ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
Published : Thursday, 4 August, 2022 at 12:00 AM
জীবনবোধ ও জীবনদর্শনজুলফিকার নিউটন ||
২৭
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) সাহিত্য সম্পাদক এবং সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলাম বিশ^বিদ্যালয় জীবনে (চট্টগ্রাম এবং বিশ^ভারতী শান্তিনিকেতন) যতদিন ছিলাম, ততদিন একটি স্বস্তি এবং আনন্দের মধ্যে ছিলাম।
শৈশবে আমরা প্রকৃতির কাছে একাত্ম হয়ে থাকি। আমার এলাকায় এককালে প্রচুর গাছপালা ছিল, এখনও আছে, তবে বাড়িঘর তৈরির ফলে অনেক জায়গায় জঙ্গল পরিষ্কার করতে হয়েছে। ধামতী গ্রামে মাওলানা আজিম উদ্দিন আহমদ (রঃ) নামে পরিচিত আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন পীর বাস করতেন। তিনি ১৮৯০ সালে পদ্মকুট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী নিজাম উদ্দিন আহমদ এবং মাতা মোসাঃ জরিনা বেগম। তিনি ১২ একর জমির উপর ধামতীতে আলিয়া ও কামিল মাদ্রাসা ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর তিন ছেলে মাওলানা মুখলেছুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং মাওলানা আবদুল হালিম।
তিনি কাউকে মুরিদ করতেন না। পীর-মুরীদের মধ্যে যে দীক্ষাদান পদ্ধতি আছে তিনি সেই পদ্ধতি মানতেন না। তিনি বেশি কথা বলতেন না এবং যখন বলতেন তখন খুব পরিশীলিতভাবে বলতেন। আমি তাঁর কাছে বসে শান্তি পেতাম। সকল শ্রেণীর লোক তার কাছে আসতো এবং তাকে ঘিরে বসে থাকতো দীর্ঘ সময় ধরে। তিনি হয়তো কিছু বলতেন অথবা বলতেন না। কিন্তু লোকেরা তাঁকে দর্শন করেই স্বস্তি পেত এবং উৎসাহিত হত। আমি মাওলানা আজিম উদ্দিন আহমদ (রঃ) কথা বলছি এ কারণে যে দেবিদ্বার থেকে আরম্ভ করে জীবনের বিভিন্ন কর্মে আমার যে পদক্ষেপ সে সকল পদক্ষেপের সময় আমি তাঁর আশ্বাস এবং আশীর্বাদ পেয়েছি। তিনি প্রতি বছরের ১২ এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারী দুইদিন ব্যাপী ওয়াজ-মহফিল করতেন। এই ওয়াজ-মহফিলে কয়েক লক্ষাধিক লোক হত। মহফিলের শেষ দিন ফজরের নামাজের আগে থেকে মোনাজাত আরম্ভ হত। দীর্ঘ  ঘন্টাব্যাপী মোনাজাতের পর ফজরের নামাজ পড়া হত এবং তারপর মহফিল ভাঙতো। এই মোনাজাতে অনেকবার আমি শরিক হয়েছিলাম। যে ভদ্রলোক এই মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আল্লাহর গুণকীর্তন করেন, রসূলের প্রশংসা করেন এবং মানুষের সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন। প্রার্থনার এই ক্ষমা ভিক্ষার পর্যায়ে মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী অগণিত জনগণ ক্রন্দনে আপ্লুত হত। আমি এই মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে অভিভূত হয়েছিলাম। আমার মনে হয় মানুষের জীবনে এই প্রার্থনার অসম্ভব গুরুত্ব আছে। চিত্তশুদ্ধির জন্য প্রার্থনার তুল্য আর কিছুই নেই। ঊষালগ্নের এই প্রার্থনা মানুষের চিত্তকে পরিচ্ছন্ন করে এবং মানুষ সত্যই তখন সকল পাপমুক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে সক্ষম হয়। মাওলানা আজিম উদ্দিন আহমদ (রঃ) বার্ষিক ওয়াজ মহফিলের আখেরী মোনাজাতের কথা আমি কখনই ভুলব না। বহু দিন পর্যন্ত এর প্রভাব আমার মনের মধ্যে ছিল। মাওলানা আজিম উদ্দিন আহমদ (রঃ) আমি আল্লাহর প্রতি একটি প্রেমের মধ্যে চিহ্নিত পেয়েছি।
মহব্বত বা প্রেমের তিনটি সংজ্ঞা সূফী তত্ত্বজ্ঞরা নির্দেশ করেছেন। প্রথম প্রেম হচ্ছে প্রেমাস্পদের জন্য একপ্রকার অস্থির আকাঙ্ক্ষা, একটি আবেগ এবং আকর্ষণ। এ অর্থে প্রেম হচ্ছে সৃষ্ট জীবসমূহের পরস্পরের প্রতি আনুকূল্য এবং মমতা। দ্বিতীয়ত প্রেম হচ্ছে মানুষের উপর বর্ষিত আল্লাহর করুণা। যাকে আল্লাহ নির্বাচন করেন তাকে তিনি মমতা করেন এবং তাকে বৈশিষ্ট্য দান করেন। আল্লাহর বিবিধ ঐশ্বর্যেও তিনি বিভূষিত হন। তৃতীয়ত প্রেম হচ্ছে কোন কল্যাণকর্মের জন্য প্রশংসা। মানুষ যখন কোনও কল্যাণকর্ম সাধন করে, তখন আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর আল্লাহর প্রশংসা বাণী উচ্চারিত হয়।
কোনও কোনও দার্শনিক বলেন যে আল্লাহর ভালবাসা আল্লাহর গুণাবলীর সঙ্গে যুক্ত। আল্লাহর যে সমস্ত গুণাবলী কোরান শরীফে বর্ণিত হয়েছে যার অজস্রতা থেকেই আল্লাহর ভালবাসার স্বরূপ প্রকাশ পায়। মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসা মানুষের প্রতি তাঁর শুভ কামনার মতো এবং করুণার মতো। আল্লাহর বিভিন্ন ইচ্ছার মধ্যে প্রেম হচ্ছে যাকে আরবীতে বলে ইবাদত। আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাখ্যাসূত্রে আরও অনেক শব্দ আমরা ব্যবহার করি, যেমন ‘সন্তুষ্টি’, ক্রোধ, করুণা ইত্যাদি। আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে একটি অনন্তকালীন প্রজ্ঞা যার সাহায্যে তিনি তাঁর কর্মপ্রবাহ চালিত করেন। মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসার ফলে এ পৃথিবীতে মানুষের সন্তুষ্টি বিধান ঘটে এবং পরজগতে মানুষ শান্তি থেকে মুক্ত হয়। আল্লাহর ভালবাসা থাকলে পাপ থেকে মুক্ত হয় এবং এ ভালবাসার সাহায্যে সে সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হয়। সুফী সাধক মাওলানা রুমী বলেছেন যে কোনও মানুষকে আল্লাহ যখন বিশেষত্ব দান করেন তখন সে বিশেষত্ব দানের মধ্য দিয়ে তার প্রেম প্রকাশ পায়। আল্লাহর ভালবাসা হচ্ছে আল্লাহর বাণীর সত্যতা এবং সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এ বাণীর প্রতি মানুষের যখন পূর্ণ আসক্তি দীপ্যমান হবে তখনই মানুষ আল্লাহর ভালবাসা পেয়েছে ধরে নিতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর ভালবাসা পেলে মানুষ পবিত্র হয় পরিচ্ছন্ন হয় এবং আনন্দে দীপ্ত হয়।
কিন্তু আল্লাহর প্রতি মানুষের ভালবাসা কি করে প্রকাশ পায়? এ ভালবাসার প্রকাশ ব্যাকুলতার মধ্যে, বিনয়ের মধ্যে, শ্রদ্ধার মধ্যে এবং সার্বক্ষণিক ধ্যাননিমগ্নতার মধ্যে। যে মানুষ আল্লাহকে ভালবেসেছে সে পরমকে লাভ করেছে, সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনও বস্তুর প্রতি তার আকর্ষণ নেই। সে সমস্ত পার্থিব আকাক্ষা এবং কামনাকে অস্বীকার। করে এবং আল্লাহর গুণাবলীর দ্বারা গুণান্বিত হবার জন্য ব্যাকুল হয়। পৃথিবীতে যে মানুষ মানুষকে ভালবাসে সে ভালবাসার শেষ তো প্রাপ্তিতে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভালবাসার শেষ নেই। কেননা সেখানে প্রাপ্তির সম্পূর্ণতা নেই সেখানে অনবরত প্রত্যাশা রয়েছে। সুতরাং একজন সূফী সাধক সর্বমুহূর্তে এ প্রার্থনা করেন, “হে আল্লাহ, আমাকে আরও দাও, আরও দাও, আমি অসম্পূর্ণতায় বিপর্যস্ত হচ্ছি। আমাকে তুমি প্রাণময়তায় সম্পূর্ণ কর।” যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসে সে আল্লাহকে কায়ফিয়াত বা স্বভাবকে আয়ত্ত করতে চায় এবং মতচিন্তায় অধীর হয় না কিন্তু মৃত্যুকে একটি অনিবার্যতার মধ্যে আনন্দে গ্রহণ করে। এই মৃত্যু হচ্ছে পার্থিব আকাক্ষার মৃত্যু এবং পার্থিব ইচ্ছার মৃত্যু। এ মৃত্যুর কারণে মানুষ অনন্তের নিকটবর্তী হবার সাধনা করতে পারে। পার্থিব প্রেমে সমমনাদের মধ্যে আকর্ষণ প্রকাশিত হয় যেখানে দৈহিক পরিতৃপ্তি রয়েছে কিন্তু আল্লাহর প্রতি প্রেম হচ্ছে এমন একটি তাৎপর্যের উল্লাস যা আল্লাহর গুণাবলীর আসক্তির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত সূফী সাধক সুমনুন আল মুহীব বলেছেন যে প্রেম হচ্ছে একটা ভিত্তি, যে ভিত্তি স্থাপিত করে মানুষ আল্লাহকে পাবার চেষ্টা করবে। মানুষের বিভিন্ন আশ্রয় আছে, অর্থাৎ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন আশ্রয়ে মানুষের প্রকাশ ঘটে। সকল আশ্রয়ই হচ্ছে ধ্বংসের, একমাত্র প্রেমের আশ্রয়ই হচ্ছে প্রশান্তির । প্রেমকে সাফওয়াত' নামেও অভিহিত করা যায়। সাফাওয়াতের অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। সুতরাং সাফওয়াতের অবস্থা যিনি পেলেন তিনি সুফী। মনসুর হাল্লাজকে যখন ফাঁসিকাষ্ঠে চড়ানো হয়েছিল সে মুহর্তে তিনি বলেছিলেন, “হাসব আল ওয়াজিদ ইফরাদ আল? ওয়াহিদ” অর্থাৎ এটাই যথেষ্ট যে প্রেমিক একক সত্তার সঙ্গে মিলিত হবে অর্থাৎ প্রেমিকের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না সে প্রেমাস্পদের অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হবে। এভাবে প্রেমের বিচিত্র অভিব্যঞ্জনা সূফী তত্ত্বজ্ঞরা দিয়েছেন।
প্রেমের যথার্থ স্বরূপ কি? যখন প্রেমিক আপন গুণাবলী সম্পূর্ণ মুছে ফেলে প্রেমাস্পদের গুণে গুণান্বিত হয়, তখন সে একটি নির্বিরোধী ঐক্যতত্ত্ব নির্মাণ করে। সে তখন একটি এককের সংজ্ঞায় বিলুপ্ত হয়। যেহেতু প্রেমাস্পদ হচ্ছে মৌল প্রজ্ঞা এবং একমাত্র অস্তিত্ব যাকে আরবীতে বলা হয় বাকি এবং প্রেমিক হচ্ছে ‘ফানি’ অর্থাৎ নিঃশেষ, তাই প্রেমের। সার্থকতা নির্ভর করবে মৌল অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে এবং আপন গুণাবলীর বিস্মরণের মধ্যে।
ব্যাকুলতা প্রেমের একটি অভিব্যঞ্জনা। আমি যে মহৎ প্রজ্ঞাকে চাই তার কোনও পরিমিতি নেই। সুতরাং তাকে কেউ সম্পূর্ণ আয়ত্ত করতে পারে না কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত হিসেবে আয়ত্ত করবার কামনায় অধীর থাকে। এভাবে ব্যাকুলতা আমাদের সম্পদশালী করে। কেননা ব্যাকুলতার কারণে ক্রমান্বয়ে আমরা আপনাকে অধিক থেকে অধিকতর পরিশুদ্ধ করি, পরিমার্জিত করি, পরিতৃপ্ত করি এবং পরিজ্ঞাত করি। প্রেম হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের মান্যতা এবং অমান্যতার প্রতিকূলতা।
আরবীতে মহব্বত শব্দটি প্রেম অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দটি হিব্বত থেকে এসেছে। হিব্বত কথার অর্থ হচ্ছে বীজ, যা মরুভূমিতে পতিত হয়। এ সমস্ত মরুভূমির বীজকে হিজ বলা হয় এবং এ থেকেই হাব শব্দটি এসেছে। তাৎপর্য সম্ভবত এই যে যেমন বীজ সমস্ত বৃক্ষের উৎস, তেমনি প্রেম হচ্ছে প্রাণের উৎস। যখন মরুভূমিতে বীজগুলো ছড়িয়ে পড়ে তারা বালুর মধ্যে হারিয়ে যায়, তারপর তাদের ওপর বৃষ্টি পড়ে, সূর্যের আলো পড়ে, ঋতু পরিবর্তন হয়, কিন্তু বীজগুলো নষ্ট হয় না। তারা বৃক্ষরূপ উদগত হয়, তাদের ডালে ফুল এবং ক্রমান্বয়ে ফুলভারে তাদের শাখা আনত হয়। তেমনি প্রেম যখন মানবচিত্তে আশ্রয় পায় তখন প্রেমের পাত্র নিকটেই থাকুক বা অনুপস্থিত থাকুক, বিচ্ছেদ ঘটুক অথবা মিলনই ঘটুক যথার্থ প্রেম হৃদয় থেকে কখনই বিলীন হয় না। প্রেম যখন হৃদয়ে আশ্রয় নেয়, তখন অন্যসব চিন্তা হৃদয় থেকে বিদূরিত হয়। প্রেম হচ্ছে মানব হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দু। মানুষের শরীর যেমন আহার্য গ্রহণ করে সজীব থাকে, হৃদয় তেমনি প্রেমকে অবলম্বন করে দীপ্ত থাকে। একজন আরব কবি বলেছেন যে হৃদয় এবং চক্ষু হচ্ছে একে অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত, তিনি বলেছেন, “আমার হৃদয় আমার চক্ষুকে ঈর্ষা করে, কেননা আমার চক্ষু আমার প্রেমাস্পদকে দেখতে পায়। এবং আমার চক্ষু আমার হৃদয়কে ঈর্ষা করে, কেননা আমার হৃদয় আমার প্রেমাস্পদকে অনুভব করতে পারে।”
মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসা হচ্ছে মানুষের প্রতি তার শুভ কামনা এবং মানুষের প্রতি তার কল্যাণ এবং আশীর্বাদ। আল্লাহর ইচ্ছার একটি বিশেষ নাম হচ্ছে প্রেম, যাকে বলে ইবাদত । আল্লাহর ইচ্ছার আরও নাম আছে যেমন ‘সন্তুষ্টি, ক্রোধ, করুণা ইত্যাদি। আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে একটি চিরকালীন গুণসম্পদ যার সাহায্যে তিনি তার বিভিন্ন কর্মে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসার প্রমাণ আমরা পাই পৃথিবীতে এবং পরলোকে মানুষের শান্তি এবং স্বস্তি প্রাপ্তির মধ্যে। আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকে তিনি পাপ থেকে রক্ষা করেন এবং হীন প্রবৃত্তি থেকে দূরে সরিয়ে আনেন। যখন আল্লাহ কোনও ব্যক্তিকে সৎপথে উদ্বুদ্ধ করেন, তখন ভালবাসার বলেই তা করেন। বিভিন্ন সূফী সাধকগণ এভাবেই আল্লাহর ভালবাসাকে ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহর প্রতি মানুষের ভালবাসা হচ্ছে মানুষের একটি গুণ এবং শক্তি যার সাহায্যে মানুষ ধীর-স্থির এবং বিনয়ী হয়, উদার হয়, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য ব্যাকুল হয়, আল্লাহর দর্শন পাবার জন্য অধীর হয়। এবং সর্বমুহর্তে আল্লাহর নামে লিপ্ত থাকে। যথার্থ প্রেমিকের কোনও বিশ্রাম নেই, পার্থিব সকল অভ্যাস থেকে সে মুক্ত হয়, কামনা, বাসনা থেকে সে মুক্ত হয় এবং পরিপূর্ণতা লাভের জন্য আল্লাহর গুণাবলীর প্রতি ধাবিত হয়। পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালবাসা তার একটি দেহগত আবেশ প্রকাশ এবং বিচ্যুতি আছে কিন্তু আল্লাহকে ভালবাসা একটি অনন্ত প্রেমময়তাকে অনুভব করা। এটা হৃদয়ের সম্বল, দেহের নয়। যারা আল্লাহর প্রেমিক তারা মৃত্যু-মাহাত্ম্যে আল্লাহর নিকটস্থ হওয়ার সাধনা করেন। একেই সূফীরা বলেছেন যে মুস্তাহলিক হয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। পৃথিবীতে আমরা যে একে অন্যকে ভালবাসি, সে ভালবাসা হচ্ছে একই স্বভাবের দু’টি শক্তির পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ। কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হচ্ছে আল্লাহর গুণাবলীর প্রতি ভালবাসা, যে ভালবাসায় প্রকাশ্য দর্শন নেই, বাক্যালাপ নেই, কিন্তু অনুভব আছে।
চলবে.........