ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় মোট মামলার ৫৫ শতাংশ মাদকের
উদ্ধার অভিযান বেশি হওয়ায় মামলাও বেশি, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদকের আগ্রাসন বেশি, মামলা নিস্পত্তিতে দক্ষতা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন
Published : Wednesday, 27 July, 2022 at 12:00 AM, Update: 27.07.2022 1:57:09 AM
কুমিল্লায় মোট মামলার ৫৫ শতাংশ মাদকেরতানভীর দিপু:
কুমিল্লায় চলতি বছরের জুন মাসে দায়ের করা মামলার ৫৫ শতাংশ মাদক দ্রব্য আইনে মামলা। বুধবার সকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় দেয়া অপরাধ চিত্র-জুন/২০২২ পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মে মাসের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, মোট মামলার ৫৩ শতাংশ মাদক সংশ্লিষ্ট। মে মাসে মোট ৩৮৮টি মামলার মধ্যে ২০৭টি মামলা মাদকের। এছাড়া এপ্রিল মাসে ৪২৬ টি মামলার মধ্যে ২৩২ টি মামলা ছিলো মাদকের, অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ।
জুনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলায় দায়েরকৃত ৪২০ টি মামলার মধ্যে ২৩২ টি মামলা মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট। এছাড়া ১১ টি খুনের মামলা, ৩৮ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা রয়েছে। মাদক দ্রব্য আইনে সবচেয়ে বেশি মামলায় হয়েছে কোতয়ালী থানায় ৪৯টি, এরপরই সদর দক্ষিণ থানায় ৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা গুলো শুধুমাত্র পুলিশের পক্ষ থেকেই নয় বরং বিজিবি-র‌্যাব-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এসব মামলা দায়ের করে থাকেন থানায়।  কুমিল্লা জেলার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলার থানায় মাদকের মামলা বেশি হচ্ছে দাবি মাদক নিয়ন্ত্রনে কাজ করা বাহিনীগুলোর। তবে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, উদ্ধার অভিযান এবং মামলা দায়েরের পর যদি কোন দুর্বলতার কারনে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টরা পার পেয়ে যান তবে এসব মামলার ফলাফল শূন্যই দাঁড়াবে। তাই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মামলা দায়েরের পাশাপাশি যেন মামলা নিষ্পত্তিতেও দক্ষ এবং আন্তরিক হন সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
গত বুধবার ২০ জুলাই কুমিল্লা জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, আঞ্জুম সুলতানা সীমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহিম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শিউলি রহমান তিন্নিসহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ।
এদিকে মাদকের মামলা এত বেশি হওয়ার কারন কি এমন প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান বলেন, এটি খুবই জটিল প্রশ্ন। তবে চাহিদা বেশি থাকায়- মাদকের চালান বেশি হচ্ছে। তাই অভিযানও পরিচালিত বেশি এবং মামলার সংখ্যাও বেশি। তবে কুমিল্লায় যে পরিমান মামলা তা যে শুধু কুমিল্লার চাহিদার কারণে তা নয়- এই জেলার সাথে ভারতের সীমান্ত থাকায় এখানের রুট ব্যবহার করে মাদক পাচার হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গেও যায়। যে কারনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করা হয় এবং মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সমন্বয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হয়। আর এসব অভিযান একক বাহিনীর পক্ষে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য- তাই আমরা চেষ্টা করছি সমন্বিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে। আমরা আমাদের জেলা মাদকের আস্তানাগুলোর খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করে আসছি।
কুমিল্লা জেলায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং পাচারকারি- ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২। এসব অভিযানে প্রতিনিয়তই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করে থাকেন তারা। র‌্যাব কুমিল্লা কার্যালয়ের প্রধান মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়া মাদক পাচার এবং ব্যবসা কুমিল্লাতে সহজ। তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনী প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করে থাকে। যত বেশি অভিযান তত বেশি মাদক উদ্ধার ও গ্র্প্তোর হয়। তাই মামলার সংখ্যাও বেশি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সভায় মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, কুমিল্লার যেসব এলাকায় মাদকের প্রভাব আছে সেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। এই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের প্রতিটি ইউনিট আরো বেশি সচেষ্ট থাকবে। মাদক নিয়ে কোথাও কোন ছাড় দেয়া হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহিম বলেন, কুমিল্লা শহরে যেসব মাদক করাবারিরা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর ইয়েস উপ-কমিটির প্রধান বদরুল হুদা জেনু বলেন, মাদকের মামলা হওয়া কোন অস্বাভাবিক না। কিন্তু এসব মামলার নিষ্পত্তি হয় কয়টি - দেখার বিষয়। কিন্তু আমরা মনে করি কুমিল্লায় যে মামলা হচ্ছে প্রমান তথ্য-উপাত্তের অভাবে এবং যথাযথভাবে উপস্থাপনের অভাবে সঠিক বিচার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হচ্ছে না। এছাড়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আন্তরিকতা এবং দক্ষতার অভাবে এসব মামলাগুলোর বেশির ভাগই কাজে আসে না। তাই মাদক নিয়ন্ত্রনে যারাই কাজ করেন তাদেরকে উদ্ধার অভিযান এবং মাদক মামলা দায়েরের পাশাপাশি জড়িতদের সঠিক বিচার নিশ্চিত করতেও কাজ করতে হবে। তাহলেই মাদক নিয়ন্ত্রনে মামলা দায়ের কাজে আসবে।