
‘ডিজিটালবাংলাদেশ’ গঠনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা বলেছেন, “২০৪১ সালের মধ্যে যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদেখছি, সেটাই হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ।” সেই বংলাদেশ গঠনে সর্বাগে ্রপ্রয়োজনতথ্য-প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষার্থী যারা অটোমেশন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (অও), রোবটিক্স, ইন্টারনেট অবথিংস, থ্রি-ডি ইত্যাদি বিষয় গুলো সফল ভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। এ দর্শনকে সামনে রেখে জেলাপ্রশাসন, কুমিল্লা সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরির নিমিত্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রণীত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও ব্যবহারিকপ্রদর্শনী, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিষয়ক সেমিনার আয়োজন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, ছাত্রীদের জন্য হাইজিন কর্ণার স্থাপন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিটসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ হয়েছে।

চতুথর্ শিল্পবিপ্লব এর উপর সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা কর্তৃক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একাধিক ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়েছে। রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি কার্যক্রমকে জনপ্রিয় করে তুলতে জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ আর্থিক অনুদানের মাধ্যমেছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য কমন রুম, ওয়াশ ব্লক নির্মাণ, ডিবেট ক্লাব পুনর্গঠন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলায় উপজেলারোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাব গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত লাইব্রেরিতে জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সাতশতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রথমধাপে ৩ দিনব্যাপী প্রোগ্রামিং এর উপর ধারণা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে থেকে মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত ছিল বেসিকপ্রোগ্রামিং, অরড্যুইনোপ্রোগ্রামিং, ফানউইথপ্রোগ্রামিং, ইলেক্টনিক্সসহ নানা ধরনের কনটেন্ট। এদের মধ্যে আগ্রহী সেরা শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখাতে আগামী মার্চ মাসে প্রেরণ করা হবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে। ন্যাশনাল হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কুমিল্লার প্রতিনিধিত্ব করার সক্ষমতা গড়েতোলার অভিপ্রায় নিয়ে জেলাপ্রশাসন, কুমিল্লার রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে কালেক্টরেট ফ্যাবল্যাব। তাছাড়া প্রতিটা উপজেলায় ৫০ জন করে ক্ষুদে প্রোগ্রামার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং এর উপর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদানকরা হয়েছে এবং ৪৫ দিনের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
আজকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আগামীতে সফটওয়্যার, রোবটিক্স, ইথিক্যালহ্যাকিং, মেশিনলার্নিং, আর্টিফিশিয়ালইন্টেলিজেন্স, ইমেজপ্রসেসিং, ওয়েব ডেভলপিংসহ বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে মর্মে বিশ্বাস করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। পড়াশোনার পাশাপাশি যদিশিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখানোহয় তাহলে অল্প বয়স থেকেই তারা সিপ্রোগ্রামিং, সিপ্লাস, সিপ্লাসপ্লাস, পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্টসহ সব ধরনের প্রোগ্রাম এর ব্যবহার শিখতে পারবে এবং প্রোগ্রামিংয়ের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তারা চতুর্থশিল্পবিপ্লবের সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। অধিকন্তু লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে।
পাশাপাশি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতহিসেবে আইটি খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। আর এ খাতের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ফ্রিল্যান্সিং। কুমিল্লা জেলার ফ্রিল্যান্সিং খাতকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ১০০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতো মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়া ও সদরদক্ষিণ উপজেলায় ও জাইকারঅর্থায়নে তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে সকল উপজেলা গুলোতে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
জেলাপ্রশাসন, কুমিল্লার এ কার্যক্রমকেজেলা/উপজেলারসংশ্লিষ্টসকলদপ্তরকে নিয়ে টেকসই ও সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণকরাযেতেপারেঃ
০১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহ এবং তাদের আওতাধীন দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় সমূহের বার্ষিক কর্মসম্পাদনচুক্তি (এপিএ) তে ৪ওজ তথারোবটিক্স, প্রোগ্রামিং, ফ্রিল্যান্সিং, থ্রি-ডিপ্রিন্টিং, ন্যানো-টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ পূর্বক যথাযথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন;
০২. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কেবল পাঠ্য পুস্তকে সীমাবদ্ধ না রেখে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে খাপখাওয়ানোর লক্ষ্যে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবকে কার্যকর করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় উৎসাহিতকরা;
০৩. কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, নোটবুক ইত্যাদিকে বলনেটিং ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার না করেকম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা এবং এটিকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র-ছাত্রীরা অনুরূপ ডিভাইস উদ্ভাবন ও উন্নতি সাধনে আগ্রহী হয়;
০৪. চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চালিকাশক্তি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আইওটি,ব্লকচেইন ও রোবটিক্স ইত্যাদি ব্যবহারকরে সফটওয়্যার/যুতসই প্রযুক্তি তৈরি ও বাজারজাত করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা এবং
০৫. দেশে নির্মিত ও নির্মাণাধীন হাইটেকপার্ক গুলোকে তৃণ মূলপর্যায়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের হাব হিসেবে কাজে লাগানো।
উল্লিখিত কার্যক্রম সমূহের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের দর্শন যার মূলভিত্তি ‘অনুকরণনয়উদ্ভাবন, ডিজিটালবাংলাদেশেরদর্শন।’
মোহাম্মদকামরুলহাসান
জেলাপ্রশাসক
কুমিল্লা