
অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ||
নেত্রকোনায়
বন উজাড়: পাহাড়, হাওর ও সমতল এ তিনস্তর বিশিষ্ট বনভূমি নিয়ে নেত্রকোনা
জেলা গঠিত। ২৫ লক্ষ অধিবাসীর এজেলার আয়তন ২,৮১০ বর্গকিলোমিটার বা ৬,৯৪,০৭০
একর। বনভূমির পরিমান মাত্র ১,৯৭৫ একর। যা জেলার মোট আয়তনের .৩০ শতাংশ।
যেটুকু বনভূমি আছে তা চোরাকারবারীরা বন বিভাগের যোগসাজশে কেটে যাচ্ছে।
ধ্বংশ করছে পরিবেশ। বন ধ্বংশের কারনে আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে শুনা যায়নি।
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাকৃতিক বনরক্ষা করে সামাজিক বনভূমি বাড়াতে
খাসজমিতে, রাস্তারপাশে নদীর চরে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন গড়ে
তুলতে হবে। জেলার কলমাকান্দা ও দূর্গাপুরের পাহাড়ি বনে নেই তেমন কোন
নজরদারি। পাহাড় থেকেও কাঠ কেটে নেয়া হয় ইটভাটা ও ‘স’ মিলে। পাহাড়ি বনায়নকে
ধংস করা হচ্ছে। প্রতিদিন পাহাড়ি বন থেকে নির্বিচারে গাছ কেটে নিচ্ছে
বনখেকোর দল। যদিও গাছ কাটতে হলে সরকারীভাবে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তদারকি
ও নজরদারি না থাকাতে বিনা অনুমতিতে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনখেকোরা। জেলায়
বনভূমি অত্যন্ত কম। বনভূমি কমে যাওয়ায় বেড়ে চলেছে অসময়ে বৃষ্টি, খরা,
অতিবৃষ্টি, দাবদাহ, বজ্রপাত, ঘূর্নিঝড়, বন্যার মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ।
পাহাড়
নিধনে কসবা: গোপীনাথপুর ও বায়েক ইউনিয়েনের প্রায় ৩৭৫ একর জমি নিয়ে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় পাহাড়ি অঞ্চল। পাহাড় কাটার অবস্থা দেখে
মনে হয় পাহাড় খেকোরা বেপরোয়া হয়ে চলেছে। পাহাড়গুলো কোন প্রকারেই রক্ষা করা
যাচ্ছে না। মামলা, ভ্রাম্যমান আদালতের বিভিন্ন অভিযান ও কারাদন্ড দেয়ার পরও
পাহাড় খেকোদের দমানো যাচ্ছে না। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাটি বিক্রি করে
অনেক টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করছে। অনুমান করা যায় তাহারা ৫০ একরের মত
পাহাড় কেটে ফেলেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ঐ এলাকা পাহাড়শুন্য হয়ে যাবে।
ইউনিয়ন দুটি উপজেলা হেডকোয়াটার থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় অভিযান
চালানোর পরও মাটিকাটা আবার আরম্ভ হয়েছে বলে শুনা যায়। মাটি বিক্রি করে যে
পরিমান টাকা আয় হয় তা জরিমানার তুলনায় নগন্য। মাটি বিক্রি করায় একজনকে এক
মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এমন শাস্তিকে তোয়াক্কা করছে না পাহাড়খেকোরা।
জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর কোন কার্যকর ভূমিকা রাখচেনা।
প্রশাসনকে কঠোর অবস্থায় গেলে এ পাহাড় নিধন বন্ধ হবে বলে সবার ধারনা।
চীনে
প্রচন্ড দাবদাহ: সিচুয়ান এবং চংকিং চীনের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত দুটি
প্রতিবেশী প্রদেশ। এই এলাকাটি বর্তমানে চলমান দাবদাহের শিকার। সম্প্রতি ঐ
এলাকার তাপমাত্রা ৪০০ সেলসিয়াস। ইলেট্রিসিটি সংকটে আছে এলাকটিতে ২৬ ডিগ্রির
কম এসি চালাতে অফিস আদালতে নির্দেশ আছে। অস্বস্থিকর গরম থেকে বাঁচতে মাটির
তলদেশে মানুষজন ছুটে চলেছে। মানুষজন ‘হটপট’ খ্যাত মাটির নীচের
দোকানগুলোতে খাবার খাচ্ছে একটু সময় কাটাচ্ছে। মাটির গুহায় যেখানে দোকান
সেখানে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাহিরের ভূমন্ডলে গরম লাগতেও নীচের
জায়গাগুলো যথেষ্ট ঠান্ডা। তাই দোকানগুলো খুবই জমজমাট হয়ে উঠেছে। ব্যবস্থা ও
খাওয়ার জন্য নীচের এই দোকানগুলোতে বেশ প্রশান্তি মেলে। দোকান ছাড়াও
সেখানের গুহাগুলোতেও সময় কাটাচ্ছে মানুষ। খালি পড়ে থাকা গুহাগুলোতে পাটি,
চাদর বিছিয়ে বিশ্রামের উপযোগী করছেন মানুষ। তাপ থেকে রেহাই পেতে এ এক অভিনব
পদ্ধতি। অফিসের থাকা জায়গাগুলোতে বরফের চাই বসিয়েছেন অফিস কর্মচারীরা।
একই সঙ্গে ফিরে এসেেছ হাতপাখা। বিদ্যুতের সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাসা,
অফিস ও বিভিন্ন জায়গায়। ট্রেন চলার সময় ভেতরে ব্যবহৃত হচ্ছে যৎসামান্য
লাইট, বগিগুলোতে ধিমি ধিমি আলোই জ্বালানো হচ্ছে। অফিস ও বাড়ী সবজায়গায়ই
সময়সূচী মেনে লিফট চালানো হচ্ছে। প্রচন্ড গরম থেকে সৃষ্ট খরার কারনে নানাহ
ভোগান্তিতে আছে ঐ অঞ্চলের বসবাসরত মানুষগুলো।
বিদ্যুৎ সংকটে খোদ বৃটেন:
লন্ডনের গৃহিনী জেনিফার জোনস তার প্রিপেইড মিটারে টাকা ঢোকাচ্ছে এবং
কিছুক্ষণ পড়েই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে মিটারকে আরও টাকা খাওয়াতে
হচ্ছে। ৫৪ বছর বয়সী এ বৃটিশ নাগরিক তার সময়ে সবচে খারাপ আছে বলে বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন, জীবন যাত্রার ব্যয় এতই বেড়েছে যে এটা মোকাবেলার ক্ষমতা
আমার নেই। তিনি আরও বলেন, আমি আমার ভাড়া, কাউন্সিল ট্যাক্স ও দিতে পারি না।
জেনিফারের মত নিম্ন আয়ের লোকজনের জন্য আরও খারাপ সময় আসছে। কারণ দেশটির
জ্বালানী নিয়ন্ত্রন সংস্থা জানাচ্ছে এ খাতে আরও ৮০% বেশি খরচ বাড়ানো হবে।
নতুন করে গ্যাস বিদ্যুতের বাড়ানো হলে ব্রিটেনে প্রতি গ্রাহকের খরচ বছরে এক
হাজার নয়শত একাত্তর পাউন্ড থেকে বেড়ে তিন হাজার পাঁচশত উনপঞ্চাশ (৩.৫৪৯)
পাউন্ড দাড়াবে। প্রতি গ্রাহকের বার্ষিক গ্যাস বিদ্যুৎ বিল হবে বাংলাদেশীয়
মুদ্রায় তিন লক্ষ আটান্নব্বই হাজারের (৩,৯৮,০০০) ও বেশী। শুধু তাই নয়,
আগামী বছর জানুয়ারীতে আরেক দফা বেড়ে তা গ্রাহক প্রতি চার হাজার পাউন্ডে
গিয়ে দাঁড়াবে। দাতব্য সংস্থা ক্রিশিয়ানস এগেইনষ্ট পোভার্টির একজন
পৃষ্ঠপোষক জন টেলর জানিয়েছেন, যারা কখনো ঋণ সমস্যায় পড়েননি। তাদের অনেকে
এখন ঋণ বিষয়ক হেল্পলাইনে যুক্ত হচ্ছেন। ব্রিটেনের দারিদ্রের উপর দৃষ্টি
নিবন্ধনকারী অলাভজনক সংস্থা জোসেফ কাউন্ট্রি ফাউন্ডেশনের মে ২০২২ এর
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ১০ লক্ষ নিম্নআয়ের পরিবারকে বিল পরিশোধের জন্য
অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয়েছে। এ পরিস্থিতির কারণ হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ে বৃটেনের
তাপমাত্রা বেড়েছে আবার তাপমাত্রা বাড়ার কারনে বিদ্যুৎ সংকটের উদ্ভব হয়েছে
এবং বিদ্যূৎ উৎপাদনে জীবাষ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা
চিন্তা করা হয় নাই।
বহুতল ভবন চাইনা, খেলার মাঠ চাই: “আমরা বহুতল ভবন
চাই না, আমরা খেলার মাঠ চাই।” ‘হোক প্রতিবাদ- বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়েরই
থাক।’ এভাবে শত প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে খেলার মাঠ রক্ষার দাবি জানায় শিশু
শিক্ষার্থীরা। পটুয়াখালী জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারী বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী ২৮ শে আগষ্ট’২২ ইং রোজ রোববার সকাল ১০টা থেকে
দুপুর পর্যন্ত খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে এমন আন্দোলন করে। এসময় শিক্ষকরা
প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করতে চাইলে
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। পরে পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলে
পৌছে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করেন। এদিকে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের
তোপের মুখে পড়ে শিক্ষকরা স্কুলের মুল গেট খোলে দিলে সড়কে বেড় হয়ে বিক্ষোভ
করে তারা।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও
সদস্য, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।