
নিজস্ব প্রতিবেদক ||
জনপ্রতিনিধি
হয়েও প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে
জাকির হোসেন নামে ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা
মহানগর পুলিশের অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ- ডিবি। গ্রেপ্তার জাকির কুমিল্লার
মেঘনা থানার ২ নম্বর মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান।
প্রতারণার টাকায় ঢাকায় অনেক প্লট রয়েছে তার। রয়েছে বাড়ি ও ফ্লাট।
সুলভ
মূল্যে গাড়ি কিনে ভাড়া দেওয়ার (রেন্ট-এ-কার) ব্যবসায় লাগিয়ে মুনাফা দেওয়ার
নামে সংসদ সদস্য (এমপি), পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), পুলিশ সুপারসহ
বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ৩০০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার
অভিযোগে রাজধানীর মুগদা থানার একটি মামলার সূত্র ধরে গত বুধবার রাতে
কুমিল্লার মেঘনা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এ সময় তার কাছ
থেকে ২ মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর)
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য
জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান
অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারণার অভিযোগে জাকিরের
বিরুদ্ধে গত ৭ সেপ্টেম্বর মুগদা থানায় একটি মামলা হয়। ডিবি তেজগাঁও বিভাগের
তেজগাঁও জোনাল টিম এ মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তিনি বলেন
তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, জাকির চেয়ারম্যান বন্দর থেকে স্বল্প দামে
গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেন। সেই গাড়ি
রেন্ট-এ-কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনার জন্য চুক্তিও করেন। একই গাড়ি
দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করেন
তিনি। একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি একাধিক জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি
করেন।
তিনি আরো জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে শুধু ইঞ্জিন
নম্বর দিয়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধের চুক্তি করে কিছুদিন কিস্তি দিয়ে পরে
কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও আগে বিক্রি করা
গাড়ি স্বল্প দামে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ
থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করায় ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে অভিযোগ
করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি।
ডিবির
অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়েও জাকিরের
প্রতারণার শেষ নেই। বিভিন্ন সময়ে তিনি বন্দর থেকে স্বল্পমূল্যে গাড়ি কিনে
দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্নজনের কাছ অর্থ নিয়ে সেই টাকা নিয়ে একই রেজিস্ট্রেশন
নাম্বারের গাড়ি জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করতেন বার বার। এর বাইরে
বিভিন্নজনের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে কখনো কখনো গাড়ি কিনতেন ডাউন পেমেন্টে,
আবার কাস্টমারকে না জানিয়েই নিতেন ব্যাংক লোন। সেই টাকা ভাড়ায় খাটানোর কথা
বলে চুক্তির পর কয়েক মাস ঠিক মতো অর্থ পরিশোধ করতেন তিনি। তবে কয়েক মাস পর
থেকে তিনি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতেন। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এভাবে
অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন।
কয়েকজন এমপি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন
কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে চেয়রম্যান জাকির
প্রতারণা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে রেন্ট-এ কারে চুক্তিও করেন
তিনি। সেই অনুযায়ী প্রতিমাসে ঠিকই টাকা দেন। এতে করে তাকে বিশ্বাস করেছেন
সবাই।
যেভাবে প্রতারণায় জড়ান জাকির
নির্বাচনে তার অনেক
টাকা খরচ হয়েছে, এ টাকা তোলার জন্য তিনি প্রতারণার পথ বেছে নেন দাবি করে
জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানিয়েছে, তিনি ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে
গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। পরে তিনি ঢাকায় লেগুনা চালানো শুরু করেন। দুই
বছর লেগুনা চালানোর পর তিনি একটি গাড়ি কেনেন। কুমিল্লার তাঁর সঙ্গে পুলিশের
এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই কর্মকর্তা তাঁকে একটি গাড়ি কিনতে ভাড়া দেন।
ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের
নেতাকর্মীদের পরিচয় হয়। এই সখ্যের সূত্র ধরেই অল্প দামে গাড়ি কিনে ভাড়ায়
খাটানোর প্রলোভনের ফাঁদে পান দেন অনেকেই। তাঁদের একটি বড় অংশ পুলিশ
কর্মকর্তা। এ ছাড়া তিনজন এমপিও কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
ডিবি
কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের
মালিক হন জাকির। কুমিল্লায় তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। ঢাকা ও
আশপাশের এলাকায় জমি কিনেছেন। ঢাকায় তাঁর একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। সম্পদের
মালিক হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় স্থানীয় পর্যায়ে যুবলীগের পদ বাগিয়ে নেন।
একপর্যায়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।