ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লার দুই ফসলি জমিতে চার ফসলের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। বুড়িচং উপজেলার পাহাড়পুর এলাকায় আনন্দপুরের চার শ’ বিঘা বা ১৭০ একর জমিতে পর পর আউশ, আমন, সরিষা এবং তিল চাষ করে সারা বছর জমি থেকে ফলন তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। ইতোমধ্যে এসব জমির প্রায় এক শ’ বিঘায় আউশের বাম্পার ফলনের আশা জাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। শুক্রবার (১২ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা বুৃড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী আনন্দপুর বেলবাড়ি এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় মাঠ দিবসের ওই এলাকার আউশের জমি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। মাঠ দিবসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান অন্যান্য কর্মকর্তা ও দুই শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর সাংবাদিকদের বলেন, পাহাড়পুর ও বেলবাড়ি এলাকায় আড়াইশ বিঘা জমিতে মাত্র একবার ফসল হতো। এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগিতায় কৃষকরা এখন এই জমিতে চারটি ফসল পাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এই এলাকার জন্য এই চার ফসল সুফল বয়ে আনবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, প্রথমবারের মতো এই জমি গুলোতে আউশ ধান হয়েছে। পুরো মাঠটা সোনালী রূপ নিয়েছে। এটা বেশ আনন্দের। তাছাড়া আড়াইশ বিঘা মাঠে চার ফসল হলে তা শুধু বুড়িচং নয় কুমিল্লার অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জমিতে চার ফসল করার জন্য সহযোগীতা চাইলে জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগীতা করা হবে।
পতিত জমিতে আউশ আবাদ বৃদ্ধি কার্যক্রমটির পরিকল্পনাও সমন্বয়কারী অতিরিক্ত কৃষি অফিসার বানিন রায় বলেন, এই আনন্দপুরের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া ভারত থেকে আসা পাগলী খালের উপর স্লুইজ গেট ও খালের পাড় ঘেঁষে উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহণের জন্য রাস্তার দাবি জানান। এটি বাস্তবায়িত হলে আড়াইশ বিঘা মাঠের দুই শ’ বিঘা জমিতে দুই ফসলের পরিবর্তে চার ফসল ও ৫০ বিঘা জমিতে বছরব্যাপি সবজি চাষ সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বুড়িচং উপজেলায় আউশ আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে ২১০ হেক্টর জমিতে। পতিত জমিতে আউশ আবাদ বৃদ্ধির নানা কার্যক্রম গ্রহণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া, প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রচলিত ব্রি ধান৪৮ এর চেয়ে অধিক ফলনশীল ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৯৮ ও বিনাধান-২১ এর বীজ। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিঘা প্রতি ১৬-১৭ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে জাত গুলোতে। এ বছর আউশে বাম্পার ফলন প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।