
রণবীর ঘোষ কিংকর।
ছাত্রলীগ
ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী কে গুলি করে আহত করার ঘটনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তাল চান্দিনা।
মঙ্গলবার (১০ মে)
বিকালে চান্দিনা উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীক ও ছাত্রলীগের আয়োজনে
চান্দিনা উপজেলা পরিষদ এর সামনের সড়কে ওই মানববন্ধন করে তারা। এর আগে
চান্দিনা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ
মিছিল বের করা হয়। এসময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়।
সকলের মুখে শব্দ একটাই ‘রেদোয়ান এর শাস্তি চাই’।
মানববন্ধনে বক্তৃতা
করেন- কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা
পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোসলেহ উদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা
স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন সরকার, মাইজখার ইউপি চেয়ারম্যান ও
উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি শাহ মো. সেলিম প্রধান, উপজেলা যুবলীগ সাবেক সাধারণ
সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, চান্দিনা পৌর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আলহাজ্ব মো. মনির খন্দকার।
এসময় বক্তারা ছাত্রলীগ কর্মী মাহমুদুল হাসান
জনি সরকার ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী নাজমুল হোসেন নাঈমকে গুলি করে আহত করার
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। রেদোয়ান আহমেদ এর দৃষ্টান্ত মূলক
শাস্তি না হলে কঠোর কর্মসূচীর ডাক দিবেন বলে জানান তারা।
মানববন্ধনে
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গল্লাই ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.
ফজলুল করিম দর্জি, কেরণখাল ইউপি চেয়ারম্যান মো. সুমন ভূইয়া, বাড়েরা ইউপি
চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভূইয়া, এতবারপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু ইউসুফ,
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. মেহেদী হাসান সোহাগ, সাবেক সাধারণ
সম্পাদক কাউন্সিলর মো. আবু কাউছার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামিরুল
খন্দকার রবি, চান্দিনা আরএ কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী জামিল, পৌর
স্বেচ্ছাসেবকলীগ সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান জনি, সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা জনি
প্রমুখ।
এদিকে, সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের
পূর্ব মুহুর্তে রেদোয়ান আহমেদ এর গাড়িতে তরমুজের ছোলা ছুড়ে মারার প্রতিবাদে
পরপর দুই গুলি ছুড়েন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ। এতে ছাত্রলীগ ও
স্বেচ্ছাসেবকলীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় চান্দিনা
উপজেলা সদরের এলডিপি অফিস ও কলেজ ভাংচুরের অভিযোগ করেন রেদোয়ান আহমেদ
সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
রেদোয়ান আহমেদ কলেজ অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম
ভূইয়া জানান, সোমবার দুপুরের ঘটনায় সন্ধ্যায় শতাধিক লোকজন এসে কলেজের
প্রধান ফটক, দরজা-জানালা, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক লাইট ভাংচুর করে। ঘটনার
পরপর আমরা পুলিশকে ফোনে অবহিত করি।
উপজেলা যুবলীগ নেতা মনির খন্দকার
জানান, আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর গুলি করার ঘটনার পর থেকে আমাদের সাংসদ
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এরিয়ে চলতে
নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। কলেজ বা অফিস ভাংচুরের ঘটনার সাথে আমাদের কেউ
জড়িত না। গুলির ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিত ভাবে তারা নিজেরাই ভাংচুর করে
আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ
নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে রেদোয়ান আহমেদ এর গুলি বর্ষণের
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী
করে আসছি।
এ ব্যাপারে থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর
রহমান জানান, কলেজ বা এলডিপি পার্টি অফিস ভাংচুরের ঘটনার বিষয়টি আপনার
মাধ্যমে এই মাত্র জানতে পারলাম। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বা এলডিপি’র কোন
লোকজন আমার কাছে আসেনি বা ফোন করেও জানায়নি।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৯ মে)
বিকাল ৪টায় চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবন এ
কলেজ ছাত্রলীগ ও পৌর এলডিপি পাল্টাপাল্টি ঈদপুনর্মিলনীর আয়োজন করেন। দুপুর
১টার পর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা
অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হতে শুরু করে। দুপুর আড়াইটায় এলডিপি মহাসচিব ড.
রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ প্রধান ফটকের সামনে গেলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ
নেতাদের সাথে কথা হয়। এসময় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতৃবৃন্দ একই স্থানে এলডিপি’র
প্রোগ্রাম করতে নিষেধ করেন এবং ছাত্রলীগও প্রোগ্রাম করবেন না বলে জানান।
এসময় তিনি গাড়ি নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় কোন এক ছাত্রলীগ কর্মী রেদোয়ান আহমেদ
এর গাড়িতে তরমুজ দিয়ে ঢিল ছুড়ে। এসময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ির জানালা খুলে পরপর
দুইটি গুলি করেন। এতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ
হয়। এ ঘটনায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল বাদী
হয়ে ১৫জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় রেদোয়ান
আহমেদসহ চারজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।