১৯
সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে
রচিত হলো নতুন এক ইতিহাস। দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলের শিরোপা জিতল
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। বৈশ্বিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক শঙ্কা—সব কিছু
পেছনে ফেলে বাংলাদেশ জানিয়ে দিল মেয়েরা পারে। প্রমাণিত হয়ে গেল বাংলাদেশ
মেয়েদের ফুটবলে উন্নতি করেছে।
এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের মেয়েদের স্বপ্নটা আরো বড় করে দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রফি জয় আরো ভালো করার অঙ্গীকারই যেন তুলে ধরল।
আন্তর্জাতিক
খেলায় এমন একটি জয়ের জন্য দেশের ফুটবল ভক্ত ও অনুরাগীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা
করেছেন। সোমবার আমরা মাঠে দেখেছি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও জয়ের
ক্ষুধা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাঁর দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বলেছেন,
‘তাঁরা আসলে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছেন। দেশের প্রতি, মা-বাবার প্রতি তাঁদের
যে কৃতজ্ঞতাবোধ, সেটা তাঁরা দেখিয়েছেন। ’ ফিটনেস ঠিক রাখা, স্কিলের
দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা—এসব এক দিনে সম্ভব হয়নি। এভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে
যাওয়া, সুন্দর-উপভোগ্য-দাপুটে ফুটবল খেলা সম্ভব হয়েছে দলের মধ্যে বোঝাপড়ায়
কোনো ঘাটতি ছিল না বলেই। এই স্বপ্নযাত্রা মাথায় রেখেই তো ২০১৬ সালে
দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু। সবাইকে একসঙ্গে রাখা গেছে বলেই তৈরি হয়েছে
বোঝাপড়া। জন্ম নিয়েছে বড় কিছু করে দেখানোর বিশ্বাস। দৃঢ় মানসিকতা তৈরি
হয়েছে। আর এসব থেকেই সোমবারের ইতিহাস রচনা। শতভাগ উজাড় করে খেললে জয় সম্ভব,
এই বিশ্বাস নিয়েই নেপালের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আর
দেশকে সত্যিকার অর্থে কিছু দিতে চাইলে তা যে সম্ভব, সন্ধ্যার উচ্ছ্বাসই তার
প্রমাণ।
গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠে সুযোগ কাজে লাগাতে
পেরেছেন বলেই বিজয়ীর হাসি হেসে মাঠ থেকে ফিরেছেন। এই জয় দেশের ফুটবলের জয়।
ফুটবল মানবিকতার জয়। প্রতিপক্ষের মাঠ। মাঠে তাঁদের নিজেদের দর্শক।
আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই বৃষ্টিভেজা ভারী মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌরভ
ছড়িয়ে জয়ের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে।
ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির
সম্পর্কটা শুধু যে অনেক পুরনো তা-ই নয়। এই সম্পর্ক আবেগেরও। আমাদের মহান
মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি খেলার মাঠে আরেক ফ্রন্ট খুলে
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে
১৬টি ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বে আর কোনো দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সেই দেশের
ফুটবলারদের এমন উদ্যোগের কোনো নজির নেই।
বাঙালি ফুটবলকে কখনো বিনোদনের
মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। দেখে আবেগ দিয়ে। এই জয় অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে
কাজ করবে। ফুটবলের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা বাড়বে এই জয়ের
মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে যে সামাজিক বাধা
ছিল, সেটাও অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।