদী পাড়ি দেয় তারাই পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখতে জানে। এভাবে বাংলাদেশ স্বপ্নের দিকে চেয়ে থাকে। এই তাকানোতে ধরা দেয় একটা নতুন, অবাধ এবং জাঁকালো ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থার নাকাল টাকা-পয়সাওয়ালা বিশ্বব্যাংক ধরতেই পারে না। এভাবেই গরিব দেশ বড়লোকের দেশের ভ্রƒকুটি অস্বীকার করে।
শেখ হাসিনা এভাবে কল্পনাকুশল হয়ে ওঠেন এবং ইতিহাসে মগ্ন হন। হয়ে ওঠেন স্থিতধী, প্রাজ্ঞ, ব্যাপৃত, যে কোন কাজে নিজেকে ছড়িয়ে দেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রতিষ্ঠানে, জাতিবর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির টাইপের ভেতর টঙ্গীপাড়ার লোকজনদের খুঁজে বেড়ান, যেখানে তিনি কাটিয়েছেন তাঁর শৈশববেলা। তাঁর সরকারের ভিত্তি স্পষ্ট নীতিমালার ওপর, তাঁর ব্যক্তিগত অফিস একটা নিয়মে পরিচালিত। তাঁর কাজের অভ্যাস নিয়মিত: সকালে নামাজের পর নাশতা, খবর কাগজ পড়া, তাহলে দেখতে দেখতে অফিস যাওয়া, সব অর্থেই তিনি সংসারী, ভগ্নী, জননী। তিনি বিশ্বাস করেন একটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, যে জীবনযাত্রা তিনি উলট-পালট করতে চান না। শেষ হাসিনা ফ্লেক্সিবিলিটিতে বিশ্বাস করেন, উদ্ভাবনে বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে তাঁদের দক্ষতা পরখ করেন। তাঁর আমলাতন্ত্র, কিছু পরিমাণ ব্যালটিক, খুব সম্ভব ইচ্চাকৃতভাবে। তাঁর নিজের অফিস পরিচ্ছন্নভাবে সংগঠিত নয়, তিনি একটা উঁচুস্তরের ব্যক্তিগত সরকার প্র্যাকটিস করেন। প্রাতিষ্ঠানিক অর্থরিটির যাঁরা এ্যাডভোকেট তাঁদের তিনি পাগল করে ছাড়েন, কিন্তু এটাও তো সত্য অন্য কোনভাবে তিনি যত অর্জন করতে চান তা অর্জন করা সম্ভব হতো না। তিনি সবার বোন আপা, ভগ্নী: এই অভিধার ওপর ভিত্তি করে তিনি সরকার পরিচালনা করেন। এই পরিচালনা তাঁকে প্রথম থেকেই ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
শেখ হাসিনা সব সময় নিজেকে দেখেছেন ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে, তিনি তাঁর স্মরণযোগ্য ভাষণ এবং বক্তৃতার লাইনগুলো ধীরস্থিরভাবে উচ্চারণ করেন আলোকের ভেতর, তিনি জানেন তাঁর কাজ ও তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে যাবে পরীক্ষা ও বিচারের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে। তিনি সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে তৈরি করে অসাধারণ করেছেন, নিজের জীবদ্দশায় নিজেকে ইতিহাসের বিষয় ও ফিগারে পরিণত করেছেন, যেন তিনি লেজেন্ডের অংশ, এক সঙ্গে বাস্তবতার অংশ, তিনি আমাদের সময়কালের বিশাল এক মানুষ। তাঁকে অস্বীকার করা যায় না, তাঁকে উপক্ষো করা যায় না, তিনি সর্ব অর্থেই বাস্তব।