Published : Tuesday, 20 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 20.09.2022 12:22:37 AM

তানভীর দিপু ||
কখনো
সোহেল, কখনো হাবিব আবার কখনো আদনান এভাবেই একের পর এক নাম পাল্টিয়ে
প্রতারণা করে আসছিল মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম এক সদস্য সোহেল। ইউরোপে
নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি
টাকা। ভূক্তভোগীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুমিল্লা থেকে ওই চক্রের মূল
হোতাসহ ৩ জন ধরা পড়ে র্যাবের জালে।
সোমবার দুপুরে নগরীর শাকতলা র্যাব
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর ক্রাইম প্রিভেনশন-২ কোম্পানী
অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, রোববার রাতে
সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা
করে মানব পাচার চক্রের মূলহোতা সদর দক্ষিন উপজেলার মাটিয়ারার বাসিন্দা
সোহেল মজুমদার (৩২), মোঃ জাকির হোসেন (৪২) ও কাজী আবু নোমানকে গ্রেপ্তার
করা হয়।
সোহেল মজুমদারের বিরুদ্ধে স্ইাপ্রাসে নথিপত্র, প্রতারণা ও মানি
লন্ডারিং আইনে অন্তত ৮টি অভিযোগ রয়েছে। আটককৃতদের কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল
থানায় সপোর্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর
কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার ধনাইতরী গ্রামের ভুক্তভোগী দুলাল মিয়া
র্যাবের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করে। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে
সাইপ্রাস ও পরবর্তীতে খুব সহজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে টাকা উপার্জনের
প্রলোভন দেখিয়ে তার ছোট ভাই সাইফুলকে গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির বিদেশে
পাঠানোর নামে কয়েক দাফায় সাড়ে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীর্তে মোঃ
সাইফুলকে সাইপ্রাস নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দুবাই নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে
একটি রুমে তাকে আটকিয়ে রেখে আরো চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবত্তীতে আরো
তিন লাখ টাকা দাবী করে। পরে উপায় না পেয়ে বিষয়টি র্যাবকে জানানো হয়।
অপরদিকে
১৫ সেপ্টেম্বর আরেক অভিযোগে জানা যায়, মোঃ ইব্রাহীম নামে এক ব্যাক্তি থেকে
সোহেল একটি মেয়েকে চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে করে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব লাভের
মাধ্যমে ইউরোপ অধ্যুষিত দেশে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সাড়ে আট লাখ
টাকা হাতিয়ে নেয় ।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, সোহেল
মজুমদার তার নিজের ও পিতা মাতার নাম পরিবর্তন করে ২০১৪ সাথে স্টুডেন্ট
ভিসায় সাইপ্রাসে (গ্রীস) বসবাস শুরু করে। তখন তার ভাইদেরসহ কয়েকজনকে
সোইপ্রাস নিয়ে কন্ট্রাক ম্যারেজের মাধ্যমে জার্মানী ও পর্তুগাল এ প্রেরণ
করে। এতে তার পরিচিত বেড়ে যায়। যেহেতু সাইপ্রাসে থেকে কাজ করে টাকা আয় করা
তার জন্য কষ্টকর এবং একই সাথে অনলাইন ভেটিং এ আসক্ত হয়ে পড়ায় তার প্রচুর
পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তাই মানব পাচারের এই প্রক্রিয়াকে সে পেশা হিসেবে
বেছে নেয়। তার এই পাচার প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী ও সহজতর করার জন্য সে
দেশে আসামী জাকির ও নোমানকে তার মানব পাচার চক্রে নিয়োগ করে প্রতারনা শুরু
করে। সোহেল ইতিমধ্যে প্রায় ২৫-৩০ জনকে সাইপ্রাসে নিয়ে যায় ও ইউরোপের
অন্যান্য দেশের কোন মেয়েকে টাকার বিনিময়ে চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে করে
নাগরিকত্ব লাভের কথা বলে ৪০ থেকে ৫০ জন সাইপ্রাস প্রবাসী বাঙ্গালী সকাছ
থেকে জনপ্রতি সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশে পালিয়ে আসে।
২০১৯ সালে
সাইপ্রাস সরকার গ্রেফতারকৃত সোহেলকে তালিকাভূক্ত অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে
ভূয়া নথিপত্র, প্রতারণা ও মানি লন্ডারিং আইনে ৮টি অভিযোগ ইস্যু করে। ভয়ংকর
এ প্রতারকের কাছ থেকে টাকা ফেরতসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান
ভূক্তভোগীরা।