
শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, বর্তমানে কুমিল্লায় সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা কেমন চলছে। কারণ, এককালে কুমিল্লা শহরকে সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান বলা হতো। এখানে ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকগণ। অজয় ভট্টাচার্য, সঞ্চয় ভট্টাচার্য, নারায়ণ চৌধুরী, অজিতকুমার গুহ, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, সুধীর সেন, সুধা সেন, উর্মিলা সিংহ প্রমুখের নাম উল্লেখ করে বলতে শুনেছি তাঁরা ছিলেন সাহিত্যচর্চায় কুমিল্লার গৌরব। এখানেই ‘পূর্বাশা’ পত্রিকার জন্ম হয়েছিল, ভিক্টোরিয়া কলেজ বৎসরে দুটি কলেজ-ম্যাগাজিন বের করতো, মানে-গুণে ছিল উন্নত, মহেশ ভট্টাচার্য ‘বণিক’ নামে পত্রিকা বের করতেন নিয়মিত। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তীতে ছোট-বড় সংগঠনের পক্ষে লিটল ম্যাগাজিন বের হতো, ছিল দেয়াল পত্রিকা।
সকাল-সন্ধ্যায় পাড়ায় পাড়ায় গানের আসর বসত। গানের স্কুল ছিল। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসিত চৌধুরী, কুলেন্দু দাশ, মন্টু সিংহ, পরিমল দত্ত, তোতা মিয়া প্রমুখেরা গান শিখাতেন, নাচ শিখাতেন। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী পাড়ায়-মহল্লায় এবং মহেশাঙ্গনে, বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তনে, অভয় আশ্রমে উদযাপন হতো। এমন কি কান্দিরপাড়ে সুইট হোম, কালুর চা স্টলে, জলযোগে, সুইট এ্যাড়োতে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা বসত নিয়মিত। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ছিল, সেখানে ইনডোর খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকলেও গানের আসর বসত, কবিতা আবৃত্তি হতো। পারিবারিকভাবে মৌলভীপাড়ায় জানু মিয়া চৌধুরী সাহেবের বাড়িতে গানের আসর বসত, দারোগাবাড়িতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু ছিলেন মার্গ সঙ্গীতের বিখ্যাত শিল্পী, এখানে সমঝদারদের মিলনমেলা বসত। চর্থার রাজবাড়িতে অর্থাৎ নবদ্বীপ দেববর্মণের বাড়ি তো ছিল সঙ্গীতের তীর্থভূীম। তিনি ছিলেন যন্ত্রশিল্পী। বাড়ির কাজের লোক আনোয়ার-মাধব ছিল স্বভাব গাইয়ে, যাদের হাত ধরে আজ ভারতবিখ্যাত এসডি বর্মণ (শচীন দেববর্মণ)। এ বাড়ির মেয়েরাও গানে ছিল পারদর্শী। এই তো সেদিনের কথা।
১৯৬১ সালে যখন গ্রাম থেকে কুমিল্লায় এসে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলাম, সুপারিবাগানে গুহ পরিবারে থাকি, তাঁদের পরিচিতিতে ভদ্র-পরিবার অর্থাৎ অতীন্দ্র মোহন ভদ্রের কন্যাদ্বয় বাঁশরী ও রাখী ছিল সঙ্গীতশিল্পী। তালপুকুর পাড়ের সিংহ পরিবারের মন্টু সিংহ, তাঁর ভাইজী পাপড়ি (সুনন্দা), শিউলি, সেলিনা রহমান অভয় আশ্রমের পরিমল দত্তের কাছে গান শিখেছে, সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ (গায়নাচার্য)-এর গোটা পরিবার তো সঙ্গীত-স্রোতে ভাসমান সোনার তরী। সুধীন দাশ-নীলিমা দাশ জুটি বাঁধলেন সঙ্গীতের সুরের মোহনায়। ভুলু ভাই, মিন্টু সিংহ ও আরো অনেকে তখন গানের পাগল। ঠাকুরপাড়ার কুলেন্দু দাশ, তাঁর ভগ্নী শৈলবালা দেবী, সুখেন্দু চক্রবর্তী মাতিয়ে তুলেছেন কুমিল্লার আকাশ-বাতাস। অন্যদিকে তপনদি নাচ-গানের স্কুল খুলে শিশুদের করেছেন শিল্পী।
বুদ্ধদেব বসু বাল্যকাল কাটিয়ে গেলেন কুমিল্লায়। অনেক পরে কলেজ-ছাত্র মনোরঞ্জন দাশ ‘সন্দীপন’ পত্রিকা প্রকাশ করতে গিয়ে বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে প্রেসের দেনা পরিশোধ করেছেন, সুভাষ পাল কবিতা লিখছেন, দুলাল চৌধুরী তাঁর মায়ের কাছে সঙ্গীতের তালিম নিয়ে হয়ে গেলেন ওস্তাদ, বাড়ি বাড়ি ঘুরে গানের ফেরিওয়ালা ছিলেন তিনি, শেফাল রায়ের তবলা বাজানো যারা শুনেননি তারা কী করে বুঝবেন, জানবেন কুলেন্দ্র- শেফাল যুগলবন্দীর কথা। গান করতেন সুধীর-সুধা সেনের কন্যা সুনন্দা সেন। কচিকাঁচা-পূর্বাশা, খেলাঘরের শিশু সংগঠনের হাত ধরে অনেক শিল্পীর উত্থান ছিল অবাক করার মতো, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ছিল সংস্কৃতিচর্চার এক আদর্শিক অধিষ্ঠান। এ ধারাবাহিকতা চলেছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপরও এ চর্চা যে হারিয়ে গিয়েছিল তা নয়, কিন্তু ভাটা পড়তে শুরু করেছিল। কারণ তখন অনেকেই ঢাকামুখী। তাই সে সময়ের কুমিল্লাকে খোঁজ করেন, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি বা সাহিত্যিচর্চার কী অবস্থা তা জানতে চান কেউ কেউ।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কুমিল্লা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, কুমিল্লা কেন্দ্র, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কুমিল্লা শাখা, এখন শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে, এতে একধরনের বন্ধ্যাত্ব থেকে দায়মুক্তির উত্তরণ ঘটছে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার জন্য সরকার-ঘেঁষা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে-নজরুল পরিষদ, কুমিল্লা কালচারাল কমপ্লেক্স, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ইত্যাদি। এখানে গৃহপালিত কমিটি দিয়ে চলছে। গৃহ নেই, পালিত জীব নেই, কমিটির সদস্যরা কাগজে-পত্রে, তাই ঠিকানাও নেই। মাঝে মাঝে ঘুমভাঙ্গার পর হাই তোলার মতো কাতরানি শোনা যায়।
অন্যদিকে অপ্রিয় হলেও বলতে হয়, কয়েকটি সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার সংগঠন রয়েছে, তাদের ঠিকানা আছে, বাড়ি নেই। সেসব সংগঠনগুলো একক ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক। এককালে স্বাধীনোত্তর ‘অলক্ত সাহিত্য পরিষদ’ গঠন করা হয়েছিল। এখানে আমরাও ছিলাম। ‘অলক্ত’ নামে একটি পত্রিকা তিতাশ চৌধুরীর সম্পাদনায় বের হতো, আমি ছিলাম সহ সাহিত্য সম্পাদক, পরিষদের সভাপতি কুমিল্লা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, সম্পাদক অধ্যাপক মো: জয়নাল আবেদীন। তারপর কী হতে কী হলো-এ পরিক্রমা দীর্ঘ এবং একসময় অলক্ত সাহিত্য পরিষদ ও অলক্ত সাহিত্যপত্র হয়ে যায় তিতাশ চৌধুরীর একক সম্পদ। তন্মধ্যে অলক্ত পুরস্কারও প্রদান শুরু হয়ে গেছে। এই পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়ায় তিতাশ চৌধুরী নিজের অবস্থানটি সুদৃঢ় করে নেন। সঙ্গীয় সহযোগিতায় যারা ছিলেন, তাদের বলা হলো গাছে আম ধরেছে, পাকলে দেয়া হবে। আম আর পাকছে না দেখে অনেকে সরে দাঁড়ালো। অলক্ত এর সামগ্রিক ব্যাপারটি ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে গেলো- অলক্ত-তিতাশ চৌধুরী হয়ে গেলেন একাকার। তার পরিণতি হলো- আজ তিতাশ চৌধুরী নেই, অলক্ত- সাহিত্য পরিষদও নেই, অলক্ত পত্রিকাও প্রকাশিত হয় না, পুরস্কার তো হারিয়ে গেছে। অথচ একসময় অলক্ত-এর রমরমা অবস্থান ছিল কুমিল্লায়। আমাদের মনে ক্ষোভ থাকলেও গলা উঁচু করে অলক্ত-এর কথা বলতে পারতাম।
এই পথ অনুসরণ করে এখন কুমিল্লায় কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মোতাহের হোসেন মাহবুব ‘বিনয় সাহিত্য সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, করেন। নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন, ‘আপন’ নামে পত্রিকা বের করেন। বৎসরে পছন্দের লোকদের পুরস্কৃতও করেন। যেহেতু সংগঠন, সেজন্য একটি কমিটি আছে, কিন্তু প্রাণপুরুষ মাহবুব। সংগঠনের সকল কর্মধারায় তার পরিকল্পনাই শেষ কথা। এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কী, তা আমার জানা নেই।
একসময় ঘটা করে ‘তিননদী পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি জীবিত থাকলেও সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত। দীর্ঘ পরিক্রমায় এখন এই পরিষদটি হয়ে গেছে পরিবারকেন্দ্রিক। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১-২১ দিন ব্যাপি পার্কের জামতলায় ভাষা শহীদদের স্মরণে ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের কৃতী পুরুষদের স্মরণ করা হয়। এই দায়িত্বটা এককভাবে আবুল হাসানাত বাবুল কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অনেকেই নির্ধারিত একুশ দিন জামতলায় আসা-যাওয়া করেন, ভিন্নমাত্রাও যোগ হয়েছে। প্রশাসনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু হেঁসেলে প্রবেশের অধিকার কারও নেই। এই পরিবারের যত্নে ও পরিচর্যায় ‘তিন নদী পরিষদে’র এই কর্মকাণ্ডটি ইতিহাসের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কী, তা আমার জানা নেই।
একসময় ‘আমি-তুমি-সে’ নামে ফখরুল হুদা হেলালের নেতৃত্বে রমরমা ছিল। হেলাল নিজেও কবি ও নাট্যজন। এখন সে সদ্য প্রয়াত। তার আত্মার সদগতি কামনা করি। কীভাবে যেন তার পছন্দের লোক দিয়ে সংগঠনটি মাঝে মাঝে ভেসে উঠত। এখন তো হারিয়ে যাবার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত হেলাল নেই।
একসময় কুমিল্লায় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদটি রমরমা ছিল, মাঝে ভাটা পড়েছিল, এখন আবার কেন্দ্রের পরামর্শ ও সহযোগিতায় দৃশ্যমান হয়েছে। মাঝখানে সভাপতি শান্তনু কায়সার, সম্পাদক সমীর মজুমদার এ সংগঠন থেকে বের হয়ে ‘সমতট’ নামে একটি সংগঠন শুরু করেছিলেন, আঁতুর ঘরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একসময় শান্তনু কায়সারের মৃত্যুতে সংগঠনটির অস্তিত্ব আছে কীনা জানি না। তাঁরা দু’জন যখন সংগঠন থেকে বের হয়ে যান, তখন ডা. মো: খোরশেদ আলম (বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক), মোস্তাফিজুর রহমান, ডা. মল্লিকা বিশ্বাস, মিতা পাল, অধ্যক্ষ নিখিল রায়, মো: কাইয়ুম প্রমুখ হাল ধরেন এবং কেন জানি ডা. মল্লিকা বিশ্বাস নির্ভর হয়ে পড়েছে কুমিল্লার শাখাটি। আমার এ মূল্যায়নে স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা, বিশেষ করে ডা. মল্লিকা বিশ্বাস কষ্ট পেতে পারেন। কিন্তু সংগঠনের স্বার্থে সংঘশক্তিকে পরিচালিত করতে কোনো একজনকে মুখ্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে অবশ্যই তাঁদের মধ্যে কোনো অভিমান নেই। এক্ষেত্রে তৃপ্তীশ-মল্লিকা দম্পতিকে সাধুবাদ জানাই এজন্য যে, তাঁরা নিজেদের মতো করে সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। মল্লিকা কুমিল্লা অঙ্গনে পরিচিত কবি ও গায়িকা এবং তৃপ্তীশ নিখাদ সমাজসেবী এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষক।
এদিকে প্রায় এককভাবে ডা. মৃণাল কান্তি ঢালী ও অনামিকা দেব দম্পতি ‘কালীপদ মেমোরিয়াল সংস্কৃতি কেন্দ্র’ স্থাপন করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ডা. মৃণাল কান্তি ঢালী কবিতা লিখেন, গীতিকবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চান, ‘যাত্রা’ পালা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, শরীর বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটিও ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক, তাঁরা আছেন, অনেকে আছেন-ভবিষ্যৎ কী জানি না।
কুমিল্লায় সুপরিচিত শাহজাহান চৌধুরী। নানাভাবেই তাঁর পরিচয়টি উজ্বল, দৃশ্যমান। ‘সংলাপ’ নামে সংগঠনের প্রাণ-পুরুষ। নাটকে নিবেদিত, ফটোগ্রাফার হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সাহিত্যচর্চায় আপনভুবনে আত্মহারা, সামাজিক আন্দোলনে এককভাবে নিরলস, সংকটে-উৎসবে খুবই সচেতন আত্মস্বীকৃত কৌশলী, তাঁর উপস্থিতি দৃশ্যমান ও সৌন্দর্যের আকর। তিনিও তাঁর সংগঠনটি নিজের একক অধিকারে লালন-পালন করে চলেছেন, নজরুলের মতো- মনে যা চায় তাই করে যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপক। এক্ষেত্রে এ সংগঠনের ভবিষ্যৎ কী তা-ও আমার জানা নেই।
নাট্যসংস্থা যাত্রিক ও জনান্তিক আছে, মাঝে মাঝে হুংকার দেয়। আবৃত্তি সংসদগুলো উৎসব আয়োজনে পাশে এসে দাঁড়ায়। যাত্রী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন এখনও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে।
ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, শিশু সংগঠন কচিকাঁচা-পূর্বাশা ও খেলাঘর ধারাবাহিকতা রক্ষায় এখন তৎপর ও সরব।
এছাড়া একসময় ‘আমরা জ্যোৎস্না প্রতিবেশী’ ‘উষসী’ নামে দুটি সংগঠন ছিল, আছেও হয়তবা বয়সের কারণে ন্যূজ হয়ে গেছে। উদীচী সংগঠন আছে, কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কুমিল্লায় কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায় না।
যাঁরা আমাকে প্রশ্ন করে কুমিল্লায় সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার কথা জানতে চেয়েছেন, তার বেশি তো আমার জানা নেই। তবে অহংকার নিয়ে সমকালে সাহিত্যচর্চার বিষয়টির কথা বলতে হয়। কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ সাহিত্যযোদ্ধা স্বনিষ্ঠ গবেষক হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ড. আলী হোসেন চৌধুরী, তাঁর ছেলে নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, মোতাহের হোসেন মাহবুব, আহম্মেদ কবীর, ডা. মল্লিকা বিশ্বাস, শাহজাহান চৌধুরী, ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ, ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ আহমাদ তারেক, কবি বিজন দাস, নীতিশ সাহা, আবুল কাশেম হৃদয়, জহিরুল হক দুলাল, শেখর রঞ্জন সাহা, খলিলুর রহমান শুভ, মিলি রায়, আলমগীর, আহসানুল কবির প্রমুখ কুমিল্লাকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে।
ঢাকা কুমিল্লার কাছাকাছি হলেও কুমিল্লায় সাহিত্যচর্চা বিষয়টি অবশ্যই স্বাতন্ত্রিক ও ব্যতিক্রমধর্মী। যা নিয়ে আমরা অবশ্যই গর্ব করতে পারি। সংস্কৃতিচর্চায় সে অর্থে সমান তালে এগুতে পারছে না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট অতটা দৃশ্যমান নয়।
কুমিল্লায় আমাদের পরিচিত কয়েকজন সংস্কৃতি ও সাহিত্যকর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। তারা কখনও কখনও ঠিকাদারি ব্যবসার মতো কেউকে অর্থের বিনিময়ে পুরস্কার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকেন। তাদের নাম উল্লেখ করলাম না এজন্য যে তারা গুরুত্ব পেয়ে যাবে, আমি ছোট হয়ে যাব। এ ব্যবসা যেন উৎসাহিত না হয়-এদিকে ব্যক্তিগতভাবেই সচেতন থাকতে হবে।
তারপরও কুমিল্লা ছিল ঐতিহ্যে-গৌরবে-ইতিহাসে, এখনও আছে আপন ভুবনে বিরামহীন পথচলার আনন্দে। কুমিল্লা তো কুমিল্লাই, আমাদের ঠিকানা।