ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়েছে খুন, টার্গেটে ‘মাঝি-স্বেচ্ছাসেবক’
Published : Saturday, 24 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 24.09.2022 2:22:43 AM
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়েছে খুন, টার্গেটে ‘মাঝি-স্বেচ্ছাসেবক’মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে। ফলে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের অবস্থানরত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। ক্যাম্পে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপে-গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্রসহ নানা সহিংসতা লেগেই রয়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারাও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সূত্র মতে, গত ৪ মাসে ক্যাম্পে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন ১৫ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক দল মাঠে নামার পর থেকে মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। হত্যার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থাকে অপরাধীদের তথ্য সরবরাহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
এসবের পাশাপাশি নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেও ঘটছে হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে এরশাদ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।তিনি এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এইচ ব্লকের বাসিন্দা।
১৪-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মাসুদ আনোয়ার জানান, ক্যাম্পে এরশাদ নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে হত্যার কারণ এখনো অজানা। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।
এর আগে মঙ্গলবার(২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে রাতে পাহারায় নিয়োজিত থাকা মো. জাফর (৩৫) নামে এক স্বেচ্ছাসেবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১৫ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ মাসে ১৫ খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব খুনের শিকার রোহিঙ্গারা ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছাসেবক।
উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আমর্ড পুলিশের তিনটি ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। এপিবিএনের তথ্য মতে, ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ এরশাদ (২২) নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর (৩৫) নামের এক মাঝি। ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন আরেক স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস (৩৫)। ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা, ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন।
৮ এপিবিএন এর উপ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর ক্যাম্প-১৮ এর একটি মাদরাসায় ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে। এসব হত্যাকান্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে সকলেই যখন উদ্বিগ্ন, তখন বিকল্প হিসেবে চালু হয় স্বেচ্ছায় পাহারা। ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে পাঁচজন করে রাতে স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়া শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮ এপিবিএন এর আওতাধীন ১১টি ক্যাম্পের ৬৪ টি ব্লকে ৭৭৩ টি সাব-ব্লকে স্বেচ্ছায় এ পাহারা ব্যবস্থা চালু হয়। প্রতি রাতে তিন হাজার ৮৬৫ রোহিঙ্গা পাহারা দেন ১১টি ক্যাম্প। তারা সন্দেহজনক লোকের আনাগোনা, চিহ্নিত অপরাধী, মাদক বেচাকেনাসহ নানা অপরাধের তথ্য দিচ্ছে এপিবিএনকে।
তিনি আরও জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মত অপরাধ কয়েকগুণ কমেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আরও জানান, জামতলী ক্যাম্প থেকে চালু হওয়া স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থা এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে চলছে। স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়ার এই পদ্ধতির কারণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে। এর জেরে অপরাধিরা এখন স্বেচ্ছাসেবক এবং মাঝিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ স্বদেশে ফেরত নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে হয়ে উঠেছিলেন রোহিঙ্গা মুখপাত্র হিসেবে। মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠা মেনে নিতে না পেরে রোহিঙ্গাদেরই একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে।
তিনি জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডটি সুনিদিষ্ট টাগের্ট কিলিং হিসেবে ধরা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র হয়ে উঠা এবং হওয়ার চেষ্টা করছে এমন মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় খুন করা হচ্ছে বলে মনে হয়। এখানে ভিন্ন কোনো মহলের ইন্ধন থাকতে পারে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন অপরাধে ক্যাম্পের ঘটনায় যেসব মামলা হয় তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ক্যাম্পের বাইরে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। প্রয়োজনে ক্যাম্পের ভেতরে এপিবিএনকেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।