ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রামমোহন ও রেনেসাঁস
Published : Sunday, 14 August, 2022 at 12:00 AM
রামমোহন ও রেনেসাঁসজুলফিকার নিউটন ।।
রামমোহন রায়ের ২৫০ তম জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধার্ঘ
যদি ভারতের উনিশ শতকী নবজাগরণের জন্মবৃত্তান্ত এবং তার পরিণত আশা একই বৃন্তে প্রত্যক্ষ করতে চাই তবে আমাদের চোখ ফেরাতে হয় রামমোহনের (১৭৭২-১৮৩৩) দিকে। রামমোহনের জন্মের মাত্র কিছুকাল আগে বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন স্থাপিত হয়েছে। ১৮১৪-১৫ সালে তিনি যখন কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করতে আসেন ততদিনে সারা ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য সুনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এই ঐতিহাসিক পটভূমিকাতেই তাঁর জীবন ও চিন্তাধারার পর্যালোচনা আবশ্যক।
যায়। ক্রমাগত খাজনা বাড়িয়ে নয়, উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি করেই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস করতে হবে।
রামমোহন ছিলেন বেন্থাম, জেমস মিলের সামসময়িক মানুষ। এঁদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও ছিল। মতামতের আংশিক মিলও লক্ষ করা যায়। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রশ্নে তৎকালীন ব্রিটিশ লিবারেলদের মতামত যতটা অনমনীয় ছিল রামমোহনের তেমন ছিল না বলেই মনে হয়। ১৮৩০ সালে রামমোহন পশ্চিমযাত্রা করেন এবং ১৮৩৩ সালে তাঁর মৃত্যু অবধি পাশ্চাত্য দেশেই, প্রধানত ইংল্যান্ডে থাকেন। সে সময়ে ঐ দেশে সমাজতান্ত্রিক নেতা রবার্ট ওয়েনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং চিন্তার বিনিময় হয়। ওয়েন খ্রিষ্টধর্ম বিরোধী ছিলেন, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তো ছিলেন বটেই। বেন্থাম, জেমস মিল, রামমোহন এই সকলের সঙ্গেই ওয়েনের মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এখানে যেটা বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হলো এই, জেমস মিলের মতো লিবারেলদের সঙ্গে ওয়েনের বিরোধ ছিল সমাজতন্ত্র নিয়ে অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রশ্ন নিয়ে, ধর্ম নিয়ে নয়। আর রামমোহন আপত্তি তুলেছিলেন ওয়েনের ধর্মবিরোধিতার বিরুদ্ধে, সমাজতন্ত্র বিষয়ে মতামত নিয়ে নয়। বরং তাঁর চিঠিপত্র থেকে এরকমই মনে হয় যে, রবার্ট ওয়েনের সমাজতান্ত্রিক কাজকর্মে তিনি সদিচ্ছা ও মানবিকতার সন্ধান পেয়েছিলেন। রবার্ট ওয়েনকে ১৮৩২ সালের ২রা জানুয়ারি তারিখে লিখিত তাঁর পত্রে তিনি জানান তাঁর ুইবংঃ রিংযবং ভড়ৎ ঃযব ংঁপপবংং ড়ভ ুড়ঁৎ ংুংঃবস রভ ভড়ঁহফবফ ঁঢ়ড়হ ঃযব ঢ়ৎবপবঢ়ঃং ড়ভ পযৎরংঃরধহরঃু’ এবং পরের বছরে ওয়েনের পুত্রকে লিখিত বিখ্যাত পত্রে ব্যক্ত করেন তাঁর আকাক্সক্ষা ুঞড় ংবব ুড়ঁ ধহফ ুড়ঁৎ ভধঃযবৎ ঈৎড়হিবফ রিঃয ংঁপপবংং রহ ুড়ঁৎ নবহবাড়ষবহঃ ঁহফবৎঃধশরহমং.”
অথাৎ ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এবং সেই সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে তাঁর অবস্থান। সচেতনভাবে স্বীকার করে নিয়েও রামমোহন এমন নীতির সন্ধান ও সমর্থন করেছিলেন। যাতে মধ্যবিত্তের ক্রিয়াকর্মে ও উদ্যোগে সমস্ত সমাজ তৎসময়ে উপকৃত হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার মেনে নিয়েও তিনি সেই অধিকারকে বৃহত্তর ধর্ম ও আদর্শে অধীন রাখতে চেয়েছেন। সংক্ষেপে, বাস্তব পরিস্থিতিকে স্বীকার করেও তাঁর প্রয়াস ছিল সেই পরিস্থিতিতে আবদ্ধ হয়ে না পড়া। বরং সেই পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে যাওয়ার মতো আদর্শ সম্ভব মতো সম্মুখে রেখে চলতে চেয়েছিলেন তিনি।
রামমোহনের নামের সঙ্গে তাঁর ধর্মচিন্তা অচ্ছেদ্য। এই বিষয়টি এবার আলোচনা করা যেতে পারে। যে ভারতবর্ষে তাঁর জন্ম সে দেশের সঙ্গে ইংল্যান্ডের একটা বড় পার্থক্য এই যে, ভারত বহু ধর্মের দেশ, ইংল্যান্ডে এক ধর্ম প্রধান। ধর্মকে অবলম্বন করে কিছু গুরুতর সমস্যা রামমোহন স্বদেশে লক্ষ করেছিলেন। এক হলো, বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের ভিতর সদ্ভাবের অভাব। আওরঙ্গজেব ও শিবাজীর সময় থেকেই রাজনীতির সূত্রে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিবোধ তীব্র হয়ে ওঠে। শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গেও মুসলমানদের সংঘাত দেখা দেয়। বিরোধ ছিল সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরেও হিন্দুধর্মের ভিতর সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভেদ এবং জাতিভেদজনিত অসাম্য রামমোহনকে চিন্তিত করে। তাছাড়া হিন্দুধর্ম ছিল কুসংস্কারে এবং সতীদাহের মতো অমানবিক আচারে জর্জরিত। এরই ভিতর এলো খ্রিষ্টধর্মের চ্যালেঞ্জ এবং যুক্তিবাদী দর্শনের আহ্বান। এই যুক্তিবাদ রামমোহনের কাছে এসে পৌঁছায় প্রথমে ইসলামীয় সূত্রে, মুতাজিলা ঐতিহ্য থেকে, পরে পাশ্চাত্য দর্শনের মাধ্যমে।
এই সবের ভিতর রামমোহনকে নিজস্ব পথ বেছে নিতে হলো। এ ব্যাপারে তাঁর চিন্তা সাবধানে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কারণ সেই চিন্তা স্থির হয়ে থাকেনি। তাঁর ত্রিশ বছর বয়সের চিন্তা আর চল্লিশোত্তর ভাবনা ঠিক এক নয়।
রামমোহনের প্রথম জীবনের ধর্মচিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় ‘তৃহফাৎ-উল-মুওআহিদিন’ নামের পুস্তকটিতে। এখানে দেখি যে তিনি বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোকে যুক্তিবাদের সাহায্যে বিচার করতে চাইছেন। বলছেন যে, প্রতি ধর্মে কিছু সারবস্তু থাকে এবং সেই সঙ্গে থাকে আরও কিছু যা অসার এমনকি অনিষ্টকর। বিভিন্ন ধর্মের ভিতর ভিন্নতা দেখা দেয় বাহ্য আচার এবং ভ্রান্ত কুসংস্কার নিয়ে; বিভিন্ন ধর্মের মিল তাদের সত্য বস্তুতে। যেখানে মিল সেখানেই তাদের সর্বমানবীয় এবং যুক্তিগ্রাহ্য ভিত্তি। সেটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণীয়।
ধর্মবিচার এবং ধর্মসমন্বয় সম্বন্ধে একটা মূল প্রশ্ন এখানে এসে যায়। দুটি ভিন্ন মনোভাব নিয়ে এই বিচারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। আমরা নিজেদের কোনো বিশেষ ধর্মের অন্তর্গত না ভেবে সব ধর্মকেই বাইরে থেকে বিচার করতে পারি। ধর্মবিচারের একটা দ্বিতীয় পথও আছে। নিজেকে ঐতিহ্যসূত্রে লব্ধ কোনো বিশেষ ধর্মের অন্তর্গত বলে মেনে নিয়ে আমরা সেই ধর্মের ভিতর এমন কী আছে যা শ্রেষ্ঠ এবং শ্রদ্ধেয় তার অন্বেষণ করতে পারি, অন্যান্য ধর্মকে আমরা সেই দৃষ্টিতে বিচার করে দেখতে পারি এবং ভিন্ন ধর্মের ভিতর যা কিছু শ্রেষ্ঠ তারই সাহায্যে নিজ ধর্মের শোধন ও উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট হতে পারি।
রামমোহনের প্রথম জীবনে অর্থাৎ ‘তুহফা’ শীর্ষক পুস্তকে যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা প্রায় সম্পূর্ণত যুক্তিবাদী এবং সেখানে তিনি সব ধর্মকে বাইরে থেকে দেখে বিচারপ্রয়াসী।
রামমোহনের বিচারে আত্মজ্ঞান সম্বন্ধে চিন্তার ক্ষেত্রে বেদই শ্রেষ্ঠ, কিন্তু সমাজের প্রতি কর্তব্যপালনের জন্য যে নীতিশিক্ষা প্রয়োজন সেই শিক্ষা খ্রিষ্টধর্মে আরও সংহত আকারে পাওয়া যায়। চন্দ্রশেখর দেবের স্মৃতিচারণে এই রকম একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। রামমোহন সেখানে বলেছেন, ুওভ ৎবষরমরড়হ পড়হংরংঃং ড়ভ ঃযব নষবংংরহমং ড়ভ ংবষভ-শহড়ষিবফমব ধহফ ড়ভ রসঢ়ৎড়াবফ হড়ঃরড়হং ড়ভ এড়ফ ধহফ যরং ধঃঃৎরনঁঃবং ধহফ (রভ) ধ ংুংঃবস ড়ভ সড়ৎধষরঃু যড়ষফং ধ ংঁনড়ৎফরহধঃব ঢ়ষধপব, ও পবৎঃধরহষু ঢ়ৎবভবৎ ঃযব ঠবফধং. ইঁঃ ঃযব সড়ৎধষ ঢ়ৎবপবঢ়ঃং ড়ভ ঔবংঁং ধৎব ংড়সবঃযরহম সড়ংঃ বীঃৎধড়ৎফরহধৎু. ঞযব ঠবফধং পড়হঃধরহ ঃযব ংধসব ষবংংড়হং ড়ভ সড়ৎধষরঃু নঁঃ রহ ধ ংপধঃঃবৎবফ ভড়ৎস”. (তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, অগ্রহায়ণ ১৭৯৪ শক, পৃ. ১৪০)। রামমোহন লক্ষ করেছিলেন যে পুণ্যকর্ম বলতে হিন্দুরা প্রথমেই বোঝে যাগযজ্ঞ, পূজা-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান–সমাজসেবা অথবা প্রতিবেশীর হিতসাধক কাজ তেমন নয়। তিনি লিখেছিলেন, ুঈযৎরংঃরধহং ঁহফবৎংঃধহফ নু ড়িৎশং ধপঃরড়হ ড়ভ সড়ৎধষ সবৎরঃ, যিবৎবধং ঐরহফঁং ঁংব ঃযব ঃবৎস রহ ঃযবরৎ ঃযবড়ষড়মু ড়হষু ঃড় ফবহড়ঃব ৎবষরমরড়ঁং ৎরঃবং ধহফ পবৎবসড়হরবং” (ঞযব ঊহমষরংয ডড়ৎশং ড়ভ জধলধ জধসসড়যধহ জড়ু, বফ কধষরফধং ঘধম ধহফ উবনধলড়ঃর ইঁৎসধহ, চধৎঃ ওও, ঢ়. ১০০) খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে তুলনায় হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে এইরকম সমালোচনামূলক মন্তব্য করতে আমাদের অনেকেরই দেশপ্রেমে বাধে। রামমোহন কিন্তু হিন্দুধর্মের প্রতি প্রীতি রক্ষা করেই এসব কথা বলতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্ম ব্যাখ্যা মাত্র নন, ধর্মসংস্কারক; তাঁর সমালোচনা সংস্কারেরই সহায়ক। হিন্দুসমাজে সমষ্টিগত উপাসনার প্রচলন তিনি প্রয়োজন মনে করেছিলেন, একক উপাসনার পরিপূরকরূপে। শুধু নিজের চিত্তকে মুক্ত ও জ্ঞানোজ্জ্বল করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল না, চারদিকের অজ্ঞান অন্ধকারকে দূর করতে তিনি তাঁর শক্তি নিযুক্ত করেছিলেন। আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে তিনি হিন্দুসম্প্রদায়কে চালিত করতে চেয়েছিলেন বৃহত্তর সমাজসেবার দিকে; একই প্রচেষ্টা আরও পরে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় বিবেকানন্দের শিক্ষার ভিতর।
রামমোহন যদিও হিন্দুধর্মের ও সমাজের ভিতর থেকেই কাজ করতে চেয়েছেন তবু প্রথম জীবনের বৃহত্তর সমন্বয়ের আদর্শ তিনি শেষ অবধি ত্যাগ করেননি। হিন্দু ও মুসলমানের ভিতর বিরোধ তিনি অতিক্রম করেছিলেন উল্লেখযোগ্যভাবে। হিন্দুসমাজের ভিতরে কাজ করেও সমস্ত সাম্প্রদায়িক সীমা অতিক্রম করতেই তিনি আগ্রহী ছিলেন। তিনি জানতেন যে, প্রতিটি ব্যক্তির মানবপরিচয় মূল্যবান। মানুষের সংস্কৃতিকে আরও ভালোভাবে জানা, মানবজাতির হিতসাধন করা, এটাই ছিল তাঁর বৃহত্তর লক্ষ্য। আঠারো ও উনিশ শতকে যে মানবতাবাদী এবং মানবিক সংস্কৃতিতে আগ্রহী চিন্তার আন্দোলন পাশ্চাত্য দেশের কিছু মনীষীর ভিতর দেখা দেয় তারই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রামমোহন। তৎকালেই তিনি সেই হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। রামমোহনের জীবনের শেষভাগে তাঁর সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে একজন ফরাসি ভারতবিদ্যাবিদ সেই মানবধর্মী চিন্তার আন্দোলন সম্বন্ধে আলোকপাত করেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে মিলিয়ে রামমোহন সম্বন্ধে তাঁর অভিমত উল্লেখযোগ্য। লেখক বলছেন, “ঠিক যেমন তিনি (রামমোহন) স্বয়ং বিপুল আগ্রহ সহকারে মানবসভ্যতা সম্পর্কে বৃহত্তর, মহত্তর ও দৃঢ়তর অন্তর্দৃষ্টি লাভের জন্য ইউরোপীয় সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় ব্রতী হয়েছেন, আমরা ইউরোপীয়রাও একইভাবে মানবজাতি সম্পর্কে বৃহত্তর ও উচ্চতর ধারণা অর্জন করার জন্যই এশিয়ার সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানসমূহের অনুশীলনে প্রবৃত্ত হয়েছি; কারণ মনুষ্যত্বের কোনো বিভাগ নেই।” (দিলীপকুমার বিশ্বাস, রামমোহন সমীক্ষা, সারস্বত লাইব্রেরি, কলকাতা ১৯৮৩, পৃ. ৫২৪-২৫)। এর ওপর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
সমাজসংস্কারক হিসেবে রামমোহন স্বকালে ও স্বদেশে অগ্রগণ্য হলেও সেখানে তিনি একা ছিলেন না। কিন্তু যুগসচেতন বিশ্বমানবতার বোন্ধারূপে তৎকালীন ভারতে তাঁর সঙ্গে তুলনীয় অন্য কাউকে দেখি না। দেশপ্রেম আরও অনেকের মধ্যে ছিল, কিন্তু দেশপ্রেম ও আন্তর্জাতিকতার ভিতর অবিরোধ স্থাপনে তিনি অদ্বিতীয়। যুক্তিবাদী অথবা ধার্মিক হিসেবে উল্লেখযোগ্য নামের অভাব নেই। কিন্তু এ দুয়ের ভিতর সমন্বয়সাধনের প্রচেষ্টার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রামমোহন।
রামমোহনের উপলব্ধির জগতে আধ্যাত্মিকতার যে একটা বিশেষ স্থান ছিল সে কথা সুস্পষ্ট। এই উপলব্ধির আলোতে তিনি যথাসাধ্য তাঁর পরিণত ধ্যানধারণা রচনা করেছিলেন। রামমোহন সম্বন্ধে তাঁর সহকর্মী উইলিয়ম অ্যাডাম বলেছিলেন, ুখড়াব ড়ভ ভৎববফড়স ধিং ঢ়বৎযধঢ়ং ঃযব ংঃৎড়হমবংঃ ঢ়ধংংরড়হ ড়ভ যরং ংড়ঁষ.” (রামমোহন সমীক্ষা, পৃ. ৩৬৫)। যে মুক্তি তিনি নিজের জন্য চেয়েছিলেন সব মানুষের জন্যই তা আকাক্সক্ষা করেছিলেন সেই গভীরতর সম্পূর্ণতর মুক্তি, আত্মার জ্যোতিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকৃতি জানিয়ে, যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে নয় বরং তাকে সাবধানে সঙ্গে নিয়ে। এমন জাগ্রত সমাজচেতনার সঙ্গে এমন আধ্যাত্মিক মুমুক্ষার সংযোগ বিরল ঘটনা। এই বিরল সংযোগই কিন্তু ভারতীয় নবজাগরণের কেন্দ্রস্থিত আদর্শ। যদিও নবজাগরণের ধারা বারবার বিচিত্র পথে এই কেন্দ্রবিন্দু থেকে দূরে সরে গেছে তবু যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণে সেই ধারা কিছু নতুন ভাষা ও উচ্চারণ নিয়ে, সময়ের পলিমাটি বহন করে, আবারও মূল আদশের্র দিকেই ফিরে আসতে হয়েছে।