ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন
Published : Monday, 13 June, 2022 at 12:00 AM, Update: 13.06.2022 1:26:54 AM
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কানিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার বাকি আছে কেবল আজকের দিনটি।  রাত ৮টায় শেষ হবে প্রার্থীদের প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কুমিল্লা। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঘিরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কোনো অভিযোগ কিংবা আশঙ্কা না থাকলে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র পদে হেভিওয়েট দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার।
রবিবার (১২ জুন) সকালে প্রচারণায় নামার আগে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, কুমিল্লায় ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর আছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে, বিজয় নৌকারই হবে।
প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের অভদ্রজনিত কাজ। সাক্কু (সাবেক মেয়র) কুমিল্লার এমপিকে কুমিল্লা ছাড়া করতে চায়। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি বলেন, আর আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু কেন এত দুশ্চিন্তা করেন বুঝি না। প্রত্যেকদিনই তার নালিশ। বিএনপি তো নালিশ পার্টি। ঘুরেফিরে বিএনপির কর্মী তো, তারা নালিশই করবে। কুমিল্লার কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন প্রশ্ন সাংবাদিকদের ছুড়ে দেন তিনি।
কর্মীদের উপর ভরসা করেই নির্বাচনে নেমেছেন বলে উল্লেখ রিফাত  বলেন- তারা সবাই কাজ করছে, আমাদের মধ্যে কোনো বিবেধ নেই। কমিটির সবাইকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। তারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করছে এমন কোনো নালিশ আমি করিনি।আমরা ঐক্যবদ্ধ। এটাতে আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমাদের ঐক্যের মধ্যে কোনো ফাটল নেই।
এমপি বাহার বহিরাগতদের বাহির থেকে এনে কাজ করাচ্ছে সাক্কুর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন- সোজা কথা, সাক্কু সাহেব চান বাহার ভাই কুমিল্লা ছেড়ে চলে যাক।
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে বলেন-এতদিনে আপনারা কি দেখেছেন বাহার ভাইকে আমার কোনো নির্বাচনী সভায় আমাকে সহযোগিতা করার জন্য এসেছে? দেখেছেন আপনারা কেউ?,উনি কি এসেছেন আমার সাথে?  একজন এমপিকে সম্মান করতে হয়। উনি উনার বাসায় থাকতে পারবেন না? কুমিল্লা ছেড়ে চলে যেতে হবে? আমরা তো মানুষকে উত্তেজিত করতে পারতাম। আমরা তো সবকিছু সহ্য করতেছি। নির্বাচন সুন্দর হোক।যেই নির্বাচিত হোক, মোস্ট ওয়েলকাম আমরা তাকে সাধুবাদ জানাবো।
এদিন সকালে নগরীর দারোগাবাড়ি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরেও সদর আসনের এমপি কুমিল্লা ত্যাগ করেননি। এর ফলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বহিরাগত লোকজন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে, এতে ভোটাররা আতঙ্কে আছে।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে কেন শঙ্কা প্রকাশ করছেনÑ এমন প্রশ্নে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই সদর আসনের এমপি (আ ক ম বাহাউদ্দিন) আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি ইসিতে অভিযোগ দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে তাকে এলাকা ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি এলাকা ছাড়ছেন না।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছি সিটি কর্পোরেশনের বাইরের লোকজন কুমিল্লায় এসে থাকতেছে। তারা কুমিল্লা ক্লাবসহ বিভিন্ন হোটেলে হোটেলে অবস্থান নিচ্ছে। তাদের এখানে অবস্থানের উদ্দেশ্য কি? আমরা ওয়ার্ক করার পর আমাদের কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমি রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি। আমি শুনতে পেয়েছি, নির্বাচনের দিন তারা সিটি কর্পোরেশনের চতুর্দিকের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লোকজন এনে সিটি এলাকায় প্যানিক সৃষ্টি করবে- ভোটাররা যেনো কেন্দ্রে যেতে দেরি করে, ভয় পায়। তাদের তো ভোটার নেই। তারা চাইবে আমার ভোটাররা যেনো কেন্দ্রে যেতে না পারে। আর সেই অপচেষ্টাই তারা করছে।
তিনি বলেন, আমি অভিযোগ  দিতে পারি, দিয়েছি। তদন্তের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে জানুক আমি সত্য বলছি নাকি মিথ্যা বলছি। তদন্তের ভার যেহেতু তাদের, তারাই সিদ্ধান্ত নিক। আমি তো এখন আর ডিসি-এসপি’র কাছে অভিযোগ করতে পারি না। আমি আমার কাজ করেছি। এছাড়া তো আর কিছু করতে পারি না, আমার আর কোনো উপায় নাই।
সদর আসনের এমপির এলাকা না ছাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আইন তো আমি তৈরি করি নাই, তারাই আইন করেছে- নির্বাচনের সময় লোকাল এমপি থাকতে পারবেন না, প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্বাচনে উনার প্রার্থী রিফাত ভাই (আরফানুল হক রিফাত)। তার পক্ষে উনি সবাইকে ডেকে ডেকে এনে নির্দেশনা দিচ্ছেন। কাউকে সরাসরি, কাউকে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দেন তিনি। কুমিল্লা শহরে এমন কোনো সংস্থা নেই- যাদেরকে তিনি ডাকেননি। এটা তো আচরণবিধির মধ্যে পড়ে। উনি এলাকায় থাকলেই আমাদের শঙ্কা বাড়ে।
নির্বাচন কমিশন কি আপনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নে মনিরুল হক সাক্কু বলেন,  যদি পদক্ষেপ নিতো, তাহলে তো মাননীয় এমপি সাহেব কুমিল্লায় থাকতে পারে না। নির্বাচন কমিশন তাকে একটি চিঠি দিয়েছে, তিনি হাইকোর্টে রীট করেছেন। এতটুকু আমরা জানি। এখন সিইসি যা বলছেন তা সত্য নাকি উনি  (এমপি বাহার) যা বলেন তা সত্য তা তো আমি জানি না। এখন আমার অভিভাবক নির্বাচন কমিশন, তাদেরকে জানিয়েছি।
একই অভিযোগ তুলেছেন অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত কুমিল্লার নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত থাকলেও ভোটের দিন নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। সদরের এমপি এলাকায় রয়ে গেছেন। নানাভাবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহবান সুজনের:
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহবানে সংবাদ সম্মেলনে করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন কুমিল্লা মহানগর ও জেলা শাখা। রবিবার সকালে কুমিল্লা টাউন হল কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, সুজন জেলা কমিটির সভাপতি শাহ মোঃ আলমগীর খান।
জেলা কমিটির যুগ্মসম্পাদক রেজবাউল হক রানার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আলী আহসান টিটু, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান আকন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান, মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, জেলা কমিটির যুগ্নসম্পাদক শাহানা হক, সদস্য মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন রনী, আজাদ সরকার লিটন, সুজনের সম্বনয়কারী সৈয়দ নাসির উদ্দিনসহ আরো অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র, ভোটার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল , মন্ত্রী ও সাংসদ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গনমাধ্যম, প্রার্থী ও সমর্থক ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনসহ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহব্বান জানান।
আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন।