দেবীদ্বারের সুবিল-বুড়িরপাড় খালের উপর অবৈধ ‘সড়ক’ অপসারণ
Published : Monday, 9 May, 2022 at 12:00 AM
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ||
দৈনিক কুমিল্লার কাগজে গত ১ মে ‘খাল ভরাট করে রাস্তা ও কবরস্থান নির্মাণ; পানি আটকে দুর্ভোগ’ ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে দেবীদ্বার উপজেলার ঐতিহ্যবাহি রামপ্রাসাদ খালের মোহনাখ্যাত সুবিল-বুড়িরপাড় খালের উপর বাঁধ নির্মাণে ১২ ফুট প্রশস্থ সড়কটি অপসারণ করা হয়েছে।
রোববার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় পুরাতন বাজার সংলগ্ন প্রবাহমান সুবিল- বুড়িরপাড় খালের উপর নির্মিত সড়কটি অপসারণে সাধারণ মানুষ উৎফুল্ল ও খুশি।
এ খালটি রামপ্রসাদ খালের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। তার এক পাশদিয়ে একটি বিশাল গোরস্তান নির্মানে ভেকু মেশিন দিয়ে গোরস্তানের অংশটি গভীর পুকুর খনন করে পাশের খালের এক পাশ ভরাটই নয়,- গোরস্তানে লাশ আনা নেয়ার জন্য খালের উপর বাঁধ নির্মানে প্রায় ১২ ফুট প্রসস্ত একটি সড়ক তৈরি করা হয়েছিল। যার কারনে প্রবাহমান ঐতিহ্যবাহী এ খালটির গলা চিপে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। বিষয়টি দৈনিক কুমিল্লার কাগজ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে এবং বিষয়টি নজরে আনেন।
গত শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে যেয়ে খাল ভরাটের সত্যতা পান এবং তাৎক্ষণিক দখলদারদের সড়কটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে দ্রুত অপসারণের নির্দেশ দেন। এ সময় সীমার মধ্যে সড়ক অপসারণ না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নির্দেশ দেন।
খালের উপর থেকে সড়কটি অপসারনে স্থানীয়রা খুশী হলেও আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার আশংকা করে বলেন, ফতেহাবাদ থেকে সুবিল পর্যন্ত এ খালের বিভিন্ন অংশে আরো কমপক্ষে ৪টি বাঁধ নির্মাণ করে খালের উপর সড়ক নির্মাণ করা রয়েছে। এক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ‘স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্প (এলজিএসপি)’র অর্থায়নে বুড়িরপাড় খালের উপর ‘বুড়িরপাড় সরকারবাড়ী’ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সুবিল, ওয়াহেদপুর, আব্দুল্লাহপুর ও বুড়িরপাড় গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ৮টি বড় বড় খাল ছিল। যেগুলো খালখেকু, ভূমিখেকু, মাটিখেকু সিন্ডিকেটদের কারণে মরে যাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এ খালগুলোর সাথে রামপ্রসাদ খালের এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল। রামপ্রসাদ খালটি- মরজরা নদী, বুড়ি নদী, গোমতী নদী, তিতাস নদী, মন্দবাগ নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। এখনো ওই নদীগুলোর সাথে কিছু কিছু খালের সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ খাল প্রভাবশালীদের দখলে থাকার ফলে, খালের পানির গতিধারা বিঘ্নিত হওয়ায় এ এলাকার মৎস্যজীবীরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন, তেমনি এলাকার সাধারন মানুষ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পানি সংকটে ফসলী জমি এবং বীজতলাগুলোও প্রায় ধ্বংসের মুখে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগও রয়েছে।
সুবিল গ্রামের প্রবীণ কৃষক জানান, উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের সুবিল গ্রামেই প্রায় ২০-২২ একর খাস জমি ছিল। এ ছাড়াও এলাকার বড় বড় ৮টি খাল রয়েছে। এ খালগুলো ভরাট করে দখল, মার্কেট নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ ও সড়ক নির্মাণে প্রতিযোগিতা চলছে। খালগুলো উদ্ধার না হলে জলাবদ্ধতা দূরকরে জনদুর্ভোগ নিরসনের কোন সম্ভাবনা থাকবেনা, কৃষি জমি তার প্রাণ হারাবে, দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের অভায়রণ্যখ্যাত খালগুলো সুকিয়ে যাবে, পরিবেশ ভারসাম্যে বিপর্যয় দেখা দেবে।
অভিযুক্ত মোঃ শাহআলম জানান, আমার অপরাধ স্বীকার করেই খালটির উপর নির্মিত সড়ক অপসারণ করে দিয়েছি। এতেই সমাধান নয়, এ খালের উপর আরো ৪টি বাঁধ নির্মাণে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো অপসারণ না করা হলে খালের পানি প্রবাহের ধারা ফিরে আসবেনা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, খাল ভরাট করে রাস্তা ও গোরস্তান নির্মাণের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর খালের উপর থেকে সড়ক অপসারণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে এলজিএসপির অর্থায়নের খালের উপর সড়ক নির্মাণের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেই ব্যবস্থা নেব।